ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে কয়েক দশক ধরে চলমান সংঘাতের একমাত্র সমাধান হলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। রবিবার তুরস্ক থেকে লেবানন সফরে রওনা দেওয়ার সময় সাংবাদিকদের ক্যাথলিক চার্চের প্রধান ধর্মগুরু পোপ লিও চতুর্দশ একথা বলেন। পোপ বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, এ সময়ে ইসরায়েল এখনো সেই সমাধান মেনে নেয়নি, তবে আমরা এটিকে একমাত্র সমাধান হিসেবেই দেখি। ‘আমরা ইসরায়েলেরও বন্ধু এবং দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হওয়ার চেষ্টা করছি, যা সবার জন্যই ন্যায়সঙ্গত সমাধানের কাছাকাছি আসতে তাদের সহায়তা করতে পারে।’ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার বরাবরই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে আসছেন। ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সমর্থনের ইঙ্গিত দেওয়ার পরও নেতানিয়াহু তার অবস্থানে অটল। তুরস্ক সফর নিয়ে আট মিনিটের সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে পোপ লিও বলেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে আলোচনায় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ছাড়াও ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত নিয়েও তার কথা হয়েছে। উভয় যুদ্ধের অবসানে তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মন্তব্য করেন পোপ। ক্যাথলিক চার্চের প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পর তুরস্কই ছিল পোপ লিওর প্রথম বিদেশ সফর। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু করে রবিবার পর্যন্ত তুরস্ক সফর করেন তিনি। সফরকালে পোপ সতর্ক করে বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকা রক্তক্ষয়ী সংঘাত মানবজাতির ভবিষ্যৎকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। তিনি ধর্মের নামে সহিংসতারও কঠোর নিন্দা করেন। গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান নিয়ে পোপ সাধারণত সাবধানি এবং কূটনৈতিক ভাষায় সমালোচনা করলেও চলতি বছর তার সেই সমালোচনা আরও জোরালো হয়েছে।
এদিকে গাজা উপত্যকার রাফাহ শহরের কাছে একটি টানেলকে লক্ষ্য করে অভিযান চালিয়ে গত সপ্তাহে ৪০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা করার দাবি করেছে ইসরায়েল। রবিবার এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
গত শনিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ঘোষণা করেছে যে তারা গতরাতে ভূগর্ভস্থ এলাকা থেকে বেরিয়ে আসা চার যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। হামাসের কয়েক ডজন যোদ্ধা দক্ষিণ গাজার টানেলগুলোতে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত এলাকার নিচে লুকিয়ে আছে দাবি করা হচ্ছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী, গত ৪০ দিন ধরে, সেনাবাহিনী পূর্ব রাফাহর চারপাশে তাদের প্রচেষ্টাকে কেন্দ্রীভূত করছে। এই এলাকায় থাকা ভূগর্ভস্থ টানেল রুটগুলো ভেঙে ফেলা ও তাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা যোদ্ধাদের নির্মূল করার লক্ষ্যেই এ অভিযান চালানো হয়েছে বলে সেনাবাহিনী তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে, গত সপ্তাহে ‘৪০ জনেরও বেশি যোদ্ধাকে নির্মূল করা হয়েছে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ ছাড়াও, এলাকায় মাটির ওপরে ও নিচে কয়েক ডজন টানেল শ্যাফট ও যোদ্ধা অবকাঠামো সাইট ভেঙে ফেলা হয়েছে।’ বৃহস্পতিবার একাধিক সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজার টানেল নেটওয়ার্কে এখনো যেসব হামাস যোদ্ধা রয়েছে, তাদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে- তা নিয়ে আলোচনা চলছে। বুধবার, হামাস মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোকে ইসরায়েলকে নিরাপদ পথের অনুমতি দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। -এএফপি
প্রথমবারের মতো ইসলামপন্থি গোষ্ঠীটি প্রকাশ্যে এ পরিস্থিতির কথা স্বীকার করেছে। মিসর, তুরস্ক ও কাতারের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করা ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে মার্কিন মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ১০ অক্টোবর কার্যকর হয়। -এএফপি