ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়া’র প্রভাবে টানা প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় শ্রীলঙ্কাজুড়ে এখন পর্যন্ত ১২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরও ১৭৬ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র (ডিএমসি)। এ অবস্থায় দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকার। গতকাল বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়ার প্রভাবে শ্রীলঙ্কাজুড়ে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩২ জনে পৌঁছেছে। এ ছাড়া এই ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন আরও ১৭৬ জন। সরকার প্রাকৃতিক এই বিপর্যয় মোকাবিলায় দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছে। ডিএমসি বলেছে, বৈরী আবহাওয়ায় দেশজুড়ে ১৫ হাজারের বেশি বাড়িঘর ধ্বংস এবং ৭৮ হাজার মানুষকে সরকার পরিচালিত অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। টানা এক সপ্তাহের প্রবল বর্ষণের পর সৃষ্ট বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিসানায়েকে জরুরি আইন জারি করেছেন। ডিএমসির মহাপরিচালক সম্পাথ কোটুউইগোদা বলেছেন, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে মোতায়েন করায় উদ্ধার তৎপরতা জোরদার হয়েছে। শনিবার দেশটির সামরিক বাহিনী অনুরাধাপুরা জেলায় টানা ২৪ ঘণ্টার অভিযান চালিয়ে এক জার্মান পর্যটকসহ ৬৯ জন বাসযাত্রীকে উদ্ধার করেছে। এই অভিযানে হেলিকপ্টার ও নৌবাহিনীর নৌকা ব্যবহার করা হয়। ডিএমসি জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি দ্বীপরাষ্ট্রটি ছেড়ে প্রতিবেশী ভারতের দিকে সরে যাচ্ছে। তবে এর আগেই এটি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সোমবার থেকে অনুভূত হলেও বুধবার এটি সরাসরি আঘাত হানে। এর ফলেই দ্বীপজুড়ে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে।
গতকাল নিচু এলাকাগুলোতে বন্যার পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় কেলানি নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কেলানি নদী কলম্বো হয়ে ভারত মহাসাগরে গিয়ে মিশেছে। ডিএমসি বলেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় কেলানি নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় শত শত মানুষ অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হন। রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ অংশে বৃষ্টিপাত কমে এসেছে। তবে ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়ার অবশিষ্ট প্রভাবে দ্বীপের উত্তরাঞ্চলে এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। ডিএমসি কর্মকর্তারা এই বন্যার মাত্রা ২০১৬ সালের চেয়েও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন। সে বছর দেশজুড়ে ৭১ জন নিহত হয়েছিল। গত বছরের জুনে ভারী বৃষ্টিতে ২৬ জন নিহত হয়েছিল। এর পর আবহাওয়া সংক্রান্ত ঘটনায় এটিই সর্বোচ্চ প্রাণহানি। গত ডিসেম্বরেও বন্যা ও ভূমি ধসে ১৭ জন মারা গিয়েছিল। এই শতকে শ্রীলঙ্কায় সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল ২০০৩ সালের জুনে, তখন ২৫৪ জন নিহত হয়েছিল।