বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তি ও ডিজিটাল যুগে মিডিয়ার তারকারা শুধু টেলিভিশন, সিনেমা বা নাটকে অভিনয় করেই থেমে থাকছেন না, নিজেদের পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা বাড়াতে ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব, টুইটার এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় হচ্ছেন। অভিনয়, গান কিংবা নাচের পাশাপাশি এখন নিজেরাই তৈরি করছেন ভিডিও কনটেন্ট, যা সরাসরি দর্শক-ভক্তদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। তারকারা নিজেরাই হয়ে উঠেছেন কনটেন্ট ক্রিয়েটর। তারা নিজস্ব ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল, টিকটক অ্যাকাউন্ট চ্যানেল খুলে তুলে ধরছেন নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ, কাজের গল্প, এমনকি ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন দিক। ফেসবুকে রিলস, টিকটকে ছোট ছোট ভিডিও প্রকাশ করছেন তারকারা। এতে মিলিয়ন মিলিয়ন ভক্ত হচ্ছে তাদের। বিষয়টি শুধু আত্মপ্রচারণা নয়, বরং ডিজিটাল মিডিয়ার এক নতুন বাস্তবতা, যেখানে তারকারাও নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করছেন। অন্যদিকে তারা নিজের কাজের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনকেও শেয়ার করছেন, যা একটা সময়ে ছিল কল্পনাতীত। এর বিপরীতে আবার সমাজমাধ্যমের অপব্যবহারও করছেন অনেকে। সহজে ভাইরাল হওয়ার নেশায় তারা নেতিবাচক নানা কনটেন্ট বা পোস্ট দিতেও পিছপা হন না। এতে এর মন্দ প্রভাব পড়ে সমাজের ওপর। এ সময়ে নবীন-প্রবীণ বেশির ভাগ সেলেব্রিটিই ব্যস্ত সোশ্যাল সাইট ফেসবুকে। হাতে গোনা কয়েকজন আছেন যারা ফেসবুক ব্যবহার করেন না। এ সময়ে সোশ্যাল সাইট ফেসবুক, ইউটিউবে সরব রয়েছেন আলমগীর, রোজিনা, আঁখি আলমগীর, মৌসুমী, ওমর সানী, জয়া আহসান, শাকিব খান, পরীমণি, বুবলী, অপু বিশ্বাস, মেহজাবীন চৌধুরী, সিয়াম, স্পর্শিয়া, আফজাল হোসেন, প্রিন্স মাহমুদ, পূজা চেরী, শাবনূর, সাবিলা নূর, আবুল হায়াত, তমা মির্জা, আফরান নিশো, সাফা কবির, টয়া, হৃদয় খান, আরিফিন শুভ, কোনাল, ইমরান মাহমুদুল, কনা, নুসরাত ফারিয়া, ন্যান্সি, ঐশী, রুনা খান, নিলয় আলমগীর, হিমি, টনি ডায়েস, কনকচাঁপা, তাহসান খান, চয়নিকা চৌধুরী, পড়শী, পূর্ণিমা, পপি, হানিফ সংকেত, বিদ্যা সিনহা মিম, তানিয়া আহমেদ, হাবিব ওয়াহিদ, অহনা, মারজুক রাসেল, ফারিয়া শাহরিন, পারসা ইভানা, মিশু সাব্বির, শিমুল, চাষী আলম, এস আই টুটুল, অনন্ত জলিল, বর্ষা, তারিক আনাম খান, মোশাররফ করিম, প্রভা, দীঘি, সালহা খানম নাদিয়া, অপূর্ব, নিরব, ইমন, তৌসিফ, জোভান, তটিনী, নিহা, খায়রুল বাসার, আরশ খান, নওশাবা, মম, ভাবনা, তানজিন তিশা, মুশফিক আর ফারহান, বাপ্পারাজ, সম্রাট, বাপ্পী, জায়েদ খান, সাইমন, শবনম ফারিয়া, প্রিয়া জান্নাত, হিরো আলমসহ অনেকেই। বর্তমান সময়ে অনেক তারকাই তাদের ইউটিউব চ্যানেল নিয়ে সরব আছেন। শাকিব খানের রয়েছে এস কে ফিল্মস নামে ইউটিউব চ্যানেল, সংগীতশিল্পী কনার ইউটিউব চ্যানেলের নাম ‘কনা’। অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীর চ্যানেলের নাম ‘মেহজাবীন চৌধুরী’। অভিনেত্রী অর্চিতা স্পর্শিয়াও নিজের ইউটিউব চ্যানেল নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। এর পাশাপাশি অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম, মাহিয়া মাহি ইউটিউব চ্যানেল নিয়ে কাজ শুরু করছেন। মোশাররফ করিমের ‘টিভি গেট’ নামের একটি চ্যানেল রয়েছে।
ইতিবাচক দিক
একটা সময় পর্যন্ত তারকারা মিডিয়া কাভারেজ, টিভি অনুষ্ঠান, পত্রিকার সাক্ষাৎকার কিংবা পাবলিক ইভেন্টের মাধ্যমেই নিজেদের তুলে ধরতেন। কিন্তু বর্তমান যুগে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও সোশ্যাল মিডিয়া একটি স্বাধীন এবং সরাসরি প্রচারণার জায়গা করে দিয়েছে। এখানে তারা নিজের ইচ্ছামতো কনটেন্ট বানাতে পারেন, সম্পাদনা করতে পারেন এবং সরাসরি প্রতিক্রিয়া পেতে পারেন দর্শকদের কাছ থেকে। আরও বড় বিষয় হলো, এসব প্ল্যাটফর্ম শুধু প্রচারণার মাধ্যম নয়, বরং এটি একটি আয়ের উৎস হিসেবেও বিবেচিত। গুগল অ্যাডসেন্স, স্পন্সরশিপ, ব্র্যান্ড কলাবোরেশন, সব মিলিয়ে তারকাদের জন্য একটি লাভজনক ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে এসব। এই প্ল্যাটফর্মে তারকারা দিনদিন আগ্রহী হচ্ছেন। ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রাম- তিন মাধ্যমেই সরব অভিনয়শিল্পী বিদ্যা সিনহা মিম। মিম বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় আমাদের অনেক বন্ধু ও ভক্ত অনুসারী আছেন। তারা আমাদের পোস্টগুলো দেখেন। আমাদের এই পোস্টগুলোর মাধ্যমে ছবির খবর তাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারি। এত সংখ্যক অনুসারীর কাছে আমাদের খবরগুলো যাচ্ছে, এটা একটা বড় ব্যাপার।’ ছবির প্রচারে ও নিজেকে আলোচনায় রাখার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভূমিকাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বুবলী। তিনি বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির পরিবর্তন হচ্ছে। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আসার ফলে নিজের প্রচার নিজেই করা যায়। এ ছাড়া তারকাদের অনেকে ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে বেশ অ্যাকটিভ থাকেন।’ নুসরাত ফারিয়ার কাছে এই সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুবই শক্তিশালী। তিনি বলেন, ‘শুধু দেশের মধ্যেই নয়, মুহূর্তে দেশের বাইরের সব মানুষকে একটা পোস্টের মাধ্যমেই জানিয়ে দেওয়া যায় সবকিছু। শুটিংয়ের জন্য নানা সময়ে দেশের বাইরে যাই। সেখান থেকে একটা পোস্টের মাধ্যমেই আমার ছবির খবর জানাতে পারি। এটা এত সহজ একটা মাধ্যম যে, যে কোনো জায়গা থেকেই পৃথিবীর সবার কাছে ছবির খবর পৌঁছানো যায়।’ শাকিব খান বলেন, ‘এখন সবকিছু ডিজিটালি এগোচ্ছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো প্রচারে বড় ভূমিকা রাখছে।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেমন খুব সহজভাবে একজন তারকা তার প্রচার করতে পারেন, তেমনি আবার যে কেউ এখানে সহজে লিখতে পারছেন বলে অনেক সময় বিপত্তিও ঘটছে। একটা ছবি নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা না করে সামাজিক মাধ্যমগুলোয় যাচ্ছেতাই ভাষা ব্যবহার করে লেখালেখি করা হয়। এটা ঠিক নয়। এটাকে এখনো গঠনমূলক ও সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগানো উচিত। অনেকে বলছেন, অনেক তারকাই নিজের কাজ নিয়ে যতটা না ব্যস্ত, তার চেয়ে বেশি ব্যস্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এমন তারকার সংখ্যা দিনদিন বাড়ছেই। নিজের ছবি দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন অনেক তারকাই। পাশাপাশি বিভিন্ন কাজের কথাও ছড়িয়ে দিচ্ছেন তারা। এ ছাড়া নায়িকারা আবেদনময়ী ছবি পোস্ট করে আলোচনায় থাকার চেষ্টা করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের ভালো-খারাপ মুহূর্ত, পুরোনো স্মৃতি শেয়ার করেন অনেক তারকা।
ভুয়া ফেসবুক আইডিতে প্রতারণার ফাঁদ
দীর্ঘদিন ধরে শোবিজ জগতের তারকারা প্রতারিত হয়ে আসছেন। এমন বিড়ম্বনায় পড়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী ববিতা। ববিতা জানান, আজ পর্যন্ত তিনি কোনো ফেসবুক আইডি খোলেননি। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে কানাডায় বসবাস করা তাঁর একমাত্র পুত্র অনীকেরও কোনো ফেসবুক আইডি নেই। তারপরও সম্প্রতি চরম উদ্বেগে তিনি লক্ষ করছেন তাদের দুজনের নামে একাধিক ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে দুর্বৃত্তরা নানা ছবি আর স্ট্যাটাস পোস্ট করে চলেছেন। এতে তিনি চরম আতঙ্কিত। কারণ দুর্বৃত্তরা যদি এসব অ্যাকাউন্টে দেশ ও ধর্মবিরোধী কিংবা আপত্তিকর কোনো স্ট্যাটাস পোস্ট করে তা হলে মা ও ছেলের ভাবমূর্তি চরমভাবে নষ্ট হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান। এদিকে তাঁর বোন অভিনেত্রী চম্পাও জানান, তাঁর কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই। অথচ তাঁর নামে কে বা কারা একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলে রীতিমতো চালিয়ে যাচ্ছেন এবং কিছুদিন আগে একটি অ্যাকাউন্টে দেশবিরোধী স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। এতে তিনি নিজের নিরাপত্তার জন্য বেশ কিছুদিন আগে গুলশান থানায় একটি জিডিও করেছেন। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আরেক অভিনেত্রী শাবনূর জানান, নিজের ইউটিউব চ্যানেলটি হ্যাক করেছিল দুষ্কৃতকারীরা। তা ছাড়া তাঁর নামে রয়েছে একাধিক অ্যাকাউন্ট। এসব অ্যাকাউন্ট খুলে চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেল থেকে শুরু করে সব ধরনের অপকর্ম চালাচ্ছেন অপকর্মকারীরা। এতে চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন তিনি। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা কামনা করেছেন তিনি। ইতোমধ্যে তিনি তাঁর একটি ফেসবুক আইডি ভেরিফায়েড করিয়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিও তাঁর ফেসবুক আইডি ভেরিফায়েড করে নিয়েছেন। শোবিজ তারকাদের নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলার ঘটনা ঘটছে অহরহ। এদিকে ভুয়া আইডির পাশাপাশি আইডি হ্যাকও হচ্ছে জনপ্রিয় তারকাদের। মূলত ভিপিএন অ্যাড্রেস ব্যবহার করে ইমেইল ও ফেসবুক প্রোফাইল হ্যাক করা হয়। পুলিশের সাইবার ক্রাইম সূত্র বলছে, তারকাদের আইডির নিরাপত্তা দুর্বলতার কারণেই অতি সহজেই হ্যাক করতে পারছেন হ্যাকাররা। আইডি হ্যাকের পর পাসওয়ার্ড পাল্টে ফেলছেন হ্যাকাররা। সেখান থেকে আপত্তিকর ছবি আপলোড বা বিভ্রান্তিমূলক স্ট্যাটাসের কারণে তারকাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। হ্যাক হওয়াটাকে একজন তারকার জন্য বিপজ্জনক মনে করেন পূর্ণিমা। তিনি বলেন, ‘হ্যাক করে হ্যাকার পাসওয়ার্ড নিজের মতো করে নেয়। এরপর ইচ্ছা করলেই হ্যাকার ওই তারকার ফেসবুক আইডিতে আজেবাজে বা বিভ্রান্তিমূলক স্ট্যাটাস দিয়ে তারকাকে বিপদে ফেলতে পারেন। এখন তো একজন তারকার কাছে ফেসবুকই যোগাযোগের বড় মাধ্যম। দেশবাসীকে নিজের কথা জানানো, ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ সব ফেসবুকের মাধ্যমেই হয়ে থাকে।’ আরিফিন শুভ, সিয়াম আহমেদ, আফরান নিশো ও তানজিন তিশা, রোশান, সজল, অর্ষা, সংগীতশিল্পী হাবিব, মিনারসহ অনেক তারকার বহুবার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়। ভুক্তভোগীরা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ ও আইটি বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে আইডি এবং পেজ ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করে থাকেন। একটি বিশেষ সূত্র বলছে, দেশ ও দেশের বাইরে কয়েকটি বিশেষ দল তারকাদের আইডি হ্যাকের সঙ্গে জড়িত। তার মধ্যে আছে ওল্ডম্যাএক্সট্রাম, মাফিয়া গ্রুপ, মাইয়ারালা গ্রুপ, ইম্পিরিয়াল ট্রাইব, আমরা সিলেটবাসী, ডনস টিম ইত্যাদি।