মুম্বাইয়ের ভিলে পার্লে শ্মশানে গতকাল দুপুরে আচমকাই বাড়ানো হলো নিরাপত্তা। হেমা মালিনী, সানি দেওল, ববি দেওল, এশা দেওলসহ শ্মশানে পৌঁছে যান অমিতাভ বচ্চন, অভিষেক বচ্চন, আমির খানের মতো তারকারাও। বলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা, সবার প্রিয় ‘হি ম্যান’ ধর্মেন্দ্র গতকাল ৮৯ বছর বয়সে নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। কয়েক সপ্তাহ ধরেই তাঁর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা গুরুতরভাবে বাড়ছিল; এ কারণে চলতি মাসের শুরুতে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। তাঁর প্রয়াণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশজুড়ে নেমে আসে শোকের ঢেউ। ভক্ত, সহকর্মী, বলিউডের তারকারা সবাই বাকরুদ্ধ, স্তব্ধ। ভারতীয় সিনেমার আকাশ থেকে যেন ঝরে পড়ল এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। ছয় দশকের ক্যারিয়ারে রোমান্টিক নায়ক, অ্যাকশন হিরো থেকে কমেডি কিং সবেতেই ছিলেন তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ১৯৬০ সালে অভিষেক। তারপর থেকেই একের পর এক চরিত্রে নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রমাণ করেছেন ধর্মেন্দ্র সিং দেওল। কখনো রোমান্টিক নায়ক, কখনো কঠিন-মজ্জার অ্যাকশন হিরো, আবার কখনো নিখাদ কমেডির মাস্টার- তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ অভিনেতার সংজ্ঞা। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ৩০০-এরও বেশি ছবি, যার বহু ছবিই আজ ভারতীয় সেরা ছবির ইতিহাসের তালিকায়। ধর্মেন্দ্রর অভিনয়-ঐতিহ্য বলতে গেলে প্রথমেই আসে ‘শোলে’র ‘বীরু’। তবে এটুকুই নয়, ‘ফুল ঔর পাথর’, ‘সীতা ঔর গীতা’, ‘ধর্মবীর’, ‘প্রতিজ্ঞা’- প্রতিটি ছবির চরিত্রেই তিনি রেখেছেন এক অনন্য ছাপ। তাঁর সহজাত আকর্ষণ, হাসি, ডায়ালগ ডেলিভারি আর অদ্ভুত স্বাভাবিক স্ক্রিন প্রেজেন্স তাঁকে বিশ্বজুড়ে কোটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে দিয়েছে। ১৯৯৭ সালে তিনি পেয়েছিলেন ফিল্মফেয়ার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড। ২০১২ সালে ভারত সরকার তাঁকে সম্মানিত করে পদ্মভূষণ, ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মানে। নিজের অভিনীত শেষ কয়েকটি ছবিতেও দারুণ উজ্জ্বল উপস্থিতি রেখেছিলেন ধর্মেন্দ্র। সাম্প্রতিক বছরেও নিয়মিত পর্দায় ছিলেন ধর্মেন্দ্র- ‘তেরি বাতোঁ মে আইসা উলঝা জিয়া’ (২০২৪)-এ শহীদ কাপুরের দাদুর ভূমিকায়। ‘রকি ঔর রানি কি প্রেম কাহানি’তে তাঁর পারফরম্যান্সও দর্শক ও সমালোচকদের থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছিল। তাঁর অভিনীত শেষ ছবি হতে চলেছে ‘ইক্কিস’, যেখানে তিনি অভিনয় করেছেন অগস্ত্য নন্দার দাদুর চরিত্রে। পরিবারে রেখে গেলেন স্ত্রী, সন্তান, এক অমূল্য উত্তরাধিকার। ধর্মেন্দ্র রেখে গেলেন স্ত্রী হেমা মালিনী, প্রথম স্ত্রী প্রকাশ কৌর এবং সন্তান অভিনেতা সানি দেওল, ববি দেওল, কন্যা এশা দেওল, আহনা দেওলকে। তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করার ক্ষমতা কারও নেই।
