কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) আয়েশা আক্তারের কক্ষের বাতাসে ভাসছে একটা দুর্গন্ধ, কিন্তু উৎস খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর উৎস পাওয়া যায়।
বাথরুমের ফলস ছাদের বক্সের ভেতরে সংসার পেতেছে লক্ষী পেঁচা। তিনটি ছানা আছে। পেঁচা জোড়া বাইরে। তাদের খাবার ইঁদুর,ব্যাঙ,টিকটিকি ও পোকা। তাদের খাবার মরা ইঁদুর পড়ে থাকায় দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এক সপ্তাহ পরে সেই কক্ষ খুললে আরো বেশি গন্ধ পাওয়া যায়। আবার বক্সে দেখা গেল-একটি বড় পেঁচা মরে পড়ে আছে। ছানার সংখ্যা বেড়ে ৬টি। মা মরে যাওয়ায় ছানা গুলো অসহায় হয়ে পড়ে। ছোট ছানা দেখে তাদের সরিয়ে ফেলেননি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ২য় তলা। ২২২ নম্বর কক্ষ বসেন জুনিয়র কনসালটেন্টের (গাইনি)। ২১৬ নম্বর কক্ষে বসেন আরেকজন জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইনসিটু, এনেসথেশিয়া) ডা. আবু নাইম। তিনি বৃক্ষ ও পাখি প্রেমিক। তিনি আরেকজন সহকারী নিয়ে ওই কক্ষের ফলস ছাদের বক্স থেকে পাখির ছানা নামাচ্ছেন। বারান্দায় এনে কুচি করে রাখা মুরগির মাংস ছানার মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছেন। মাঝে বোতলের ছিপি দিয়ে পানিও খাওয়ান। ছানা গুলোও খাবার পেয়ে যেন সুখের আবেশে চোখ বুজে রাখে। মাঝে মাঝে অদ্ভুত শিস দিয়ে যাকে। যেন ফুটো বেলুন থেকে বাতাস বের হচ্ছে।
জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেসথেশিয়া) ডা. আবু নাইম বলেন, ধারণা করা হচ্ছে বড় পেঁচাটি মা। হয়তো মাঠে বিষযুক্ত কোন খাবার খেয়ে মারা গেছে। মরা পেঁচাটি সরানো হয়। দুর্বল তিনটি বাচ্চা সরিয়ে নিয়ে বাসায় আলাদা খাবার দেয়া হচ্ছে। এদিকে বাকি তিনটিকে খাবার দিয়ে ওই বক্সে রাখা হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, এসির পাইপের পাশের ছিদ্র দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়ে পেঁচা। পেঁচার ছানাগুলো দেখে আমাদের মায়া জন্মে। তাই সরানো হয়নি। সেগুলোকে খাবার দিয়ে বড় করা হচ্ছে। ওই কাজে ডা.নাইম সময় দিচ্ছেন। আমরা আপাতত ওই রুমটি ব্যবহার করছি না। তবুও পাখি গুলো বেড়ে উঠুক।
পরিবেশ গবেষক মতিন সৈকত বলেন, আহত বা বিপদে পড়া প্রাণী ও পাখিদের উদ্ধার করে যত্ন নেওয়ার বিষয়ে সরকারের তেমন কোন ব্যবস্থা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নেই। এ বিষয়ে সরকারের বনবিভাগ ও প্রাণী সম্পদ বিভাগকে আরও আন্তরিক ভূমিকা নিতে হবে।
কুমিল্লা সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জি এম মোহাম্মদ কবির বলেন, ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট পাখি ও প্রাণীদের উদ্ধার করেন, এটার ঢাকায় শুধু অফিস রয়েছে। তবুও আমরা চেষ্টা করে দেখবো পাখি গুলোর জন্য কি করা যায়।
বিডি-প্রতিদিন/আশফাক