তুরস্ক-সিরিয়া
এ বছর ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। রিখটার স্কেলে এ কম্পনের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। কম্পনের উৎসস্থল ছিল দক্ষিণ তুরস্কে। গাজিয়ানতেপ প্রদেশের নুরদাগি শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার পূর্বে ভূগর্ভের প্রায় ১৮ কিলোমিটার গভীরে। প্রথম কম্পনের ১১ থেকে ১৫ মিনিটের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার কেঁপে ওঠে লেবানন, সিরিয়া এবং সাইপ্রাসের বিভিন্ন অংশ। দেড় মিনিট পর্যন্ত তার কম্পন অনুভূত হয়। কম্পনের জেরে ভেঙে পড়তে থাকে একের পর এক বহুতল এবং বাড়ি। সেই ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই আরও দুবার কেঁপে ওঠে সিরিয়া এবং তুরস্কের বিস্তীর্ণ এলাকা। ফলে বিপদ আরও বেড়ে যায়। মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ভূমিকম্পে ভাগ হয়ে যায় বিমানবন্দর।
গ্রেট কান্টো ভূমিকম্প [জাপান]
প্রায় ১০০ বছর আগের ঘটনা। জাপান তাদের স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প দেখেছিল ১৯২৩ সালে। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর বেলা ১১ টা ৫৮ মিনিট; জাপানের রাজধানীসহ বেশ কয়েকটি শহরে ভূমিকম্পের প্রথম আঘাতটি আসে। উৎপত্তিস্থল ছিল রাজধানী টোকিও থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের সাগামি উপসাগর অঞ্চল। এর তীব্রতা ছিল ৭ দশমিক ৯ এবং স্থায়িত্বকাল ছিল ৪ থেকে ১০ মিনিট। ভূ-তাত্ত্বিকদের মতে, ফিলিপাইন সমুদ্রের প্লেট সাগামি ট্রাফের লাইন বরাবর ওখোৎস্ক প্লেট ফেটে এ বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। এ ভূমিকম্পের আঘাতে রাজধানী টোকিওসহ বেশ কয়েকটি শহর ব্যাপকভাবে কেঁপে উঠেছিল। ধ্বংস হয়েছিল অসংখ্য দালান। এরপরই সাগামি উপসাগরে ৪০ ফুট উঁচু সুনামি উপকূলে আঘাত হানে। ভূমিকম্পের কারণে বিভিন্ন ভবনে অগ্নিকাণ্ডে অগ্নিদগ্ধ হয় ৩ লাখ ৮১ হাজার মানুষ। ৬ লাখ ৯৪ হাজার বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। আনুমানিক ১ লাখ ৪২ হাজার ৮০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।
দামহান ভূমিকম্প [ইরান]
সময়টা ৮৫৬ সালের ২২ ডিসেম্বর। তৎকালীন ইরানিরা ৭ দশমিক ৯ মাত্রার ভূকম্পনের সাক্ষী হন। ৩৫০ কিলোমিটার বা ২২০ মাইল এলাকাজুড়ে তাণ্ডব চালায়। ধ্বংস করে অসংখ্য জনপদ। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, দেশটি আরব পাত ও ইউরেশীয় পাতের মধ্যে মহাদেশীয় সংঘর্ষের জটিল অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত। সে কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলটির আল্পাইড বেল্টের স্থানান্তরের ফলে দামহান ভূমিকম্পের মতো বিপর্যয় ঘটেছিল। সেদিন ২ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।
হাইজুয়ান ভূমিকম্প [চীন]
১৯২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর; চীনের গানসু প্রদেশকে ধ্বংস করে দেয় ৮ দশমিক ৫ মাত্রার প্রলয়ংকরী ভূমিকম্প। তৎকালে চীন স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিধসের মুখোমুখি হয়েছিল। যার ফলে প্রাণহানির সংখ্যাও বাড়তে থাকে হু হু করে। সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। পরবর্তীতে আরও তিনবার মৃদু কম্পনে (আফটার শক) কেঁপে ওঠে চীনের গানসু প্রদেশ। গ্রাম থেকে শহর; সব বাড়িঘর মাটির সঙ্গে মিশে যায়। তথ্য বলছে, তৎকালীন গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ৭০ শতাংশ অবকাঠামো ভেঙে পড়ে। সেবার ৬৭৫ বার রেকর্ড পরিমাণ ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। আনুমানিক ১ লাখের বেশি মানুষ প্রাণ হারায় কেবল ভূমিধসের কারণে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, ওই অঞ্চলে তখন ২ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। তবে তৎকালীন চীনা সরকার জানায়, সংখ্যাটি ২ লাখ ৭৩ হাজারেরও বেশি।
হাইতিয়ান ভূমিকম্প [হাইতি]
২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি বিকাল ৪টা ৫৩ মিনিটে ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্র হাইতি প্রলয়ংকরী এক ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। ভয়ানক ওই কম্পনের উৎপত্তিস্থল ছিল হাইতির রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্স থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের প্রত্যন্ত গ্রাম। এর ফলে হাইতি এবং আশপাশের ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্রাথমিকভাবে ভূমিকম্পটি ৭ মাত্রায় আঘাত হানে। ভয়ানক এ ভূমিকম্প কেবল হাইতি এবং ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র নয়, প্রতিবেশী কিউবা, জ্যামাইকা এবং পুয়ের্তো রিকোতেও অনুভূত হয়।
সুমাত্রা ভূমিকম্প [ইন্দোনেশিয়া]
২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর; ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ৯ দশমিক ১ মাত্রার একটি ভূমিকম্প ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা প্রদেশে আঘাত হানে। পার্শ্ববর্তী মালদ্বীপ এবং থাইল্যান্ডেও ভূমিকম্পের ধাক্কা লাগে। ভূ-বিশ্লেষকদের অনেকেই এর মাত্রা ৯ দশমিক ৩ বলে দাবি করেন। ভূমিকম্পের ২০ মিনিট পর, ভারত মহাসাগর থেকে ১০০ ফুট উচ্চতার প্রলয়ংকরী ঢেউ উপকূল অঞ্চলগুলোয় আছড়ে পড়ে। নিমেষে পানির নিচে তলিয়ে যায় সুমাত্রা অঞ্চল। এর প্রভাব পড়ে ভারত, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ডেও। এতে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ রাতারাতি মারা যায়।
তাংসান ভূমিকম্প [চীন]
১৯৭৬ সালের ২৮ জুলাই; গভীর রাত। সময় তখন ৩টা ৪২ মিনিট। হঠাৎ ৭ দশমিক ৮ মাত্রা থেকে ৮ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে চীনের তাংসান এবং হেবেই অঞ্চলে। ওই ভূমিকম্পটি আড়াই গিগাট্রন শক্তিমত্তা নিয়ে আঘাত হানে। সে সময় তাংসানের জনসংখ্যা ছিল ১০ লাখেরও বেশি। যাদের বেশির ভাগই ঘুমিয়ে ছিলেন। মাত্র ১০ সেকেন্ডের ভূমিকম্পে পুরো একটি অঞ্চল ধ্বংস হয়ে যায়।
ভালদিভিয়া ভূমিকম্প [চিলি]
১৯৬০ সালের ২২ মে, চিলির ভালদিভিয়া অঞ্চলে প্রায় ৯ দশমিক ৫ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পটির শক্তিমত্তা ছিল প্রায় ১৭৮ গিগাট্রন এমনটিই জানিয়েছিলেন গবেষকরা। এটি প্রায় ১০ মিনিট স্থায়ী হয় এবং ২৫ মিটার (৮২ ফুট) পর্যন্ত ঢেউসহ একটি বিশাল সুনামি শুরু করেছিল। প্রধান সুনামি চিলির উপকূলকে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছিল এবং প্রশান্ত মহাসাগর পেরিয়ে হাওয়াইয়ের হিলোকে বিধ্বস্ত করেছিল। প্রাথমিক ধাক্কাতে সে সময় প্রায় ৬ হাজার মানুষ মারা যায়।
তোহোকু ভূমিকম্প [জাপান]
ভূমিকম্পের দেশ জাপানের তোহোকু অঞ্চল। ২০১১ সালের ১১ মার্চ, স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ৪৬ মিনিটে জাপানের উপকূলে একটি বিশাল সমুদ্রের তলদেশে মেগাথ্রাস্ট ভূমিকম্প আঘাত হানে। ৯ দশমিক শূন্য ৩ মাত্রার ভূমিকম্পে ১৫ হাজার ৮৭৮ জন মানুষ মারা যায়। আহত হয় প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মানুষ। নিখোঁজ হয় ৩ হাজার মানুষ। ভূমিকম্পে বিমানবন্দর, সড়ক ও রেলপথ ধ্বংস হয়েছে, ২৯০টি ভবন সম্পূর্ণভাবে ধসে যায়। দেশটির একটি পারমাণবিক স্থাপনা মারাত্মক ক্ষতি হয় এবং ভয়ানক তেজস্ক্রিয় পদার্থ বাতাসে ছড়িয়ে যায়।
কামকাটকা ভূমিকম্প [রাশিয়া]
১৯৫২ সালের ৪ নভেম্বর বিশ্বের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়। ঘটনাটি ঘটে রাশিয়ার কামকাটকা উপদ্বীপে। এটি ৫০ ফুট পর্যন্ত ঢেউসহ একটি দুর্দান্ত ধ্বংসাত্মক প্রশান্ত মহাসাগরীয় সুনামি তৈরি করেছিল। যা কামকাটকা উপদ্বীপ এবং কুরিল দ্বীপপুঞ্জের ব্যাপক ক্ষতি করে। আনুমানিক ১০ হাজার মানুষ মারা যায়।
শানসি ভূমিকম্প [চীন]
চীনের শানসি প্রদেশের এ ভূমিকম্পটিকে বলা হয় ইতিহাসের অন্যতম ভয়ংকর ভূমিকম্প। ১৫৫৬ সালের ২৩ জানুয়ারি চীনের শানসি প্রদেশকে কেন্দ্র করে ভূমিকম্পটি মোট ৯৭টি দেশে একযোগে আঘাত হেনেছিল। বেশ কয়েকটি দেশের সমতলভূমি প্রায় ২০ মিটার দেবে গিয়েছিল। ৮ দশমিক শূন্য মাত্রার এ ভূমিকম্পটির শক্তিমত্তা ছিল ১ গিগাট্রন। এতে প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়।