ভূমিকম্পে কাঁপল ঢাকা
২১ নভেম্বর সকালে ঢাকা থেকে ১৩ কিলোমিটার পূর্বে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ২৬ সেকেন্ড স্থায়িত্বের এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী। এটি ৩০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে উৎপত্তি হওয়া সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প বলে জানান আবহাওয়াবিদরা। এ ভূমিকম্পে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভবন ও দেয়াল ধসে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ১১ জন নিহত হন। আহত হন শতাধিক। পরদিন শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে আবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। নরসিংদীর পলাশে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয় বলে জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর। প্রায় ১৩ ঘণ্টার ব্যবধানে দেশে তিনবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে কম্পনগুলোর মাত্রা ছিল মাঝারি বা হালকা। মধ্যরাতে টেকনাফ থেকে ১১৮ কিলোমিটার দূরে ৪ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এ ভূমিকম্পে কেঁপেছে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ শহর। ফের রাত ৩টা ৩০ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডে সিলেটে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৪। এটি মৃদু ভূমিকম্প হওয়ায় অনেকেই টের পাননি। ২৭ নভেম্বর বিকাল ৪টা ১৫ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে আবার ভূমিকম্প অনুভূত হয় ঢাকায়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৬। এটা স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্প। এর উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর ঘোড়াশালে। ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টারের (ইএমএসসি) তথ্য অনুযায়ীও এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৬।
ভূমিকম্পের সময় কী করবেন
ভূমিকম্প হলে মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে। ভূমিকম্প বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। নিজেকে শান্ত রাখার পাশাপাশি পরিবারের সবাইকে সতর্ক করতে হবে। আপনি যদি বাড়ির ভিতরে থাকেন তাহলে ড্রপ, কাভার ও হোল্ড অন পদ্ধতিতে মেঝেতে বসে পড়ুন, কোনো মজবুত আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন এবং কিছুক্ষণ বসে থাকুন। হেলমেট পরে বা হাত দিয়ে ঢেকে মাথাকে আঘাত থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে রক্ষা করুন। বিছানায় থাকলে মাথা বাঁচাতে বালিশ ব্যবহার করুন। ঘরের ভিতরের দিকের দেয়ালের কাছে বসে আশ্রয় নিতে পারেন। বাড়ির বাইরের দিকে থাকা দেয়াল বা কাচের জানালা বিপজ্জনক। ভূমিকম্পের সময় যতটা সম্ভব এমন জায়গা থেকে দূরে থাকুন। সুইচের সামনে থাকলে ফ্যান বা বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র বন্ধ করে দিন। রান্নাঘরে চুলা চালু থাকলে বন্ধ করুন। বহুতল ভবনের ওপরের দিকে অবস্থান করলে ভূমিকম্প না থামা পর্যন্ত ঘরের ভিতরে থাকাই ভালো। ভূমিকম্প থামলে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামুন। নিচে নামতে চাইলে কোনোভাবেই লিফট ব্যবহার করবেন না। বাড়ির বাইরে থাকলে খোলা জায়গা খুঁজে আশ্রয় নিন। বহুতল ভবনের প্রান্তভাগের নিচে বা পাহাড়-পর্বতের নিচে কোনোভাবেই দাঁড়াবেন না। লাইটপোস্ট, বিল্ডিং, ভারী গাছ অথবা বৈদ্যুতিক তার ও পোলের নিচে দাঁড়াবেন না। রাস্তায় ছোটাছুটি করবেন না।

ভূমিকম্প কেন হয়
পৃথিবীর পৃষ্ঠভাগ অনেক বড় বড় প্লেট বা ভাগে বিভক্ত। এ প্লেটগুলো স্থির নয়, বরং ধীরে ধীরে, অবিরাম সরছে। কখনো একে অপরের নিচে ঢুকে যায়, কখনো পাশে ঘষে যায়, আবার কখনো সংঘর্ষ করে শক্তি তৈরি হয়। এ চলাচলের সময় ভূমির ভিতরে শক্তি জমা হয়। এ শক্তি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, যেমন টানপানিতে বাঁধা থাকা রাবার ব্যান্ড। শেষমেশ যখন শক্তি অতি প্রবল হয়ে যায়, হঠাৎ তা মুক্ত হয়। এটাই ভূমিকম্পের মূল কারণ।
ফল্ট বা ফাটল : ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল
ভূমির নিচে থাকা ফাটল হলো সেই ভাঙা রেখা, যেখানে প্লেটগুলো একে অপরের তুলনায় সরতে চায়। এ ফাটল ধরেই মাটির ভিতরে চাপ জমে।
চাপ হঠাৎ ছুটে গেলে মাটি কেঁপে ওঠে। সেই কাঁপনই আমরা অনুভব করি এবং কখনো কখনো তা শহর, গ্রাম, সেতু ও ভবন ধ্বংস করতে পারে।
বিভিন্ন ধরনের ভূমিকম্প দেখা যায়। যেমন মেগাথ্রাস্ট ভূমিকম্প : এক প্লেট অন্যের নিচে ঢুকে গেলে।
স্ট্রাইক-স্লিপ ভূমিকম্প : ফাটলের পাশে প্লেট ঘষামাজা করলে। নরমাল বা রিভার্স ফল্ট ভূমিকম্প : মাটির ওপর বা নিচের অংশে ফাটল ধরে চাপমুক্ত হলে।
মানবসৃষ্ট কারণে ভূমিকম্প : ভূমিকম্প সব সময় প্রাকৃতিক নয়। বড় বাঁধের পানি, খনি খোঁড়া, তেল-গ্যাস উত্তোলন বা পারমাণবিক পরীক্ষা ভূ-স্তরে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তবে প্রকৃতির সৃষ্টি ভূমিকম্প সবচেয়ে ভয়ংকর হয়।