বার্নার ইমেইল
আপনি কি ‘বার্নার ফোন’ (Burner Phone) সম্পর্কে শুনেছেন? এটি একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়ার মতো ফোন। কিন্তু আপনি জানেন কি? এরই মতো একটি ডিজিটাল অস্ত্র রয়েছে, যার নাম বার্নার ইমেইল কিংবা ইমেইল মাস্ক ...
আজকাল ইন্টারনেটে প্রায় সবকিছুতেই ইমেইল ঠিকানা দেওয়া বাধ্যতামূলক-অ্যাপ ডাউনলোড করা, নিউজলেটারে সাইনআপ কিংবা কোনো ওয়েবসাইটে বিশেষ অফার। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন, আপনার আসল ইমেইল ঠিকানাটি কি সত্যিই সবার জানার প্রয়োজন আছে?
ডেটা ফাঁস, স্প্যাম, এমনকি ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রির যুগে এখন অনেকেই ‘ছদ্ম ইমেইল’ ব্যবহার করে নিরাপদ থাকতে চান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইমেইল মাস্কিং গোপনীয়তা রক্ষার শক্তিশালী এক হাতিয়ার।
মুখোশ পরুন (Mask On))
ইমেইল মাস্কিংয়ের মূল ধারণাটি সহজ। আপনি আসল ইমেইল না দিয়ে একটি অস্থায়ী বা ছদ্ম ঠিকানা ব্যবহার করবেন। কেউ যখন সেই ঠিকানায় বার্তা পাঠায়, সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার আসল ইনবক্সে চলে আসে, কিন্তু প্রেরক জানতেই পারে না আপনার প্রকৃত ঠিকানাটি কী।
এই কাজের জন্য বর্তমানে বেশ কিছু জনপ্রিয় পরিষেবা রয়েছে-যেমন : (DuckDuckGo Email Protection), Mozilla Firefox Relay, FastMail, Addz.io Ges Proton Mail-Gi SimpleLogin|। অ্যাপলও তাদের ব্যবহারকারীদের জন্য ‘Hide My Email’ ফিচার ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে। সাফারি ব্রাউজার বা আইক্লাউড সেটিংস থেকে আপনি চাইলে এক ক্লিকেই একটি এলোমেলো ইমেইল ঠিকানা তৈরি করতে পারেন, যা আপনার আসল পরিচয় লুকিয়ে রাখে।
মূল বৈশিষ্ট্য : শুধু গ্রহণ নয়, উত্তরও দিন
বেশির ভাগ মাস্কিং পরিষেবায় একটি বিনামূল্যের সংস্করণ থাকে, যেখানে আপনি ইমেইল গ্রহণ করতে পারেন। তবে প্রিমিয়াম প্ল্যানে ইমেইল উত্তর দেওয়ার সুবিধাও যুক্ত থাকে। প্রোটন মেইলের প্রধান নির্বাহী অ্যান্ডি ইয়েন বলেন, ‘অনেকে নিউজলেটারের মতো জায়গায় শুধু ইমেইল দেন, উত্তর দেন না- তাতে সমস্যা নেই।
কিন্তু আপনি যদি অনলাইনে কিছু কিনে থাকেন, আর অর্ডার সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়, তখন ইমেইল রিপ্লাই করার ক্ষমতা খুব জরুরি।’ অধিকাংশ সার্ভিসেই একটি ড্যাশবোর্ড থাকে, যেখানে আপনি তৈরি করা সব ছদ্ম ঠিকানা দেখতে ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। কোনো ঠিকানায় যদি স্প্যাম বাড়ে, সেটি মুহূর্তেই বন্ধ করে দেওয়া যায়।

কখন ব্যবহার করবেন?
মজিলার প্রোডাক্ট ম্যানেজার স্যান্টো ইয়াগো আন্ড্রিগো বলেন, ‘ইমেইল মাস্ক যে কোনো সাধারণ পরিস্থিতিতেই ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে দুটি ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে কার্যকর :
১. যখন নিশ্চিত নন, কোনো ওয়েবসাইট আপনার তথ্য কীভাবে ব্যবহার করবে।
২. যখন কোনো সংযোগ আপনার সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস করতে পারে।
যেমন : আপনি যদি কোনো চিকিৎসাসংক্রান্ত বা সংখ্যালঘুদের অনলাইন সম্প্রদায়ে যোগ দেন, তাহলে ডেটা ফাঁস হলে আপনার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পেতে পারে। ইমেইল মাস্কিং সেই ঝুঁকি কমায়।
কেন ইমেইল দেবেন না?
ইমেইল ঠিকানা হলো এক ধরনের ডিজিটাল পরিচয়। এটি অসংখ্য বিপণনকারী বা ডেটা দালালের হাতে গেলে আপনার প্রোফাইল তৈরি হয়, যা গোপনীয়তা নষ্ট করতে পারে। আপনার ঠিকানা ভুল তালিকায় চলে গেলে বাড়তে পারে জাঙ্ক মেইল, ফিশিং লিঙ্ক বা স্ক্যাম। কোনো ওয়েবসাইট হ্যাক হলে আক্রমণকারীরা আপনার লগইন ও পাসওয়ার্ডের সঙ্গে ইমেইলও পেয়ে যায়। অ্যান্ডি ইয়েন বলেন, ‘বেশির ভাগ মানুষ মনে করে সমস্যা পাসওয়ার্ড ফাঁস হওয়ার। কিন্তু বাস্তবে আসল বিপদ হলো ইমেইল ফাঁস হওয়া। কারণ, এটি পরিবর্তন করা অনেক কঠিন, যদি না আপনি মাস্ক ব্যবহার করেন।’
ভুল সমাধান
অনেকে জিমেইল বা ইয়াহুতে একটি ফেলে দেওয়া (Throwaway) অ্যাকাউন্ট খুলে রাখেন। কিন্তু এটি কষ্টসাধ্য এবং কার্যকর নয়। কিছু জিমেইল ব্যবহারকারী নামের সঙ্গে ‘+’ চিহ্ন যোগ করে আলাদা ঠিকানা তৈরি করেন- যেমন : johndoe+shopping@gmail.com। কিন্তু এটি মোটেও নিরাপদ নয়, কারণ যে কেউ সহজেই এই যোগ চিহ্ন সরিয়ে আপনার আসল ইমেইল ঠিকানা বের করতে পারে।
মাঝের মানুষটি (Man in the Middle)
যেহেতু মাস্কিং সার্ভার প্রেরক ও প্রাপকের মধ্যে বার্তা পাঠায়, তাই প্রশ্ন আসে-এরা কি আপনার মেইল পড়ে? প্রতিষ্ঠিত পরিষেবাগুলোর নীতি বলছে না। Firefox Relay স্পষ্ট করে বলেছে, ‘আমরা কোনো বার্তা পড়ি না বা সংরক্ষণ করি না; সর্বাধিক তিন দিনের মধ্যে সার্ভার থেকে মুছে দিই।’ অ্যাপল জানিয়েছে, ‘Hide My Email’-এর মাধ্যমে যাওয়া কোনো ইমেইল ‘কেবল স্প্যাম ফিল্টারিং ছাড়া অন্য কোনোভাবে প্রক্রিয়া করা হয় না’ এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সার্ভার থেকে মুছে ফেলা হয়।
ডিজিটাল যুগে গোপনীয়তা রক্ষার লড়াই এখন নিজের হাতে। আসল ইমেইল ঠিকানাটি যেন আপনার পরিচয়ের একমাত্র চাবি না হয়। আর ইমেইল মাস্ক ব্যবহার করে আপনি যেমন স্প্যাম ও হ্যাকিং থেকে বাঁচতে পারেন, তেমনই নিজের ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর রাখবেন পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। অচেনা কাউকে নিজের ইমেইল দেবেন না বরং ডিজিটাল ইমেইল মাস্ক (মুখোশ) পরুন, নিরাপদ থাকুন।