মহাকাশ শক্তি
মহাকাশের কক্ষপথ থেকে সৌরশক্তি সংগ্রহ করে তা পৃথিবীতে আলোক রশ্মি আকারে পাঠানো এ ধারণাটি কয়েক দশক পুরোনো। তবে আজ বেশ কিছু কোম্পানি দাবি করছে, তারা এটিকে অবশেষে বাস্তবে পরিণত করতে চলেছে ...
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের শিক্ষাবিদদের মধ্যে দুই প্রজন্ম ধরে চলা উন্মুক্ত গবেষণা সহযোগিতা আজ গুরুতর চাপে। জ্ঞান ও উদ্ভাবনের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ এই সহযোগিতাকে এখন মার্কিন আইনপ্রণেতারা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আশঙ্কা- চীন উন্মুক্ত গবেষণার সুযোগ নিয়ে শুধু মার্কিন সামরিক প্রযুক্তির সমানতালে এগোচ্ছে না, বরং কিছু ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সুবিধাও পাচ্ছে।
মূল উদ্বেগ : সামরিক প্রযুক্তিতে সুবিধা
মার্কিন আইনপ্রণেতাদের মতে, বেইজিং উন্মুক্ত গবেষণাকে বিদেশি প্রতিভা অর্জন এবং সামরিক আধুনিকায়নের দ্বিমুখী পাইপলাইন হিসেবে ব্যবহার করছে। স্ট্রাইডার টেকনোলজিসের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর ৫০০-এরও বেশি দল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা সামরিক গবেষকদের সঙ্গে অ্যান্টি-জ্যামিং যোগাযোগ ব্যবস্থা ও হাইপারসনিক প্রযুক্তির মতো অত্যাধুনিক বিষয়ে কাজ করেছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস জানিয়েছে, মার্কিন মাটিতে বিচার হওয়া গুপ্তচরবৃত্তির প্রায় ৮০% মামলাই চীনের স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত। চীন সামরিক, কম্পিউটিং ও বাণিজ্যিক উদ্ভাবনের প্রযুক্তি অবৈধভাবে অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ন্যাশনাল কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি সেন্টারের পরিচালক জেমস ক্যাঙ্গিয়ালোসি সতর্ক করেন-বিদেশি প্রতিপক্ষ, বিশেষ করে চীন, মার্কিন একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের উন্মুক্ত পরিবেশকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে।
সম্পর্কের টানাপোড়েন ও কঠোর নীতি
ক্যাপিটল হিলে উদ্বেগ বাড়তে থাকায় একাডেমিক সহযোগিতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক যেমন শুল্ক ও বাধার কারণে দুর্বল হয়েছে, তেমনই গবেষণা সম্পর্কও ‘সহযোগিতা’ থেকে ‘প্রতিযোগিতা’ এবং পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে আজকাল ‘শত্রুতা’র দিকে ঝুঁকছে।
হাউস কমিটির রিপোর্টে যেসব পদক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়েছে, সেগুলো হলো-
► মার্কিন গবেষণা সুরক্ষায় নতুন আইন প্রণয়ন
► সামরিক-সংযুক্ত চীনা শিক্ষার্থী ও গবেষকদের ভিসা সীমাবদ্ধ করা
► চীনের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে পারে এমন একাডেমিক সহযোগিতা বন্ধ করা।
এর পরও ২০২৪ সালে মার্কিন প্রতিষ্ঠান ও চীনের সামরিক-অধিভুক্ত গবেষণা কেন্দ্রগুলোর যৌথ গবেষণায় ২,৫০০টি প্রকাশনা তৈরি হয়েছে, যা সহযোগিতার ব্যাপকতা দেখায়।
ভারসাম্য রক্ষার বিতর্ক
বিধিনিষেধের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেও অনেক শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞ সতর্ক করছেন অতিরিক্ত কঠোরতা নিয়ে। ভাসার কলেজের অধ্যাপক অ্যাবিগেল কফলিনের মতে, উন্মুক্ত গবেষণা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও সমানভাবে উপকৃত করে। অতিরিক্ত বিধিনিষেধ প্রতিভা হারানো ও উৎপাদনশীলতা কমানোর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তার ভাষ্য, ব্যয়বহুল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার বদলে গবেষণা তহবিলের ধারাবাহিকতাই নিরাপত্তা ও প্রতিযোগিতা উভয় ক্ষেত্রেই ভালো ফল দেবে। প্রযুক্তি উদ্যোক্তা আর্নি বেলিনিওর মতে, সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়ে গবেষণার অগ্রগতি বন্ধ হয়ে গেলে তা দেশের প্রযুক্তিগত অবস্থানকে দুর্বল করবে। তাঁর দাবি, উদ্ভাবন রক্ষায় বড় বিনিয়োগ হবে, তবে সম্পূর্ণ বন্ধুত্বহীন পরিবেশ নয়।
চীনা গুপ্তচরবৃত্তি মোকাবিলায় গঠিত ‘চায়না ইনিশিয়েটিভ’ ২০২২ সালে সমালোচনার মুখে বাতিল হয়, কারণ এটি এশীয়-আমেরিকান গবেষকদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ সৃষ্টি করেছিল বলে অভিযোগ ওঠে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি