মাঝমাঠে থেকে তাঁর রক্ষণভেদী পাস, বলের নিয়ন্ত্রণ, সমানতালে সামলাচ্ছেন রক্ষণও। এককথায় একজন আর্দশ মিডফিল্ডারের ‘ফুল প্যাকেজ’। বলা হচ্ছে মাঝমাঠের এক শিল্পীর কথা, টনি ক্রুস। ফুটবলকে এরইমধ্যে বিদায় বলে দিয়েছেন এই জার্মান মায়েস্ত্রো। জার্মান দলে মাঝমাঠে তার রেখে যাওয়া ছাপ কে পূরণ করবে? পুরো মাঠে দাপিয়ে বেড়ানো এই মিডফিল্ডারের বিকল্প পাওয়া কি সম্ভব?
কেনেট আইখর্ন। ক্রুসের রেখে যাওয়া শূন্যস্থান ভরাট করার মতো এক প্রতিভাকে কিন্তু পেয়ে গেল জার্মানি। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই অনন্য প্রতিভা দিয়ে নজর কেড়েছেন এই মাঝমাঠের ভবিষ্যত তারকা। বুন্দেসলিগার দ্বিতীয় সারির ক্লাব হার্থা বার্লিনের এই ফুটবলারকে পেতে ইতিমধ্যেই ইউরোপের বড় বড় ক্লাবগুলোর তীব্র লড়াইয়ে নেমেছে।
‘নতুন টনি ক্রুস’ নামে খ্যাত এই কিশোরের গত ২ ডিসেম্বরে ডিএফবি-পোকালে করা ঐতিহাসিক গোলটি তাকে নিয়ে আগ্রহকে আরও বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। কাইসারস্লাউটার্নের বিপক্ষে ওই ম্যাচে ৬–১ গোলের দারুণ জয়ে মাঠ ছাড়ে তার ক্লাব। কিন্তু ম্যাচটির সবচেয়ে বড় ঘটনা ছিল একটি বিশেষ মুহূর্ত—মাত্র ১৬ বছর বয়সী কেনেট আইখর্নের গোল। ২০০৯ সালে জন্ম নেওয়া এই প্রতিভাবান ফুটবলার স্বরণীয় এক মূহুর্তের স্বাক্ষী হয়েছেন। পেশাদার ক্যারিয়ারে এটি যে ছিল তার প্রথম গোল।
অনেকেই বলতে পারেন মাত্র একটি গোল করেই তাকে ‘নতুন টনি ক্রুস’ বলা বাড়াবাড়ি। তবে আইখর্নের আসল কাজ যে গোল করা নয়। মাঠে তার ভূমিকা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার—অর্থাৎ গোলমুখ থেকে অনেক দূরের পজিশন, কখনো সেন্ট্রাল মিডফিল্ড। হার্থার ৪-২-৩-১ ফরমেশনে আইখর্ন সাধারণত রক্ষণভাগের সামনে দুই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের একজন হিসেবে খেলেন।
মাত্র ১৬ বছর বয়স হলেও কোচ স্টেন লেইটল আইখর্নের প্রতি আস্থা রাখছেন শুরু থেকেই। চলতি মৌসুমে ইতোমধ্যে দশের বেশি ম্যাচ খেলেছেন আইখর্ন, যার বেশিরভাগই ছিল প্রথম একাদশে। জার্মান সংবাদমাধ্যমগুলো ইতোমধ্যেই তাকে তুলনা করছে টনি ক্রুসের সঙ্গে। শুধু খেলার ধরণ নয়, বরং বল নিয়ন্ত্রণ, ড্রিবলিং, নিখুঁত পাসিং ও স্নায়ুচাপ সামলানোর ক্ষমতার জন্য। এতো কম বয়সী খেলোয়াড়দের মধ্যে যা সচরাচর দেখাই যায় না।
গত আগস্টে আইখর্ন বুন্দেসলিগা–২’ এর ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়সী ফুটবলার হিসেবে অভিষিক্ত হন, মাত্র ১৬ বছর ১৪ দিনে। আর সেটা প্রথম পেশাদার চুক্তিতে সই করার কয়েক দিনের মধ্যেই। তার দ্রুত উন্নতি আর অসাধারণ প্রতিভা দৃষ্টি এড়ায়নি ইউরোপের কোনো বড় ক্লাবেরই। পিএসজি, বায়ার্ন মিউনিখ, বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, বার্সেলোনা, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে রিয়াল মাদ্রিদ—সবাই তাকে নিজেদের স্কাউটিং তালিকায় রেখে দিয়েছে।
পাফরম্যান্সের সঙ্গে আইখর্নের বাজারমূল্যও বাড়ছে তরতর করে। ইতোমধ্যেই প্রায় পৌঁছেছে ২০ কোটি ইউরোর কাছাকাছি। ১৬ বছর বয়সী একজন ফুটবলারের জন্য নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর সংখ্যাই বটে।
আর মাস ছয়েক পরই বিশ্বকাপ। জার্মানির বিশ্বকাপ স্কোয়াডে কি আইখর্ন নামের এই ‘নতুন টনি ক্রুস’ জায়গা করে নিতে পারেন কিনা সেটাই দেখার।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম