ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে রাজনীতি ও দলের সঙ্গে সম্পৃক্তদের পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ার জন্য দেশি সংস্থাগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। একই সঙ্গে তিনি আইন মেনে ‘হস্তক্ষেপ না করে’ এবং ‘নিরপেক্ষ ভূমিকায়’ দায়িত্ব পালন করতে দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে তাগিদ দেন। গতকাল আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নেতা ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে এ আহ্বান জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। দিনব্যাপী সংলাপে সকালে ৪১টি সংস্থাকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইসি। বিকালে ছিল ৪০টি সংস্থা।
পর্যবেক্ষক নিয়োগে সংস্থাগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে সিইসি বলেন, আপনারা যাদের নিয়োগ দেবেন, কাকে দায়িত্ব দিচ্ছেন সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মাঠে তাদের মনিটর করার দায়িত্ব আপনাদেরই। তারা যেন কখনো বায়াস না হয়। অবজারভাররা যদি রাজনৈতিকভাবে মোটিভেটেড হয়ে কাজ করে, তাহলে পুরো ইমেজ নষ্ট হয়ে যাবে।
পর্যবেক্ষকদের দায়িত্ব সম্পর্কে সতর্ক করে সিইসি বলেন, অবজারভারদের কাজ হলো পর্যবেক্ষণ করা, হস্তক্ষেপ করা নয়। আপনারা কাউকে প্রভাবিত করতে পারবেন না, কাউকে লাইনে দাঁড় করাতে পারবেন না। শুধু রিপোর্ট করবেন, সঠিক সময়ে পরামর্শ দেবেন। ফাইনাল রিপোর্টে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিশ্লেষণ দেবেন, যার ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ সংস্কার করা সম্ভব হবে।
‘সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে’ আবারও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রত্যয় ব্যক্ত করে পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, আমরা বরাবর বলে আসছি, জাতিকে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে চাই। নির্বাচন কমিশনের এজেন্ডা একটাই, সুন্দর, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। যত চ্যালেঞ্জই আসুক, এ কাজটি আমরা করতে চাই। আর এ কাজে আপনাদের সহযোগিতা খুব প্রয়োজন।
নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পর্যবেক্ষকদের গুরুত্ব তুলে ধরে নাসির উদ্দিন বলেন, আপনারা কাজ করলে ভোটারদের আস্থা বাড়বে, রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থাও বাড়বে। এমনকি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও একটি ইতিবাচক বার্তা যাবে। যদি ভোটার, রাজনৈতিক দল এবং জনগণ আমাদের ওপর আস্থা রাখতে না পারে তাহলে নির্বাচন করাটা মুশকিল হয়ে যাবে। তাই সফল নির্বাচন ডেলিভার করতে আমরা আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। প্রশিক্ষণের তাগিদ দিয়ে সিইসি জানান, পর্যবেক্ষণের জন্য যাদের নিয়োগ দেওয়া হবে, বিশেষত নতুনদের, তাদের অবিলম্বে নির্বাচন ও নির্বাচনি সম্পর্কে ওরিয়েন্টেশন এবং প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
এসময় খান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রোকসানা খন্দকার বলেন, ভোটার তালিকা ভোট কেন্দ্রে টানিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। প্রার্থীরা বাসায় গিয়ে নম্বর দেয় কিন্তু কেন্দ্রে দুর্ভোগ পোহাতে হয় ভোটারের। প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে। পর্যবেক্ষক নিরাপত্তার বিষয়ে রোকসানা খন্দকার বলেন, অবজারভারদের সিকিউরিটি এনশিউর করা প্রয়োজন। প্রার্থীরা অনেক সময় পর্যবেক্ষকদের প্রতিপক্ষ মনে করে, এজন্য তাদের সিকিউরিটি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই সবার ভূমিকা থাকবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য।
নিজে নিরাপদ থাকুন, নিজের কাজের পরিধির বাইরে যাবেন না : ইসি মো. সানাউল্লাহ : নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ পর্যবেক্ষণ নীতিমালার সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন। পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তার বিষয়ে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তার বিষয় এসেছে আলোচনায়। দেখুন, একটা পয়েন্ট নিরাপত্তা, আরেকটা এলাকার নিরাপত্তা। এখানে আপনি, আমি, সব এলাকার নিরাপত্তার মধ্যে পড়ি। ব্যক্তি অবজারভারদের নিরাপত্তা দেওয়ার সক্ষমতা রাষ্ট্রের নেই। একজনের সঙ্গে একজন গানম্যান নিয়োগ করে দিলাম, নো। ইটস নট পসিবল, ইটস নট ফিজিবল, প্র্যাকটিক্যাবেলও নয়। সে ক্ষেত্রে বিদ্যমান পরিবেশ যেন নিরাপদ থাকে। তার পরও নিরাপত্তা হানিকর ঘটনা ঘটলে এড্রেস করব। অবজারভাররা নিজেকে এনডেঞ্জারড করবে না। এমন কোনো জায়গায় যাবে না, যেখানে তার যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তাকে তার কাজের ডোমেইনে থাকতে হবে। ব্যক্তিগত কাজে গিয়ে যদি বলে আমি অবজারভার-দুঃখিত, সে দায়দায়িত্ব তার প্রতিষ্ঠানও নিতে পারবে না, নির্বাচন কমিশনও নিতে পারবে না। এটা খেয়াল রাখতে হবে।