একটা স্বভাবানুকূল দ্বিনের ক্ষেত্রে কর্মসম্পাদনে অগ্রাধিকার প্রদান কৌশল নির্ধারণ অতীব জরুরি একটা বিষয়। ইসলামের ওপর চলতে একজন মুমিন ব্যক্তিগতভাবে বা সামাজিকভাবে বহুকৌণিক কর্মের সম্মুখীন হয়ে পড়ে। একদিকে চিন্তা করলে একটা বিষয় করতে হয়, আরেক দিক চিন্তা করলে অন্য কোনো একটিকে প্রধান্য দেওয়ার বিষয়টি সম্মুখে চলে আসে। তখন সে কোনটিকে প্রাধান্য দেবে তা নিয়ে কিংকর্তব্য হয়ে যায়।
মিজাজে শরিয়তের আলোকে এ সময় অগ্রাধিকার নির্ণয় করতে হয়।
কিছু কিছু অগ্রাধিকার আছে একেবারে পরিষ্কার। যেমন—হালাল ও হারামের ক্ষেত্রে হালালকে অগ্রাধিকার দিতে হবে নিঃসন্দেহে; কিন্তু একটা মানুষ যখন মৃত্যুর সম্মুখীন হয়ে পড়ে এ সময় শরিয়ত তাকে জান বাঁচানোর অগ্রাধিকার দেয়। হারাম গ্রহণ করে হলেও জান বাঁচাতে হবে।
ওই ক্ষেত্রে হালালের চিন্তার স্থলে জান বাঁচানো বড় হয়ে দেখা দেয়। এ সময় তাকওয়ার নামে কেউ যদি হারাম গ্রহণ না করে জান দিয়ে দেয়, মারা যায়, তবে তা শরিয়তের আলোকে তাকওয়া নয়।
ফরজ-অফরজের ক্ষেত্রে ফরজকে অগ্রাধিকার দিতে হবে সুনিশ্চয়। সালাম দেওয়া ফরজ নয়, জবাব দেওয়া ওয়াজিব-কর্তব্য; কিন্তু পুণ্যের দিক থেকে সালাম দেওয়া ওয়াজিব না হওয়া সত্ত্বেও অগ্রাধিকার রাখে।
কিছু কিছু অগ্রাধিকার বিষয় আছে জটিল। শরিয়ত ও মিজাজে শরিয়তের ওপর গভীর পাণ্ডিত্য ও তাকওয়া ব্যতিরেকে এসব ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার বোঝা মুশকিল হয়ে যায়।
এক সাহাবি একবার সফরে ছিলেন। পথিমধ্যে নামাজের সময় ঘোড়াটি কাছে রেখে নামাজ আদায় করতে দাঁড়ালেন। তখন হঠাৎ ঘোড়াটি পালিয়ে যেতে উদ্যত হলো। সাহাবি নামাজ ছেড়ে ঘোড়াটি ধরলেন।
সেখানে একটা লোক বলতে লাগল, দেখো এর কাণ্ড! নামাজের চেয়ে ঘোড়ার দাম বেশি দিচ্ছে।
সাহাবি বলেন, তোমার কথায় কষ্ট পেলাম। রাসুলুল্লাহকে (সা.) কখনো এত কঠিন করতে দেখিনি। আমি ঘোড়াটি ছেড়ে দিলে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারতাম না। (ইমাম বুখারি, আস-সহিহ, হাদিস : ১১৫৩)
এটা ছিল অগ্রাধিকার নির্ধারণ। এখানে নামাজ ছেড়ে দেওয়াই তাকওয়ার চাহিদা।
এমনিভাবে আমরা চিন্তা করতে পারি, একটা লোক নামাজে দাঁড়িয়েছে। কাছেই একটা শিশু পানিতে ডুবে যাচ্ছে। এমন সময় তাকওয়া কী? নামাজের মহব্বতে শিশুটিকে মরতে দেওয়া? না, ইসলামে বলে, এ সময় নামাজ ছেড়ে দেওয়া কর্তব্য। শিশুটিকে বাঁচানো অগ্রাধিকার দিতে হবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জনৈক সাহাবি জিহাদের অনুমতি চাইলেন। নবী (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার পিতামাতা আছে কি? সাহাবি বলেন, হ্যাঁ। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যাও, তাদের খিদমতে গিয়ে জিহাদ করো।
প্রখ্যাত আল্লাহর ওলি, সুফি সাধক বিশরে হাফীর কাছে তাঁর জনৈক ভক্ত নফল হজ করার অনুমতি চাইল। তিনি বললেন, এই টাকা আল্লাহর রাস্তায় দরিদ্রদের সেবায় ব্যয় করে দাও। তাতে সওয়াব বেশি হবে। এর নাম হলো অগ্রাধিকার।
ইসলামে অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্ব হিসেবে, অনেক ক্ষেত্রে স্থান-কাল-পাত্র হিসেবে, অনেক ক্ষেত্রে সহজতর বিষয়টি গ্রহণ—এই মূলনীতি হিসেবে অগ্রাধিকারের বিষয়টি বিবেচ্য হয়ে থাকে।
বিডি প্রতিদিন/মুসা