ফিলিস্তিনের গাজায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধের প্রভাবে ইসরায়েলে ক্ষুধা ও খাদ্যসংকট আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। দেশটির মানবিক সংস্থা লাতেতের এক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধের দেশটিতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিণতির কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
গত সোমবার (৮ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের এক-চতুর্থাংশের বেশি পরিবার বর্তমানে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এতে দেশটির প্রায় ৮ লাখ ৬৭ হাজার ২৫৬টি পরিবার। অর্থাৎ ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবার পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না, যা গত বছরের তুলনায় ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি এবং এটি একটি নতুন রেকর্ড।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলের প্রায় ১১ লাখ ৮০ হাজার শিশু, অর্থাৎ ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ শিশু এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার শিকার। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, খাদ্য সহায়তাপ্রাপ্ত মানুষের এক-চতুর্থাংশই ‘নতুন দরিদ্র’, যারা গাজা যুদ্ধ শুরুর পর গত দুই বছরে সাহায্যনির্ভর হয়ে পড়েছে। লাতেতের মতে, চলমান যুদ্ধ ও মূল্যবৃদ্ধির চাপ একটি ‘সামাজিক জরুরি অবস্থা’ তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদ্যঘাটতির সংকট নিম্ন আয়ের পরিবার ছাড়িয়ে এখন নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারেও ছড়িয়ে পড়ছে। বর্তমানে দেশটির ১০ শতাংশ পরিবার গুরুতর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। একদিকে যেমন সাহায্যের জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়ছে, তেমনই অন্যদিকে অনুদানের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। যুদ্ধসংক্রান্ত খাতে ব্যয় বাড়ায় অনেক সংস্থা আগের চেয়ে কম অনুদান পাচ্ছে, ফলে তাদের সেবামূলক কার্যক্রমও সংকুচিত হয়ে আসছে।
চলতি বছরে ইসরায়েলে একজন ব্যক্তির ন্যূনতম জীবনযাত্রার ব্যয় পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ এবং একটি পরিবারের ক্ষেত্রে পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ বেড়েছে। দেশটিতে একজন মানুষের সম্মানজনকভাবে বেঁচে থাকার জন্য মাসে ন্যূনতম পাঁচ হাজার ৫৮৯ শেকেল (এক হাজার ৭৩৩ ডলার) এবং চার সদস্যের একটি পরিবারের জন্য ১৪ হাজার ১৩৯ শেকেল (চার হাজার ৩৮৪ ডলার) প্রয়োজন।
সহায়তা গ্রহণকারী ৫৯ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, গত বছর তাদের আর্থিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৩ দশমিক এক শতাংশের ব্যাংক হিসাব জব্দ বা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, যা সাধারণ জনগণের তুলনায় তিন গুণ বেশি। এই গ্রহীতারা মাসে গড়ে ১২ হাজার ৭৩৪ শেকেল (তিন হাজার ৯৪৯ ডলার) খরচ করেন, যা তাদের গড় আয় ছয় হাজার ৫৯৩ শেকেলের (দুই হাজার ৪৫ ডলার) প্রায় দ্বিগুণ।
শিক্ষাক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়েছে মারাত্মকভাবে। ৩৩ শতাংশের বেশি পরিবার তাদের সন্তানদের জন্য স্কুলের বই-খাতা কিনতে পারেনি এবং ৮৪ শতাংশ পরিবার খরচের কারণে সন্তানদের স্কুলের কোনো কার্যক্রমে বা ভ্রমণে পাঠাতে পারেনি। এছাড়া, ৬১ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো নেই বলে জানিয়েছে এবং ৪২ দশমিক ৪ শতাংশের মতে, ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবরের পর থেকে তাদের মানসিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১০ অক্টোবর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এর আগে দুই বছরের ইসরায়েলি হামলায় ৭০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখ ৭১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি।
বিডি প্রতিদিন/কামাল