জার্মানি ও ইসরায়েলের সামরিক সহযোগিতা বিশ্বের নজর কেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথভাবে তৈরি দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অ্যারো-৩ প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের বাইরে জার্মানিতেই কার্যকর করা হয়েছে। চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মেরৎসের ইসরায়েল সফরের ঠিক আগে এই ব্যবস্থা জার্মান বাহিনীতে প্রাথমিকভাবে চালু হওয়াকে দেশটির প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রাশিয়ার আগ্রাসী যুদ্ধকৌশল এবং তাদের আধুনিক দীর্ঘ-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাব্য হুমকি ইউরোপে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সেই প্রেক্ষাপটেই জার্মানির নিরাপত্তানীতি ২০২২ সালের পর থেকে আমূল পরিবর্তিত হয়। বাড়তি প্রতিরক্ষা ব্যয়, বহুস্তরীয় ইউরোপীয় আকাশ প্রতিরক্ষা কাঠামো তৈরি এবং যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভূরাজনৈতিক নীতিপত্র; সব মিলিয়ে শক্তিশালী দূরপাল্লার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অপরিহার্য হয়ে ওঠে বলে দাবি জার্মানির।
জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বোরিস পিস্টোরিয়াস জানিয়েছেন, অ্যারো-৩ চালুর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো জার্মানি মহাকাশের কাছাকাছি উচ্চতা থেকে নিক্ষিপ্ত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে সক্ষম হলো। তার ভাষায়, এটি শুধু জার্মান জনগণই নয়, গোটা ইউরোপীয় অংশীদারদের জন্যও নিরাপত্তার অতিরিক্ত স্তর যোগ করছে।
ইতোমধ্যে ব্র্যান্ডেনবার্গ, স্যাক্সনি-আনহাল্ট এবং স্যাক্সনির সীমানায় অবস্থিত হোলৎসডর্ফ বিমানঘাঁটিতে অ্যারো-৩ স্থাপন করা হয়েছে। এখান থেকেই সারা জার্মানিতে দীর্ঘ-পাল্লার প্রতিরক্ষা ছাতা বিস্তার করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আরও দু’টি কেন্দ্র স্থাপন করা হবে বাভারিয়া ও শ্লেসভিগ-হলস্টাইনে। পুরো ব্যবস্থা ২০৩০ সালের মধ্যে পূর্ণ সক্ষমতা অর্জন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আইরিস-টি এবং প্যাট্রিয়ট সিস্টেম যেখানে স্বল্প ও মাঝারি দূরত্বে কার্যকর, সেখানে অ্যারো-৩'র পাল্লা প্রায় ২৪শ' কিলোমিটার এবং এটি ১০০ কিলোমিটার উচ্চতায়, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে পারে। ‘হিট-টু-কিল’ প্রযুক্তিতে বিস্ফোরণ নয় বরং সরাসরি আঘাতের মাধ্যমে শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করা হয়, যাতে আকাশে কম ধ্বংসাবশেষ সৃষ্টি হয়। এটি জনবসতিপূর্ণ এলাকার নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০২৩ সালে জার্মানি ও ইসরায়েল যে ৩.৬ বিলিয়ন ইউরোর চুক্তি স্বাক্ষর করে। সেটিই ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অস্ত্র রপ্তানি চুক্তি। শুধু প্রযুক্তি অধিগ্রহণ নয়, দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণ ও সহায়তাও এই চুক্তির অংশ। এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা ও কৌশলগত অংশীদারত্ব আরও জোরদার হয়েছে। একইসঙ্গে ইউরোপীয় প্রতিরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমাতেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
অ্যারো-৩ এখন ইউরোপিয়ান স্কাই শিল্ড ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসেবে শুধু জার্মানিই নয়, সমগ্র ইউরোপকে আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি থেকে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করছেন জার্মা প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র: ডিডব্লিউ
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল