হাওয়াইয়ের মাউন্ট কিলাউয়ায় অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম সক্রিয় এই আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ দিয়ে এত বেশি লাভা বের হচ্ছে যে নিচের দিকে ফোয়ারার মতো দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। জাপানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকে জানিয়েছে, উদগীরণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় দূর থেকেই আগুনের প্রতিফলন চোখে পড়ছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা, ইউএসজিএস জানিয়েছে, হাওয়াই দ্বীপে অবস্থিত মাউন্ট কিলাউয়ায় অগ্ন্যুৎপাতের ফলে একাধিক লাভা ফোয়ারা তৈরি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।
সংস্থাটি জানায়, শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে দুটি জ্বালামুখ খুলে যায়। এর আগে আরেকটি ফাটল থেকে লাভা প্রবাহ বের হতে দেখা গেছে। ইউএসজিএস বলছে, একই সময়ে তিনটি সক্রিয় লাভা ফোয়ারা পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত বিরল। কিছু লাভা প্রায় ৩৭০ মিটার উঁচু পর্যন্ত ছিটকে উঠেছিল।
বিস্তৃত এলাকার বাসিন্দাদের সালফার ডাইঅক্সাইড, অন্যান্য গ্যাস এবং ধোঁয়ার সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি, কারণ এসব গ্যাস শ্বাসযন্ত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।
কিলাউয়া বিশ্বের অন্যতম সক্রিয় আগ্নেয়গিরি হিসেবে পরিচিত। অগ্ন্যুৎপাতটি এমন এলাকায় হচ্ছে যেটি ২০০৭ সাল থেকে সাধারণ মানুষের জন্য নিষিদ্ধ। মাউন্ট কিলাউয়া, হাওয়াইয়ের বিগ আইল্যান্ডের দক্ষিণ–পূর্ব অংশে অবস্থিত, বৃহত্তর মানা লোয়া আগ্নেয়গিরির ঢালে গড়ে ওঠা একটি শিল্ড আগ্নেয়গিরি। হাওয়াইয়ান ভাষায় ‘কিলাউয়া’ শব্দের অর্থ ‘উগরে দেওয়া’ বা ‘প্রচুর পরিমাণে ছড়িয়ে পড়া’—যা এর ঘন ঘন লাভা নিঃসরণের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গেই মিলে।
কিলাউয়ার পৃষ্ঠের প্রায় ১১০০ বছরের অধিকাংশই জমা হওয়া লাভা প্রবাহের স্তর দিয়ে তৈরি, যা এর চরম সক্রিয়তা নির্দেশ করে। আধুনিক সময়ে কিলাউয়ার সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী অগ্ন্যুৎপাত ছিল ১৯৮৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। ওই দীর্ঘ সময়ে বিপুল পরিমাণ লাভা নিঃসৃত হয়েছিল। যদিও কিলাউয়ার অগ্ন্যুৎপাত সাধারণত কম বিস্ফোরণধর্মী, ১৭৯০ সালে ঘটে যাওয়া এক বাষ্প বিস্ফোরণে ৪০০–এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম মারাত্মক অগ্ন্যুৎপাত হিসেবে বিবেচিত।
স্থানীয় হাওয়াইয়ানরা ঐতিহ্যগতভাবে মনে করে, কিলাউয়া অগ্নির দেবী পেলেহোনুয়ামেয়ার আবাসস্থল। বিশ্বাস করা হয়, তিনি কিলাউয়ার শীর্ষ ক্যালডেরার অভ্যন্তরের হালেমাউমাউ গহ্বরে অবস্থান করেন।
বর্তমানে কিলাউয়ার সক্রিয়তা খণ্ডকালীন বা এপিসোডিক। অগ্ন্যুৎপাত কয়েক দিনের বিরতির পর আবার শুরু হতে পারে এবং সক্রিয়তার সময়কাল কখনো কখনো মাত্র কয়েক ঘণ্টা থাকে। সাম্প্রতিক অগ্ন্যুৎপাতের সালফার ডাইঅক্সাইড গ্যাসকে বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ এটি শ্বাসযন্ত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। অগ্ন্যুৎপাতজনিত ঝুঁকি এবং অবকাঠামোগত নিরাপত্তার কারণে হাওয়াই ভলকানোস ন্যাশনাল পার্কের কিছু অংশ বা ট্রেইল সাময়িকভাবে বন্ধ থাকতে পারে।
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/আশিক