ভারতে নতুন করে বাবরি মসজিদ নির্মাণের ডাক দেওয়া হুমায়ুন কবিরকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবিরকে বহিষ্কারের বিষয়টি ঘোষণা করেন কলকাতার মেয়র ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি জানান, হুমায়ুনের সঙ্গে কোনওরকম সম্পর্ক রাখবে না দল।
সম্প্রতি বাবরি মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা এবং এই ইস্যুতে দলের মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে নিশানা করে সবচেয়ে বড় বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন হুমায়ুন কবির। এ ঘটনায় নিজের দল তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যেই কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন তিনি। যদিও বাবরি মসজিদ নির্মাণের ব্যাপারে অটল তিনি।
সম্প্রতি গণমাধ্যমের সামনে হুমায়ুন কবির জানিয়েছিলেন, চলতি বছরের ৬ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বেলডাঙ্গায় বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর নির্মাণ করা করা হবে। মসজিদটি সম্পূর্ণ হতে সময় লাগবে তিন বছর। ওই অনুষ্ঠানে প্রায় দুই লাখ মানুষ ও ৪০০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত থাকবেন। এর আগে ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বরও রাজ্য বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে বাবরি মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।
এবারই প্রথম নয় বিভিন্ন সময়ে নিজের দলের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছিল এই বিধায়কের বিরুদ্ধে। দলের পক্ষ থেকে সতর্কও করা হয়েছিল। কিন্তু বদলাননি তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বাবরি মসজিদ করার কথা বলে বাবরি ধ্বংসের স্মৃতি উসকে দিতে চাইছেন কবির। আমরা মনে করি এর পেছনে বিজেপি রয়েছে। ওরা হুমায়ুনকে সামনে রেখে হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের রাজনীতি করছে।”
ফিরহাদ আরও বলেন, “কেউ কোথাও নিজের অর্থে মসজিদ করলে করতেই পারেন। কিন্তু দলের বিধায়ক সংহতি দিবসের (৬ ডিসেম্বর) তারিখটাকেই বেছে নিলেন শিলান্যাসের জন্য! কেন?”
ফিরহাদের দাবি, হুমায়ুন বাংলায় দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে। যদিও দলের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিতে নারাজ হুমায়ুন। বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের কথা জানামাত্রই আগামী ২২ ডিসেম্বরই নতুন দল ঘোষণা দেন তিনি।
হুমায়ুনের বাবরি মসজিদ নির্মাণের ঘোষণার পর ভারতজুড়ে ব্যাপক বিতর্কও তৈরি হয়। ভারতের সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মধ্যপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সিনিয়র বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী সরাসরি হুমকি দিয়ে জানান, আমরা উপরওয়ালা বা ইসলামের নামে নির্মিত মসজিদগুলোকে সম্মান করব, কিন্তু বাবরের নামে কোনও মসজিদ নির্মাণের চেষ্টা হলে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মতো পরিণতি হবে। মমতা ব্যানার্জীকে পরামর্শ দিয়ে উমা ভারতী বলেন, “যারা বাবরের নামে মসজিদ তৈরির কথা বলেন তাদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”
নিজের অবস্থানে অটল থেকে দুদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে হুমায়ুন কবির স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, “মুর্শিদাবাদের পুলিশ প্রশাসনকে আমি সতর্ক করছি, আপনারা আগুন নিয়ে খেলবেন না।” সূত্র: দ্য হিন্দু, হিন্দুস্তান টাইমস
বিডি প্রতিদিন/একেএ
