ইউক্রেনের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিচালকদের একজন এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা আন্দ্রি ইয়ারমাক পদত্যাগ করেছেন। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলোর একযোগে তার বাড়িতে অভিযান চালানোর কয়েক ঘন্টা পরে তার পদত্যাগের ঘোষণা এসেছে।
আন্দ্রি ইয়ারমাক সম্প্রীতি জেনেভায় ওয়াশিংটনের সাথে সাম্প্রতিক আলোচনায় তিনি ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার পদত্যাগের কারণে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ শেষ করার জন্য শান্তি চুক্তি গ্রহণের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন চাপের মুখোমুখি হওয়ায় এটি একটি বড় সংকট।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) সংস্থাগুলোর দেওয়ার বিবৃতি অনুসারে, ইউক্রেনের দুটি প্রধান দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা, জাতীয় দুর্নীতি দমন ব্যুরো অফ ইউক্রেন (নাবু) এবং বিশেষায়িত দুর্নীতি দমন প্রসিকিউটর অফিস (সাপো) আন্দ্রি ইয়ারমাক এর বাড়িতে অভিযান চালায়।
বিবৃতিতে অব্শ্য অভিযানের কারণ প্রকাশ করা হয়নি, তবে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি অবকাঠামো সম্পর্কিত একটি প্রকল্পে ঘুষের অভিযোগ ওঠার পর দুটি সংস্থা তদন্তে নামে। তদন্তের দুই সপ্তাহ পরে এই অভিযান চালানো হয়েছে।
এই কেলেঙ্কারির অভিযোগে ইতিমধ্যেই জেলেনস্কির দুই মন্ত্রীকে পদত্যাগ করেছে। এছাড়াও বিনোদন জগতে জেলেনস্কির একজন সাবেক ব্যবসায়ী সহযোগি তিমুর মিনদিচ এর নাম উঠে এসেছে।
পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি আজ শনিবার চিফ অফ স্টাফ পদ গ্রহণের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাথে কথা বলবেন। শুক্রবার জেলেনস্কির ইয়েরমাকের পদত্যাগ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে গুরুত্বপূর্ণ শান্তি আলোচনায় কিয়েভের অবস্থানকে আরও কঠিন করে তোলেছে।
জেলেনস্কি বলেন, আমি চাই আজ ইউক্রেন সম্পর্কে কারোরই কোনও প্রশ্ন না থাকুক। আমাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় আবারও চালু করা হবে।
ইয়েরমাক তাৎক্ষণিকভাবে কোনও প্রকাশ্য বিবৃতি দেননি। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে অভিযান চলছে, টেলিগ্রামে তিনি বলেছেন, তিনি কর্তৃপক্ষকে ‘পূর্ণ সহযোগিতা’ করছেন। তদন্তকারীরা কোনও বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন না। তাদের অ্যাপার্টমেন্টে সম্পূর্ণ প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে, এবং আমার আইনজীবীরা ঘটনাস্থলে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করছেন।
এনএবিইউ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কিছু বহিরাগত ব্যক্তির হাতে বার্ষিক ৪ বিলিয়ন ইউরোর বেশি আয়ের একটি কৌশলগত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ ছিল। তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক পদ বা ক্ষমতা ছিল না।
তদন্ত বলছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় রুশ হামলায় বিদ্যুৎ স্থাপনাগুলোর প্রতিরক্ষা কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারদের কাছ থেকেও ঘুষ নেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।
গত সপ্তাহে, ট্রাম্প প্রশাসন ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করে। এর মধ্যে ইউক্রেনের ভূখণ্ড ত্যাগ, তার সেনাবাহিনী কমানো এবং ন্যাটোতে যোগদান থেকে বিরত থাকার দাবি অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে ইউক্রেনীয় এবং ইউরোপীয় কর্মকর্তারা শান্তি পরিকল্পনার এই সংস্করণের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন এবং ইয়েরমাকের প্রতিনিধিদল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এটি সংশোধন করতে রাজি করাতে সক্ষম হয়েছিল।
রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার বলেছেন, তিনি আশা করছেন যে আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে একটি মার্কিন প্রতিনিধিদল মস্কো আসবে, অন্যদিকে জেলেনস্কি জানান, ইউক্রেনীয় দলও আমেরিকানদের সাথে দেখা করার জন্য প্রস্তুত। এছাড়াও রাশিয়া বলেছে, তারা ইয়েরমাকের পদত্যাগের পরের ঘটনাগুলি পর্যবেক্ষণ করছে।
বিডি প্রতিদিন/কামাল