শ্রীলঙ্কায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে টানা ভারী বর্ষণ থেকে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। দেশজুড়ে বন্যা ও ভূমিধসে এখন পর্যন্ত ৮০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ৩৪ জন।
হঠাৎ পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতে অনেক এলাকায় ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন হাজারো মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধারকাজ জোরদার করেছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও নিরাপত্তাবাহিনী।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, এখনও বহু মানুষ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন, যাদের কাছে পৌঁছাতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকর্মীরা। বন্যার কারণে বেশ কয়েকটি অঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলেও জানিয়েছে সরকার। শুক্রবার কর্তৃপক্ষ এ কথা জানিয়েছে।
শ্রীলঙ্কার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র (ডিএমসি) এ খবর জানিয়েছে। ডিটওয়া নামের এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার পাশাপাশি ভূমিধসও হয়েছে। বহু ঘরবাড়ি কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ডিএমসির তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড়ে ৪৪ হাজার ১৯২ পরিবারের অন্তত ১ লাখ ৪৮ হাজার ৬০৩ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৫ হাজার ২৪ পরিবারের ১৪ হাজার ৭৬৬ জন ১৯৫টি জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন।
ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে ৪২টি বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস এবং ২ হাজার ৮১০টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়ার প্রভাবে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৩০০ মিলিমিটারের (১১ দশমিক ৮ ইঞ্চি) বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভোরে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে। এই সময় ঘণ্টায় প্রায় ৬৫ কিলোমিটার গতিবেগে বাতাস প্রবাহিত হয়েছে। দেশটির পূর্ব ও মধ্যাঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অধিকাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে ভূমিধসে। এবার যে বন্যা দেখা দিয়েছে, তা কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ।
ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার কারণে মোরাগাহাকান্দা, এলাহেরা ও কুমারা এলা সেতু পানির তোড়ে ভেসে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ এই তিন সেতু ধসে যাওয়া মাতালে, পলোন্নারুয়া, কুরুনেগালা ও উভা প্রদেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এসব সড়ক বাণিজ্য, কৃষি ও ত্রাণবাহী যান চলাচলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে শুক্রবার এক বিশেষ এক সংবাদ সম্মেলন করেছে। এতে তিন বাহিনীর কমান্ডার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারা ও সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
ডিএমসির মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সম্পৎ কোটুওয়েগোদা নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হওয়ায় সবাইকে নিরাপত্তা নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
সেচ বিভাগ সতর্কতা জারি করে বলেছে, কেলানি নদীর পানি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে। ফলে কলম্বো ও আশপাশের এলাকাতেও ভয়াবহ বন্যার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সূত্র: নিউজ ফাস্ট
বিডি প্রতিদিন/নাজিম