একসময় যা ছিল কেবল ঘরোয়া প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ, ইরানের সেই ড্রোন প্রযুক্তি এখন বিশ্বে আলাদা পরিচিত পেয়েছে। কম খরচে কার্যকর ড্রোন তৈরি করে ইরান আন্তর্জাতিক বাজারে জায়গা পোক্ত করেছে।
গেল এক দশকে ড্রোন শিল্পে ইরানের উন্নতি দেখে বিশ্লেষকরাও বিস্মিত। উন্নত প্রযুক্তি নয় বরং সহজ, নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করাই ইরানের সফলতার মূল রহস্য। বাণিজ্যিকভাবে সহজলভ্য যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে ইরান এমন সব ড্রোন তৈরি করেছে যা যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত ও বড় পরিসরে ব্যবহার করা যায়।
ইরানের সবচেয়ে আলোচিত ড্রোন শাহেদ-১৩৬। এটি এক ধরনের লয়টারিং মিউনিশন। এটিকে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে একমুখী মিশনে পাঠানো হয়। সস্তা উপকরণ, সহজ কাঠামো ও গণউৎপাদনের সুবিধার কারণে এটি অনেক দেশের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। রাশিয়া থেকে ইয়েমেন; বিভিন্ন দেশে এর কপি বা লাইসেন্সপ্রাপ্ত সংস্করণ ইতোমধ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আরও উন্নত শ্রেণির ড্রোন মোহাজের-৬। এটি মাঝারি উচ্চতা ও দীর্ঘসময় আকাশে ভেসে থাকার ক্ষমতাসম্পন্ন কমব্যাট ড্রোন। নজরদারি, তথ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে সুনির্দিষ্ট হামলা, সবই করতে পারে ড্রোনটি। রিয়েল-টাইম ভিডিও ট্রান্সমিশন, বিশেষ সেন্সর এবং সুনির্দিষ্ট গাইডেড অস্ত্র বহনের ক্ষমতা এই ড্রোনকে আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় করেছে। ইথিওপিয়া, ভেনেজুয়েলা ও ইরাকসহ বিভিন্ন দেশে এর ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।
নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহের জন্য তৈরি আবাবিল-৩ ড্রোন ইরানের ড্রোন প্রযুক্তির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর। দীর্ঘসময় উড়ে থাকা, স্থিতিশীল ফ্লাইট এবং স্পষ্ট ভিডিও পাঠানোর ক্ষমতার কারণে এটি সীমান্ত টহল থেকে শুরু করে যুদ্ধক্ষেত্রে লক্ষ্য নির্ধারণের মতো কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। সিরিয়া ও সুদানসহ একাধিক দেশে এটি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
ইরানের ড্রোন এখন আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে পূর্ব ইউরোপ; বহুদেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। কম খরচে কার্যকর সামরিক সমাধান পাওয়ায় অনেক দেশ পশ্চিমা বা রুশ প্রযুক্তির বদলে ইরানের দিকে ঝুঁকছে। ফলে প্রতিরক্ষা শিল্পে ইরান একটি নতুন কূটনৈতিক প্রভাব বলয়ও তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য এবং বাস্তবমুখী নকশা, এই তিনটি বৈশিষ্ট্য ইরানের ড্রোন শিল্পকে আজ বিশ্বে বিশেষ জায়গা করে দিয়েছে। শাহেদ-১৩৬, মোহাজের-৬ এবং আবাবিল-৩ প্রমাণ করেছে যে ব্যয়সাপেক্ষ প্রযুক্তি না দিয়েও কার্যকর সামরিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা সম্ভব।
সূত্র: প্রেস টিভি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল