অণুগল্প কথাসাহিত্যের এক বিশেষ রূপ। এ যেন বিন্দুতে সিন্ধু দর্শনের শিল্প। এ সাহিত্যকে বিভিন্ন দেশে নানা নামে ডাকা হয়। মাইক্রো ফিকশন, পোস্টকার্ড ফিকশন, ন্যানো ফিকশন, সাডেন ফিকশন, সুপার শর্ট ফিকশন কিংবা শর্ট-শর্ট স্টোরি। নাম আলাদা হলেও সারমর্ম এক, অল্প কথনে গভীর অনুভবের বিস্তার। অণুগল্পের সার্থকতা হলো, এখানে সবকিছু স্পষ্ট করে বলা হয় না। একটি ইঙ্গিত দেওয়া হয় মাত্র। আর বাকিটা পাঠকের কল্পনার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। ভাষা থাকে সংক্ষিপ্ত ও মেদহীন; চরিত্র কম, কিন্তু তাদের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ঘটনার গতি দ্রুত, আর সমাপ্তি প্রায়ই চমকে পূর্ণ, আকস্মিক। কয়েকটি অনুচ্ছেদ বা কয়েক শ শব্দেই একটি পূর্ণাঙ্গ ঘটনা, অনুভূতি বা বার্তা তুলে ধরাই অণুগল্পের লক্ষ্য। অণুগল্পের এই ছোট কাঠামোর চর্চা নতুন কিছু নয়। শত শত বছর ধরে লোককথা, নৈতিক কাহিনিতে অণুগল্পের ছায়া লক্ষ্য করা যায়। পশ্চিমে ঈশপের গল্প, ভারতবর্ষে গোপাল ভাঁড়ের হাস্যরসাত্মক বুদ্ধিদীপ্ত কাহিনি। সবই অণুগল্পের ভিন্ন রূপ। ফরাসি কবি শার্ল বোদলেয়ার তাঁর গদ্য-কবিতার ভিতরেও যে অণুগল্পের আভাস রেখেছেন, তা সর্বজনস্বীকৃত। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে অণুগল্পের প্রধান লেখক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়, যিনি বনফুল ছদ্মনামেই সমধিক পরিচিত। তাঁর অনবদ্য সরলতা, সংক্ষিপ্ত লিখনভঙ্গি ও চমকপ্রদ সমাপ্তি বাংলা অণুগল্পকে এক স্বতন্ত্র উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। আধুনিক বিশ্বসাহিত্যে অণুগল্প লিখে ম্যান বুকার পুরস্কার পেয়েছেন মার্কিন লেখিকা লিডিয়া ডেভিজ; পুলিৎজার পেয়েছেন রবার্ট ওলেন বাটলার। অ্যান্টন চেখভ, কাফকা, হেমিংওয়ে, সমারসেট মম, আর্থার সি. ক্লার্ক, রে ব্রাডবুরি, নগিব মাহফুজ, ডোনাল্ড বার্থলেম, আমব্রুস বিয়ার্স, কেট শপার মতো অনেক খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক এই খুদে রূপবন্ধকে সমৃদ্ধ করেছেন। অণুগল্পের শব্দসীমা নির্দিষ্ট নয় তবে সাধারণত হাজার শব্দের বেশি হয় না। আর্নেস্ট হেমিংওয়ে প্রায় নয় শ শব্দে লিখেছেন বিখ্যাত ‘ক্যাট ইন দ্য রেইন’; আবার তিনিই ছয় শব্দে সৃষ্টি করেছেন এক অনন্ত বেদনার গল্প : ‘For sale : baby shoes, never worn.’ এই ছোট বাক্যেই একটি সম্পূর্ণ গল্পের ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে। কেন বেবি শুজ বিক্রি করা হচ্ছে? কেন সেগুলো কখনো পরা হয়নি? এই দুটি কথাই বোঝায়, শিশুটি হয়তো জন্মানোর আগেই বা জন্মের পর খুব দ্রুতই হারিয়ে গেছে। লেখক কিছুই বলেননি, কিন্তু পাঠক নিজেই পুরো অনুভূতিটা পূরণ করে নেন। হন্ডুরাসের লেখক অগাস্টো মন্টেরোসো লিখেছেন ‘সাত শব্দের এপিক’ : ‘Upon waking, the dinosaur was still there.’। এই বাক্যের শক্তি হলো, এর অনিশ্চয়তা ও রহস্য। কেউ হয়তো ভেবেছিল ডাইনোসর দেখা শুধু দুঃস্বপ্ন। কিন্তু ঘুম ভাঙতেই দেখল, সেটা বাস্তবেই আছে। এতে ভয়, বিস্ময়, অসম্ভবের বাস্তবতায় রূপান্তর সব একসঙ্গে ঘিরে ধরে পাঠককে। চীনা সাহিত্যে অণুগল্পকে বলা হয় স্মোক-লং ফিকশন। একটি সিগারেট শেষ হওয়ার আগেই যার পাঠ শেষ হয়। অণুগল্পের ভিতরে লুকিয়ে থাকে এক সুপ্ত আগ্নেয়গিরি। যার শেষ শব্দটি উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পাঠকের মনে ঘটে বিস্ময়, বিস্ফোরণ। গল্প শেষ হয় কিন্তু তার রেশ রয়ে যায় মনে।
শিরোনাম
- ভেনেজুয়েলার সঙ্গে জড়িত ৬ জাহাজের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
- গণভোটের বিষয়ে ইসির প্রজ্ঞাপন
- ৩০০ আসনে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দিয়ে ইসির প্রজ্ঞাপন
- মগবাজার, মৌচাক ও মোহাম্মদপুরে ককটেল বিস্ফোরণ
- মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা আজ, কেন্দ্রের গেট বন্ধ হবে সাড়ে ৯টায়
- খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সর্বশেষ অবস্থা জানাল মেডিকেল বোর্ড
- আমরা এখনো সিরিয়াস না হলে দেশের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হবে: তারেক রহমান
- যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক পেছাল
- মাদকের টাকার জন্য নিজের ঘরে আগুন দিল যুবক
- তানজানিয়ায় নির্বাচনী সহিংসতা, দুই হাজারের বেশি নিহত
- লালবাগে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন
- এশিয়া কাপের হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হাকিম
- মাদারীপুরে আন্তঃকলেজ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন
- জবিতে তিন দফা দাবিতে ভিসি ভবন ঘেরাওয়ের হুশিয়ারি
- তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে খেলাফত মজলিস
- সিরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ অনিবার্য: ইসরায়েলি মন্ত্রী
- ভেনেজুয়েলার ন্যাশনাল গার্ড মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে: জাতিসংঘ
- জাতি একটি ভালো নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে: দুলু
- রেকর্ড ৯০১ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা ব্যয় বিল পাস যুক্তরাষ্ট্রের
- মাইজভাণ্ডারী যুব ফোরামের উদ্যোগে ‘ক্যারিয়ার গাইডেন্স’ সেমিনার