শীতের রাতের শেষ প্রহরে, ভোরের ঠিক আগের স্তব্ধতায় নদীয়া জেলার নবদ্বীপ শহর ঘুমিয়ে ছিল। ঠিক সেই সময় রেলওয়ে কর্মীদের কলোনির একটি বাথরুমের সামনে ঠান্ডা মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেল এক নবজাতককে।
জন্মের রক্ত এখনো শুকায়নি, শরীরে কোনো কাপড় নেই, কাছাকাছি কেউও নেই। কিন্তু সে পুরোপুরি একা ছিল না—তাকে ঘিরে ছিল কয়েকটি কুকুর, একেবারে নিখুঁত বৃত্ত তৈরি করে নীরবে পাহারা দিচ্ছিল তারা।
প্রতিদিন যাদের লোকজন তাড়ায়, সেই বেওয়ারিশ কুকুরগুলো সেদিন ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। কোনো ঘেউঘেউ নেই, হৈচৈ নেই—শুধু সতর্ক দৃষ্টি আর নিঃশব্দ প্রহরা। স্থানীয়রা জানান, রাতভর কুকুরগুলো কাউকেই শিশুটির কাছে যেতে দেয়নি। ভোরের আলো ফুটলে তারা আস্তে আস্তে সরে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা শুক্লা মণ্ডল বলেন, “ঘুম ভেঙে যা দেখেছিলাম, এখনও শরীর কেঁপে ওঠে। কুকুরগুলো রাগী ছিল না, যেন বুঝতে পারছিল বাচ্চাটার বাঁচার জন্য লড়াই চলছে।” আরেক বাসিন্দা সুভাষ পাল জানান, ভোরে তিনি ক্ষীণ কান্না শুনেছিলেন। “ভাবলাম কোনো বাড়িতে অসুস্থ বাচ্চা আছে। কখনো কল্পনাও করিনি বাইরে মাটিতে একটি শিশু পড়ে আছে আর চারদিকে কুকুরেরা পাহারা দিচ্ছে,” তিনি বলেন।
ধীরে ধীরে এগিয়ে এলে কুকুরগুলো তাদের বৃত্ত শিথিল করে। শুক্লা নিজের ওড়না দিয়ে শিশুটিকে জড়িয়ে ধরেন এবং প্রতিবেশীদের ডাকেন। পরে শিশুটিকে প্রথমে মহেশগঞ্জ হাসপাতালে, এরপর কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।
চিকিৎসকেরা জানান, নবজাতকের শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। মাথার রক্ত জন্মদাগ থেকেই হওয়া সম্ভব। সব মিলিয়ে ধারণা করা হচ্ছে, জন্মের কয়েক মিনিট পরই শিশুটিকে ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছিল।
নবদ্বীপ থানার পুলিশ ও চাইল্ড হেল্প কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি তদন্ত শুরু করেছে। শিশুটির দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষার জন্যও প্রক্রিয়া চলছে। তবে প্রশাসনিক তৎপরতার বাইরেও মানুষের মনে বেশি জায়গা করে নিয়েছে সেই রাতের দৃশ্য—যে মানুষ নিষ্ঠুরভাবে শিশুটিকে ফেলে গেছে, সেই অবহেলিত কুকুরগুলোই দেখিয়েছে অদ্ভুত এক মানবিকতা।
স্থানীয় এক রেলকর্মী বলেন, “যাদের নিয়ে আমরা অভিযোগ করি, তারা-ই মানুষের চেয়ে বেশি মানবতা দেখিয়েছে।”
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
বিডি প্রতিদিন/আশিক