বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন শুধু পরিবেশে নয়, মানুষের পারিবারিক সিদ্ধান্তেও পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ এখন সন্তান নেওয়ার বিষয়ে অনিশ্চিত। কারণ হিসেবে তারা বলছে দ্রুত পরিবর্তিত জলবায়ু, চরম আবহাওয়া ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পরিবেশগত ঝুঁকি।
দ্য ল্যানসেট পত্রিকার ২০২৪ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সী মার্কিন তরুণদের মধ্যে বেশিরভাগই জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ‘অত্যন্ত উদ্বিগ্ন’। তাদের ৫২ শতাংশ জানায়, এই উদ্বেগের কারণেই তারা সন্তান নেওয়ার বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত। একইভাবে, পিউ রিসার্চ সেন্টার–এর এক জরিপে বলা হয়, ৫০ বছরের নিচের নিঃসন্তান প্রাপ্তবয়স্করা ৫০ বছরের ঊর্ধ্বদের তুলনায় চার গুণ বেশি জলবায়ুকে সন্তান না নেওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
আরও একটি গবেষণায়, যা প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস–এ প্রকাশিত, দেখা গেছে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন তাদের সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
কারণ ও প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, সন্তান জন্মদান পরিবেশের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। পপুলেশন ব্যালান্স নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক নন্দিতা বাজাজ বলেন, অন্যান্য সব কাজের তুলনায় সন্তান নেওয়ার ফলে কার্বন নিঃসরণ বহুগুণে বাড়ে। কারণ সন্তান জন্মানোর পর তার জীবনজুড়ে একটি নির্দিষ্ট কার্বন ফুটপ্রিন্ট (পরিবেশে প্রভাব) তৈরি হয়, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বহমান থাকে।
জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ো এথিকস-এর অধ্যাপক ট্রাভিস রিডার বলেন, বড় ঘর, গাড়ি বা শিশুপণ্য ব্যবহারের মতো কাজগুলো ছাড়াও সন্তান জন্ম দেওয়ার ফলে ‘কার্বন উত্তরাধিকার’ সৃষ্টি হয়, যা পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিক গড়পড়তায় ঘানার একজন নাগরিকের তুলনায় ১২ গুণ বেশি কার্বন নিঃসরণ করে। ফলে ধনী দেশের মানুষের সন্তান নেওয়া মানে ভবিষ্যতের কার্বন চাপ আরও বাড়ানো।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সংবেদনশীল বিষয়কে পরিবার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করা এখনো কঠিন। কারণ সন্তান নেওয়ার বিষয়টি অনেকের কাছে ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে ইতিবাচক ঘটনা। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শুধু আবহাওয়া বা কৃষিক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি মানুষের জীবনযাত্রা, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবনমানেও সরাসরি প্রভাব ফেলছে। গবেষকেরা সতর্ক করেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে, ভবিষ্যতে আরও বেশি মানুষ সন্তান নেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে—যা সমাজে জনসংখ্যা ভারসাম্যের ওপরও প্রভাব ফেলবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল