পঞ্চদশ সংশোধনী আপিল বিভাগ বাতিল করলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গভাবে সংবিধানে ফিরে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন ড. বদিউল আলমসহ চারজনের আইনজীবী ড. শরীফ ভূইয়া। হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের তৃতীয় দিনের শুনানিতে তিনি এই মন্তব্য করেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চে তৃতীয় দিনের শুনানি শেষ হয়। আজ ফের শুনানির জন্য দিন ধার্য রেখেছেন আপিল বিভাগ।
এদিন ড. বদিউল আলমসহ চারজনের আইনজীবী ড. শরীফ ভূইয়া শুনানি সম্পন্ন করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা হাই কোর্টে পুরো সংশোধনী বাতিল চেয়েছিলাম। হাই কোর্ট কিছু কিছু অংশ বাতিল করেছেন। বাকিটা সংসদের বিবেচনার জন্য রেখেছেন। আমরা বলেছি হাই কোর্টের এই অ্যাপ্রোচ ভুল ছিল আইনগতভাবে। এটা সংশোধন করে আপিল বিভাগ হাই কোর্টের রায় বাতিল এবং পঞ্চদশ সংশোধনীকে পূর্ণাঙ্গ বাতিল করা উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনী আপিল বিভাগ বাতিল করলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গভাবে সংবিধানে ফিরে আসবে। আমাদের শুনানি আজকে শেষ করেছি। আরও দুইজন আপিলকারী আছেন। আরও কয়েকজন পক্ষভুক্ত আছেন। তাদের শুনানি শেষে হয়তো আমরা কিছু জবাব দিতে পারি।’
এর আগে ১৩ নভেম্বর হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দেন আপিল বিভাগ। ২০১১ সালের ৩০ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালের ৩ জুলাই এটির অনুমোদন দেন। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনসংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়; সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়।
অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধানও যুক্ত করা হয়। আগে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার বিধান থাকলেও, ওই সংশোধনীতে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিষয়টি সংযোজন করা হয়। এই সংশোধনী বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে রিট করেছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। গত বছরের ১৯ আগস্ট হাই কোর্ট রুল জারি করেন। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। পরে এই রুল সমর্থন করে সহায়তাকারী (ইন্টারভেনার) হিসেবে যুক্ত হন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণফোরাম, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা। তাদের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এ ছাড়া নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনও রিট করেন। রুলের শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর রায় দেন হাই কোর্ট। রায়ে পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল করা হয়।