রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক অগ্রণী, জনতা, বেসিক ও রূপালী ব্যাংক প্রদত্ত মূলধন পুনরুদ্ধার কর্মপরিকল্পনাকে ‘অবাস্তব ও অতি-উচ্চাকাক্সক্ষী’ বলে বাতিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার কোটি টাকা, যা ব্যাংকিং খাতের জন্য বড় ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বেসিক ব্যাংকের বর্তমান মূলধন ঘাটতি ৮,৬২১ কোটি টাকা। ২০২২, ২০২৩, ২০২৪ প্রতিটি বছরেই নিট লোকসান হয়েছে। পাঁচ বছরে ঘাটতি কমানোর লক্ষ্য ৫,৩৬৪ কোটি টাকা। নীতিনির্ধারকরা বলছেন, নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর গ্রাহকের আস্থা কিছুটা ফিরেছে, তবে ধারাবাহিক লোকসান পরিস্থিতিতে মূলধন পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং।
জনতা ব্যাংক জানিয়েছে বর্তমান মূলধন ঘাটতি ১০,৭০০ কোটি টাকা। ২০২৯ সালে ঘাটতি বেড়ে হবে ২০,৬০০ কোটি। প্রভিশন ঘাটতি কিছুটা কমানোর লক্ষ্য থাকলেও ব্যাংকটি ২০২৪ সালে ৩,০৭১ কোটি ও চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে আরও ৩,০০০ কোটি টাকার লোকসান করেছে। রূপালী ব্যাংকে ঘাটতি ৩,৯৭০ কোটি টাকা। ২০২৯ সালের মধ্যে কমানোর লক্ষ্য ২,৯৯১ কোটি। গত তিন বছরে ৮৩ কোটি টাকার মুনাফা হওয়ায় রূপালীর পরিকল্পনা তুলনামূলক বাস্তবসম্মত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সোনালী ব্যাংকের ২০২৯ সালে মূলধন উদ্বৃত্ত ৫,৮৪২ কোটি টাকা করার লক্ষ্য জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। বিডিবিএল উদ্বৃত্ত বাড়িয়ে ৩৯৭ কোটি টাকায় নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। উভয় ব্যাংকই প্রভিশন ফরবেয়ারেন্স সুবিধার আওতায় রয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংকের ন্যূনতম মূলধন দরকার ৯,৪৪৪ কোটি টাকা, বিদ্যমান মূলধন ১,৭৫২ কোটি, ঘাটতি ৭,৬৯২ কোটি টাকা। ব্যাংকটি ২০২৫-২০২৯ সালের মধ্যে মূলধন ঘাটতি কমানোর যে লক্ষ্য দেখিয়েছে ২০২৫ সালেই ৩,১৪০ কোটি টাকা কমানোর পরিকল্পনা তা ব্যাংকারদের মতে একেবারেই ‘অবাস্তব’। প্রভিশন ঘাটতি ১২,৭৯০ কোটি টাকা থেকে ২০২৯ সালে শূন্যে নামিয়ে আনার যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাও বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে বিশেষ টিম, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি, জামানত বিক্রি, ওয়ানটাইম সেটেলমেন্ট (ওটিএস), সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন, টিয়ার-১ ও টিয়ার-২ বন্ড ইস্যু, অকার্যকর শাখা বন্ধ ও ডিজিটাল সেবা বাড়ানো দরকার। এসব সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ঘাটতি কমানো সম্ভব নয়।
সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের জুন শেষে দেশের ব্যাংকগুলোর মোট মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা, যেখানে মার্চ শেষে ছিল ১ লাখ ১০ হাজার কোটি। ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ২৪টি ব্যর্থ হয়েছে বাধ্যতামূলক ন্যূনতম মূলধন ধরে রাখতে যার মধ্যে ৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক, ২টি বিশেষায়িত ব্যাংক, ১৮টি বেসরকারি ব্যাংক।