ভারতের গোয়ার আরপোরা এলাকায় ‘বার্চ বাই রোমিও লেন’ নামের একটি অবৈধ নাইটক্লাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাত গভীরের এই ঘটনায় নিহতদের মধ্যে চারজন পর্যটক, ১৪ জন ক্লাবকর্মী ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আগুন লাগার পর এটি কীভাবে এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল, কেন এত প্রাণহানি হলো? এসব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ক্লাবটির বৈধতা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার গুরুতর ত্রুটি নিয়েও তদন্তকারীদের সমালোচনা শুরু হয়েছে।
ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, মধ্যরাতের পর আগুনের সূত্রপাত হয়। গোয়া পুলিশপ্রধান অলোক কুমার প্রথমে বলেন, একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকেই আগুন লাগে। তবে এই বক্তব্য প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনার সঙ্গে মেলে না। অনেকের দাবি, আগুন শুরু হয় প্রথম তলায়, যেখানে তখন প্রায় ১০০ জন পর্যটক নাচছিলেন।
হায়দরাবাদ থেকে আসা পর্যটক ফাতিমা শেখ জানান, আগুনের শিখা উঠতেই চারদিকে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। বাইরে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, কারণ পুরো কাঠামো মুহূর্তে জ্বলে ওঠে। তদন্ত এখনও শেষ না হওয়ায় আগুন লাগার কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত নয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্লাবের প্রবেশ ও প্রস্থান পথ ছিল খুবই সরু। আগুন ছড়াতেই অনেকে নিচতলার রান্নাঘর ও বেজমেন্টের দিকে ছুটে যান এবং সেখানেই আটকে পড়েন। অধিকাংশের মৃত্যু হয়েছে শ্বাসরোধ হয়ে। প্রথমে মৃতের সংখ্যা ২৩ বলা হলেও পরে তা বেড়ে ২৫ হয়।
গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত পিটিআইকে জানান, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, আগুনের শুরু ওপরের তলা থেকে। দরজা সংকীর্ণ হওয়ায় কয়েকজন বের হতে পারলেও আগুন তীব্র হওয়ার পর অধিকাংশই ক্লাবের ভেতরে আটকা পড়ে যান। যারা বেজমেন্টে নেমেছিলেন, তাদের বেশিরভাগই পর্যাপ্ত বাতাস না পেয়ে দমবন্ধ হয়ে মারা যান।
নাইটক্লাবটি ছিল ব্যাকওয়াটারের ভেতরে, যেখানে যাওয়ার জন্য ছিল মাত্র একটি সরু পথ। ফলে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৪০০ মিটার দূরে থামতে বাধ্য হয়, যা উদ্ধারকাজকে উল্লেখযোগ্যভাবে বিলম্বিত করে।
ফাতিমা শেখ আরও জানান, ক্লাবের ভেতরের সাময়িক কাঠামো পামপাতা দিয়ে তৈরি ছিল—যা সহজেই আগুন ধরে যায় এবং মুহূর্তের মধ্যে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে।
আরপোরা–নাগোয়া পঞ্চায়েতের প্রধান রোশন রেডকার জানান, ক্লাবটি সম্পূর্ণ অবৈধ ছিল। কোনো লাইসেন্স ছাড়াই নির্মাণ করা হয় এবং তদন্ত শেষে ক্লাবটি ভাঙার নোটিশও জারি হয়েছিল, যা পরে আপিলের কারণে স্থগিত হয়।
এ ছাড়া ক্লাবটির পরিচালক সৌরভ লুথরা এবং জমির মালিক–সহযোগীদের মধ্যে বিরোধ ছিল বলে জানা যায়। ক্লাবটি পরিবেশ–সংবেদনশীল লবণাক্ত জমিতে এবং উপকূলীয় নিয়ন্ত্রণ অঞ্চলের ভেতরে নির্মিত। /যেখানে নির্মাণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এরপরও এতদিন ধরে কীভাবে এই অবৈধ ক্লাব পরিচালিত হলো, তা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
বিডি প্রতিদিন/আশিক