তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগরকে ঘিরে চীনের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাত এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সামরিক সক্ষমতা আরও জোরদারের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শুক্রবার প্রকাশিত তার প্রশাসনের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলপত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম সংবেদনশীল ইস্যু তাইওয়ান। কৌশলপত্রে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো স্পষ্টভাবে বলেছে, সামরিক প্রাধান্য বজায় রেখে তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হতে পারে এমন যেকোনো সম্ভাব্য সংঘাত এড়ানোই যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান অগ্রাধিকার।
কৌশলপত্র প্রকাশের সময়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এর ঠিক আগে পূর্ব এশিয়ার জলসীমায় নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক শক্তি প্রদর্শন করেছে চীন। বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রদর্শনের লক্ষ্য মূলত গণতান্ত্রিক তাইওয়ান ও নিরাপত্তা জোট জাপানের ওপর চাপ বাড়ানো।
চীন তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে এবং প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি কখনো অস্বীকার করেনি। পাশাপাশি দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় পুরো এলাকা নিজেদের দাবি করে দেশটি। এর জেরে ছোট ছোট প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে চীনের বিরোধ বহুদিনের।
ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রই দ্বীপটির সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সমর্থক ও অস্ত্রসরবরাহকারী। মার্কিন আইনে রয়েছে—তাইওয়ানের আত্মরক্ষায় সহায়তা দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা। এই কারণে বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক উত্তপ্ত।
ট্রাম্পের আগের মেয়াদে ২০১৭ সালের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলপত্রে মাত্র এক বাক্যে তিনবার তাইওয়ানের উল্লেখ ছিল। কিন্তু নতুন কৌশলপত্রে তিনটি অনুচ্ছেদজুড়ে আটবার তাইওয়ান প্রসঙ্গ এসেছে। নথিতে বলা হয়েছে—তাইওয়ান বাণিজ্যসমৃদ্ধ জলপথে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ, পাশাপাশি বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে এর আধিপত্য তাইওয়ান নিয়ে আন্তর্জাতিক মনোযোগ বাড়িয়েছে।
নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে— জাপান থেকে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত দ্বীপমালা জুড়ে যুক্তরাষ্ট্র নতুন সামরিক সক্ষমতা তৈরি করবে। এর লক্ষ্য যেকোনো আগ্রাসন ঠেকানো। তবে যুক্তরাষ্ট্র একা সবকিছু করতে পারবে না; মিত্রদের এগিয়ে আসা, ব্যয় বাড়ানো এবং যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বড় ভূমিকা নেওয়া জরুরি।
তাইওয়ান নিয়ে উত্তেজনা বাড়লে ট্রাম্প কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন, সে বিষয়ে এখনো কিছু বলেননি তিনি। তবে তার পূর্বসূরি জো বাইডেন বহুবার বলেছিলেন, চীন আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে রক্ষা করবে।
ট্রাম্প আগামী এপ্রিল মাসে বেইজিং সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। দুই দেশের নেতাদের এই বৈঠকে বাণিজ্যিক উত্তেজনা কমানোই হবে মূল আলোচ্য বিষয়। এ কারণে টোকিও থেকে ম্যানিলা পর্যন্ত অনেকেই আশঙ্কা করছেন—চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ান ও আঞ্চলিক মিত্রদের প্রতি সমর্থন কমিয়ে দিতে পারে।
গত মাসে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি সংসদে জানান, তাইওয়ানে চীনের হামলা জাপানের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেললে, জাপান সামরিক প্রতিক্রিয়া জানাবে।
এমন মন্তব্যে বেইজিং তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
চীন–যুক্তরাষ্ট্র–তাইওয়ান উত্তেজনার এমন প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নিরাপত্তা কৌশলপত্রকে এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে বড় সংকেত হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।
সূত্র: রয়টার্স
বিডি-প্রতিদিন/সুজন