কয়েক দশকের পর প্রথমবারের মতো লেবানন ও ইসরায়েলি এর বেসামরিক প্রতিনিধিরা সরাসরি কূটনৈতিক আলোচনায় বসেছে। বুধবার (৩ নভেম্বর) ইসরায়েল সীমান্তের কাছে লেবাননের নাকোরায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সূত্রটিটি জানায়, বৈঠকটি ‘চলমান’। হিজবুল্লাহর সাথে যুদ্ধে বছরের পর বছর ধরে চলমান যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে অংশ নিয়েছেন লেবাননের মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি মরগান ওর্টাগাস।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লেবাননের প্রতিনিধিত্ব করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত সাইমন কারাম। আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য উপস্থিত আছেন ইসরায়েলি কর্মকর্তা জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উরি রেসনিক।
এদিন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় নিশ্চিত করেছে, প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান গিল রেইচকে লেবাননে সরকারী ও অর্থনৈতিক কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করার জন্য একজন প্রতিনিধি পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এটিকে ‘ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার ভিত্তি তৈরির প্রাথমিক প্রচেষ্টা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
লেবানন এর আগে নিশ্চিত করেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধের পর তারা সামরিক প্রতিনিধির পরিবর্তে নিজস্ব বেসামরিক প্রতিনিধি পাঠাতে সম্মত হয়েছে এবং ওয়াশিংটন নেতানিয়াহুকেও তা করার জন্য চাপ দিয়েছিল বলে জানা গেছে।
একই দিন লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউনের দপ্তরও জানায়, তাদের পক্ষের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন সাবেক রাষ্ট্রদূত সিমন কারাম। তারা আরও জানায়, ইসরায়েলও তাদের প্রতিনিধিদলে ‘একজন অ-সামরিক সদস্য’ অন্তর্ভুক্ত করছে বলে লেবাননকে জানানো হয়েছে।
জেরুজালেম এবং বৈরুত সর্বশেষ ২০২২ সালে নাকোরায় একটি সমুদ্র সীমানা চূড়ান্ত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তি নিয়ে পরোক্ষ আলোচনা হয়েছিল।
আজকের বৈঠকটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন ইসরায়েলি এবং মার্কিন কর্মকর্তারা হিজবুল্লাহ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে নিরস্ত্র করার ক্ষেত্রে বড় অভিযান পরিচালনা করবেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে লেবাননে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। আইডিএফ হিজবুল্লাহকে ২০২৪ সালের নভেম্বরে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করেছে। সেই সাথে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তুতে তাদের হামলা তীব্র করেছে। এতে মাসে বৈরুতে এক বিরল হামলায় তাদের প্রধান কর্মী নিহত হন।
যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুসারে, হিজবুল্লাহকে দক্ষিণ লেবাননকে ছেড়ে যেতে বলা হয়েছিল। এ জন্য ইসরায়েলকে ৬০ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। আইডিএফ পরে লেবাননের সীমান্তবর্তী পাঁচটি পোস্ট ছাড়া বাকি সব পোস্ট থেকে সরে আসে। কারণ দেশটির দক্ষিণে হিজবুল্লাহর অবকাঠামো অসম্পূর্ণভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছে।
সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির মধ্যে শত শত বিমান হামলার পাশাপাশি, স্থলে সেনারা দক্ষিণ লেবাননে ১ হাজার ২০০টির বেশি অভিযান এবং অন্যান্য ছোট ছোট অভিযান পরিচালনা করেছে।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, অভিযানের মধ্যে সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস করা, হিজবুল্লাহর গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করা এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সক্ষমতা নষ্ট করার জন্য অন্যান্য কার্যকলাপ অন্তর্ভুক্ত ছিল। অভিযানের সময়, সেনারা অসংখ্য অস্ত্র, রকেট নিক্ষেপের স্থান এবং হিজবুল্লাহর ব্যবহৃত অন্যান্য ভবন খুঁজে পেয়েছে।
২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর শুরু হয় ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহর সংঘাত। ওইদিন ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে হামাসের সমর্থনে ইসরায়েলে হামলা শুরু করে হিজবুল্লাহ। নানা ঘটনার পর ইসরায়েল গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে একটি তীব্র বিমান অভিযান এবং স্থল আক্রমণ শুরু করে।
লেবানন কর্তৃপক্ষ বলছে, যুদ্ধে ৩ হাজার জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। আরও ১০ লাখ লোক হিজবুল্লাহর শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে এমন এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/কামাল