একটি প্যারেন্ট কোম্পানির অধীনে থাকা বিভিন্ন ব্র্যান্ড, সাব-ব্র্যান্ড, প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কীভাবে সাজানো থাকবে এবং তারা কোন মার্কেট সেগমেন্টকে লক্ষ্য করে কাজ করবে এই পুরো কাঠামোটিই ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার। সহজভাবে বললে, একই পরিবারের সদস্যরা কোন ভূমিকা পালন করবে এবং কীভাবে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকবে, সেটারই করপোরেট সংস্করণ হচ্ছে ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার।
মার্জার এবং অ্যাকুইজিশনের ফলে কোম্পানিগুলো দ্রুত বড় হচ্ছে। এর সঙ্গে সঙ্গে তাদের ব্র্যান্ড সংখ্যাও বাড়ছে। যদি ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার পরিষ্কারভাবে সাজানো না থাকে, তাহলে গ্রাহক যেমন বিভ্রান্ত হবে, তেমনি ম্যানেজমেন্টকেও নানা জটিলতার মুখোমুখি হতে হবে। একটি পরিকল্পিত ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার কাস্টমারদের কাছে কোম্পানির পজিটিভ সিগন্যাল পাঠায় এবং অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনাও সহজ করে তোলে।
বিশ্বব্যাপী মোট তিনটি মডেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। প্রথমত দ্য ব্র্যান্ডেড হাউস। দ্বিতীয়ত দ্য হাউস অব ব্র্যান্ডস। তৃতীয়ত হাইব্রিড ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার। প্রতিটি মডেলেরই নিজস্ব সুবিধা, সীমাবদ্ধতা এবং প্রয়োগক্ষেত্র রয়েছে। এই মডেলে বিভিন্ন ব্র্যান্ড প্যারেন্ট কোম্পানি একই নাম বা লোগো ব্যবহার করে। যেমন- ফেডএক্স এক্সপ্রেস, ফেডএক্স ফ্রেইট, ফেডএক্স লজিস্টিকস সবকিছুই ফেডএক্স নামের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এখানে প্যারেন্ট কোম্পানির সুনামই সব ব্র্যান্ডের মূল শক্তি।
এর সুবিধা হলো মার্কেটিং খরচ কমে যায়, কাস্টমার কনফিউশন কম হয় ও প্যারেন্ট কোম্পানির ইকুইটি সব ব্র্যান্ডকে সাহায্য করে। আবার কিছু অসুবিধাও আছে যেমন- একটি ব্র্যান্ডের সমস্যায় পুরো কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অনেক বেশি সার্ভিস থাকলে গ্রাহক মূল আইডেনটিটি বুঝে উঠতে পারে না। এখানে ব্র্যান্ডগুলো সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকে। প্যারেন্ট কোম্পানির নাম সামনে আসে না। প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বেলের অধীনে প্যামপারস, এরিয়েল, ওরাল-বি ইত্যাদি ব্র্যান্ডের উদাহরণ। সুবিধা হলো- ভিন্ন ভিন্ন মার্কেট সেগমেন্টে সহজে প্রচারণা, ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রিস্ক ট্রান্সফার হয় না এবং প্রতিযোগিতায় নামার সুযোগ বেশি।
অসুবিধা হলো- প্রতিটি ব্র্যান্ডকে সম্পূর্ণ নতুন করে গড়ে তুলতে হয়। মার্কেটিং খরচ অনেক বেশি। কাস্টমারের কাছে প্যারেন্ট কোম্পানির ভ্যালু অস্পষ্ট থাকে। হাইব্রিড মডেল এটি আগের দুই মডেলের মিশ্রণ। টয়োটার মতো কোম্পানিগুলো এ মডেল ব্যবহার করে। তাদের অধীনে আছে লেক্সাস, স্কিওন, হিনো। যেগুলো একে অপরের থেকে আলাদা হলেও টয়োটার নীতির অধীনেই পরিচালিত হয়।
এতে সুবিধা হলো- দু’ট মডেলের সুবিধা পাওয়া যায়, সাব-ব্র্যান্ড তৈরি ও বিস্তার সহজ হয়। অসুবিধা হলো- স্ট্র্যাটেজি ভুল হলে কনফিউশন তৈরি হতে পারে এবং পরিচালনার জটিলতা বাড়ে। পরিকল্পিত ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার ব্যবসার সুবিধা হলো- মার্কেটিং খরচ কমে যায়। প্রতিটি ব্র্যান্ডের পজিশন স্পষ্ট হয়। মার্কেট সেগমেন্টকে টার্গেট করা সহজ হয়। ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে পারস্পরিক গ্রোথ সম্পর্ক তৈরি হয়। কাস্টমারদের জন্য পরিষ্কার ধারণা তৈরি হয়।
তিন ধাপে ব্যবসায়ীরা নিজেদের জন্য সঠিক ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার তৈরি করতে পারেন। যেমন- রিসার্চ : টার্গেট কাস্টমার, লয়ালটি, ব্র্যান্ড পারসেপশন সবকিছু নিয়ে গভীর গবেষণা করতে হবে। স্ট্র্যাটেজি তৈরি : কোন মডেলটি কাজ করবে তা ভিজ্যুয়ালভাবে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। লক্ষ্য থাকবে গ্রাহকের মনে কোনো বিভ্রান্তি যেন না থাকে। মাইগ্রেশন : পুরোনো কাঠামো থেকে নতুন কাঠামোয় যেতে হবে। ব্র্যান্ডের নাম, অবস্থান, সম্পর্ক সবকিছু পুনর্গঠন করতে হবে।
ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার তৈরির সময় ভবিষ্যৎ গ্রোথ স্ট্র্যাটেজি, মার্কেট সেগমেন্ট, অর্গানাইজেশনাল কালচার, খরচ, ঝুঁকি নেওয়ার সক্ষমতা ও ব্র্যান্ড ইকুইটির বিষয়টি পরিকল্পনায় রাখতে হবে। ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার কোনো বিলাসিতা নয় এটি ব্যবসার টেকসই বৃদ্ধির অপরিহার্য কাঠামো। যারা শুরুর দিকেই সঠিক ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার সেট করতে পারে, তারা সহজেই মার্কেটকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। আর যারা এটি গুরুত্ব দেয় না, তাদের ব্যবসায় জটিলতা বাড়তেই থাকে। তাই নতুন ব্র্যান্ড তৈরি করার আগেই বা নতুন ব্র্যান্ড অধীনে নেওয়ার আগেই একটি পরিষ্কার ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার তৈরি করা উচিত। কারণ অপরিকল্পিত ব্র্যান্ড আর্কিটেকচারের কারণে করপোরেট জটিলতা অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে, যা পারতপক্ষে একটি প্যারেন্ট কোম্পানি এবং সবগুলো ব্র্যান্ড ও সাব-ব্র্যান্ডের জন্য ক্ষতিকর।