সাকিফ শামীম ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ল্যাবএইড গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যুক্ত আছেন আরও ২৫টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। তিনি একজন অর্থনীতিবিদ ও বাণিজ্য বিশ্লেষক। সামগ্রিক অর্থনীতিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রুমান আকন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : শুরুতেই জানতে চাই, আপনার ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু হয়েছিল কীভাবে?
সাকিফ শামীম : আমি ল্যাবএইড গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক। ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার, ল্যাবএইড চিটাগাং, ল্যাবএইড মেডিকেল কলেজ, ল্যাবএইড পূর্বাচলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল এবং স্পেশালাইজড হাসপাতালের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছি। মূলত ল্যাবএইড গ্রুপের যাত্রা আশির দশকে আমার বাবা এবং আমাদের গ্রুপের স্বপ্নদ্রষ্টা ড. এ এম শামীমের হাত ধরে। আমি তাঁর বড় ছেলে। এখান থেকেই আসলে আমাদের ব্যবসায়িক জীবন শুরু। ১৭ বছর ধরে আমি ব্যবসা করছি। ল্যাবএইড ফার্মাসিউটিক্যালসে এক্সিকিউটিভ এবং বিজনেস ডেভেলপমেন্ট থেকে আমার কর্মযাত্রা শুরু। এরপর ফ্যাক্টরিতে প্রোডাকশন আর মার্কেটিংয়ের দায়িত্বে ছিলাম। এ ছাড়াও আমি ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালে এসেছিলাম এজিএম হিসেবে। এরপর ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে কাজ করেছি। তারপর আমি কো-ফাউন্ডার হিসেবে ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল এবং ল্যাবএইড চিটাগং হাসপাতাল দাঁড় করিয়েছি। আমরা পূর্বাচলের ৩০০ ফিটে ৫০০ বেডের একটি মেডিকেল কলেজ করেছি এবং পূর্বাচলে আরও একটি ৭৫০ বেডের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল করছি, সারা দেশে ৩০টা স্যাটেলাইট সেন্টার করার পরিকল্পনাও রয়েছে। পাশাপাশি ইন্স্যুরেন্সের ব্যবসায় আমি আছি। আমাদের ল্যাবএইড ইন্স্যুটেক কোম্পানি লিমিটেড রয়েছে। যেখানে হেলথ ইন্স্যুরেন্স এবং অন্যান্য নন লাইফ ইন্স্যুরেন্স নিয়ে কাজ করি। পাশাপাশি আমি ল্যাবএইড এআইর প্রতিষ্ঠাতা। এখানে রোগীর সেকেন্ড অপিনিয়ন নিয়ে কাজ করছি। এ ছাড়াও বিভিন্ন মেডিকেলের সমস্যার সমাধান নিয়ে কাজ করছি আমরা। শুধু তাই নয়, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এবং মিক্সড রিয়েলিটি নিয়ে আমাদের ভার্চুকেয়ার; এটার প্রতিষ্ঠাতাও আমি। আমি মোটামুটি ২৫টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত আছি।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বাড়াতে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি অপরিহার্য। গত এক বছরে এক্ষেত্রে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছে কি?
সাকিফ শামীম : গত এক বছরে আমরা যেরকম বিনিয়োগ আশা করেছিলাম, সেরকম বিনিয়োগ পাচ্ছি না। আমরা বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছি। এর প্রধান কারণ হিসেবে আমি বলব- রাজনৈতিক অস্থিরতা। আমাদের দেশে এটার বড় অভাব রয়েছে। আমরা যারা ব্যবসা করি, সব সময়ই চাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। এটি সময়োপযোগী দাবি। আমরা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কথা বলি, বিশেষ করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বীডা) বলছে- অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। আসল কথা হলো- এগুলো এখনো চুক্তিতেই আছে। কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগ অনেক লম্বা সময়ের ব্যাপার।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি, রিজার্ভ সংকট ও টাকার অবমূল্যায়ন- এ তিনটি উপাদান ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক বিনিয়োগকে কীভাবে প্রভাবিত করবে?
সাকিফ শামীম : বৈদেশিক মুদ্রা কিংবা ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এটা ব্যবসা খাতে খুবই প্রভাব ফেলছে। আমার মনে আছে, আমরা একসময় এলসি করেছি মাত্র ৮০ টাকায়। এটা হঠাৎ করেই দুই দিনের ব্যবধানে দেখলাম ১২০ টাকা হয়েছে। তখন আমাদের অনেক এলসি ইউপাসে ছিল। এক রাতেই আমাদের কয়েক কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। এমন অনেক ব্যবসায়ী আছেন, যাদের শত কোটি টাকা পর্যন্ত লোকসান হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার বাজারের যে অস্থিরতা এটা অনেক কিছুর সঙ্গে জড়িত।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং উচ্চ সুদের হার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ভবিষ্যতে কী ধরনের সংকট তৈরি করতে পারে?
সাকিফ শামীম : দেশে বর্তমানে আড়াই কোটি মানুষ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছে। এটি অর্থনীতির অনেক বড় একটা শক্তি। আমরা যদি বাইরের দেশগুলোকে দেখি, সেখানে উদ্যোক্তাদের জন্য স্কিম সুবিধা ও প্রণোদনা থাকে। তবে আমাদের দেশে হয়ে গেছে উল্টো। দেশে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তারা। তাঁদের ক্ষেত্রে সুদের হার অনেক বেশি। কারণ ব্যাংকাররা মনে করেন, তাঁদের ব্যবসা অনেক ভালো। ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে ঋণের বিপরীতে যে সুদহার ১৩-১৪ শতাংশ ছিল, বর্তমানে সেটি ১৭ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক এসব ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তাকে সহযোগিতা করে। তবে ৯৫ শতাংশ ব্যাংক এসব উদ্যোক্তাকে সহযোগিতা করছে না।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির মধ্যে যে অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্ব, তা সমাধানে কী করা যেতে পারে?
সাকিফ শামীম : আমাদের মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। আমরা যদি মূল্যস্ফীতি ৫-৬ শতাংশের ঘরে রাখতে পারি তাহলে আমাদের সুদহার ৮-৯ এ চলে আসবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন বিষয়। এটা আসলে অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। আমাদের ফিসক্যাল পলিসি, মনিটরি পলিসি, সরকারের ব্যয়-সবকিছু আসলে প্রতিটি জিনিসের সঙ্গে জড়িত। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, মূল্যস্ফীতি অবশ্যই ১০ শতাংশের নিচে থাকতে হবে। তা না হলে আমরা টিকে থাকতে পারব না।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং নীতির ধারাবাহিকতার অভাব দেশের ব্যবসায়িক অগ্রগতিতে ও বিনিয়োগকারীদের আস্থায় ঠিক কী ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে?
সাকিফ শামীম : একজন বিনিয়োগকারী যখন কোনো দেশে বিনিয়োগ করতে চায় তখন কিন্তু প্রথম প্রশ্নই করে যে, আপনাদের সরকার ইলেক্টেড না সিলেক্টেড? তারপর জিজ্ঞেস করেন সরকারের মেয়াদ কত বছর? একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী যখন দেখবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নেই, অনেক বেশি আন্দোলন হচ্ছে, দেশে নির্বাচন কবে হবে সেটা অনিশ্চিত- এমনটা হলে কোনো বিনিয়োগকারীই বিনিয়োগ করতে চাইবে না।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশের অর্থনীতিতে সংস্কার প্রায়শই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকে। কেন নীতিগুলোর বাস্তব প্রয়োগে এই ঘাটতি থেকে যায়?
সাকিফ শামীম : আমাদের দেশে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অনেক বেশি। যে কোনো কাজে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হয়। আমরা যারা ব্যবসায়ী আছি আমাদের একটি হাসপাতাল করতে হলে ২৭টি লাইসেন্সের দরকার হয়। এটা আসলে দীর্ঘমেয়াদি প্রসেস এবং হ্যাটট্রিক প্রসেস। লাইসেন্সের কাজ করতেই দেখবেন তিন থেকে চার বছর চলে যায়। এমনও হয় টাকা দিয়েও কাজ হচ্ছে না। আমার কথা হলো- যে কোনো কাজে স্পষ্ট গাইডলাইন থাকা দরকার।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশের ব্যবসায়িক খাতে বিরাজমান দুর্নীতি এবং স্বচ্ছতার ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে বাস্তবসম্মত ও কার্যকর উপায় কী হতে পারে?
সাকিফ শামীম : দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঘুষ এবং নানা সমস্যা তীব্র পর্যায়ে চলে গেছে। আমার স্পষ্ট কথা হলো- এসব ক্ষেত্রে যে কোনো রাজনৈতিক দলের কিছু কিছু পলিসি বা জিরো টলারেন্স পলিসি থাকতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট লক্ষ্য করবেন। কিন্তু আমাদের দেশে যেগুলো হচ্ছে বা বিগত সময়ে হয়েছে, তা চিন্তার বাইরে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে মধ্যম আয়ে উন্নীত হওয়ার চলমান প্রক্রিয়ায় ব্যবসায়িক সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি নানা রকমের ঝুঁকিও রয়েছে। সেগুলো মোকাবিলায় করণীয় কী?
সাকিফ শামীম : এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন আমরা অনেকবার রেফার করেছি। এখন হয়তো বা জাপান আমাদের তিন বছর সময় দিয়েছে। বাকি দেশগুলোও হয়তো সময় দেবে। কিন্তু কথা হলো- এভাবে আপনি কত বছর সময় পেছাবেন। এটার তো একটা সমাধান করতে হবে। এখানে যে আমাদের মূল সমস্যাগুলো রুলস অব অরিজিন, ট্রেড রিলেটেড ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টিস এগুলো নিয়ে আমাদের ব্যবসায়ীদের ধারণা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বাড়াতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আমরা যখন উন্নত দেশে যাব, তখন বীজ, ফার্টিলাইজার, মেডিসিন এসব পণ্যতে আমাদের ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটের টাকাটা দিতে হবে। যেমন- হেপাটাইটিস-সি মেডিসেনে আমাদের টাকা দিতে হবে। জটিল ক্যান্সারের মেডিসিনে আমাদের টাকা দিতে হবে। এ ছাড়াও বীজের ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার ব্যবহার করতে পারবেন না। এগুলোর ক্ষেত্রে আমি বলব, আমাদের সব কাজে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। দেশে নিজস্ব পণ্য তৈরি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি গবেষণা এবং ডেভেলপমেন্টে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশের শিল্পখাত এখনো রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। কিছু কিছু পণ্যের রপ্তানি বাড়লেও অধিকাংশ পণ্যই আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে পারছে না। এর মূল কারণ কী?
সাকিফ শামীম : আমরা পোশাক রপ্তানি করি ৮৫ শতাংশ। এটা আমাদের গর্বের বিষয়। পোশাক রপ্তানিতে আমরা পৃথিবীতে দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় স্থানে থাকি। দেশে রপ্তানি বহুমুখীকরণ এটা আসলে জরুরি। রপ্তানি বহুমুখীকরণ যেমন জরুরি, তেমনি দক্ষতার বড় অভাব রয়েছে- সেটাও বাড়ানো জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রপ্তানিতে পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ আনতে হলে আমাদের যেটা প্রয়োজন তা হলো- জমি লাগবে। শিল্পপ্রতিষ্ঠান করতে গেলে অনেকেই জমি পায় না। সরকারের যে রপ্তানি অঞ্চলগুলো রয়েছে সেখান থেকে আমাদের স্বল্পমূল্যে জমি ভাড়া দেওয়া হোক। আমরা যেন সেগুলো স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারি। পাশাপাশি দেশে গ্যাস, বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেশি, কিন্তু আছে গ্যাস সংকট।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : ভূ-রাজনৈতিক ইস্যু এবং আসিয়ান সংস্থার অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের প্রবেশাধিকার নিয়ে আপনার ভাবনা কী? এর কারণ ও সমাধান কী বলে আপনি মনে করেন?
সাকিফ শামীম : রপ্তানিতে বৈচিত্র্যের সঙ্গে নতুন মার্কেট এক্সপ্লোর করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ আমেরিকা আমাদের চেয়ে অনেক দূরে আছে। তারপরও দেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন, চিনি আনা হয়। এখানে মার্কেট এক্সপ্লোরের অনেক সুযোগ আছে। তবে আমি মনে করি আমাদের জন্য সহজ আসিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হওয়া। কারণ, সেখানে আড়াই থেকে তিন ট্রিলিয়ন ডলার ইকোনমি আছে। আসিয়ানে আমাদের দেশ একবার অন্তর্ভুক্ত হতে পারলে অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। যা থেকে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনারা ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স নিয়ে কাজ করছেন। যেটা বাংলাদেশে প্রথম। আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স ভবিষ্যতে কোনো মানুষের চাকরি কেড়ে নিবে কি না, আপনি কী মনে করেন?
সাকিফ শামীম : ল্যাবএইড এআই এশিয়ার মধ্যে দুটি কোম্পানির মধ্যে একটি। যা বড় ভাষা মডেল তৈরি করেছে। এআই আসলে আমাদের পরবর্তী অর্থাৎ, চতুর্থ বিপ্লব। আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের যে জোয়ারটা বইছে, আমরা যদি এটার সঙ্গে না থাকতে পারি অবশ্যই আমি বলব যে আমরা অনেক পিছিয়ে যাব। একই সঙ্গে ট্রেডিশনাল এবং কনভেনশনাল কিছু চাকরি অবশ্যই আমরা হারাব। পাশাপাশি আমি মনে করি এআই আমাদের সেই বর্ধনটা দিচ্ছে। যে কাজ করতে আগে সাত দিন সময় ব্যয় হতো, বর্তমানে সেটা করতে স্বল্পসময় লাগবে। বিশেষ করে কনটেন্ট ক্রিয়েশনের উপকারিতা বেশি।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : চিকিৎসা খাতে এআই কীভাবে ভূমিকা রাখছে এবং আপনারা কীভাবে শুরু করেছেন?
সাকিফ শামীম : চিকিৎসা খাতে এআইর ভূমিকা অনেক। ভবিষ্যতে এটি আরও বাড়বে। আমি বলব যে, হাসপাতাল উড়োজাহাজে চড়ার থেকেও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ হাসপাতালে একটা মানুষ বড় বড় রোগ থেকে সুস্থ হতে আসে। হাসপাতালে প্রায় ৩০০০ থেকে ৩৫০০ প্রসেস থাকে, অনেক ইস্যু থাকে। ধরেন এই ৩০০০ প্রসেস এখন আমরা যেভাবে করি সেখানে ভুলত্রুটি থাকে। কিন্তু যখন এআই ব্যবহার করা হবে, তখন ভুলত্রুটি থাকবে না। একটা উদাহরণ দিয়ে যদি বুঝাই, টিউমার ডিটেকশন। সফটওয়্যারে আমরা টিউমার ডিটেকশন করতে পারি। এখন ক্যান্সার পরীক্ষায় যেটা হয়, অনেক সময় ভুলত্রুটি হয়ে যায়। আপনি যখন এই রিপোর্ট এআই দিয়ে স্ক্যানিং করবেন, তখন এই ভুলত্রুটি থাকবে না।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : আমাদের দেশে টেলিমেডিসিন কেমন সাড়া পাচ্ছে?
সাকিফ শামীম : দেশে শুধু টেলিমেডিসিন দিয়ে আপনি যদি ব্যবসার কথা চিন্তা করেন, তাহলে সাড়া খুব কম। কারণ, রোগীরা মানুষের স্পর্শে চিকিৎসা সেবাকে বেশি বিশ্বাস করে। এটা স্বাভাবিক বিষয়। পৃথিবীর সব দেশেই হিউম্যান টাচে মানুষ বেশি বিশ্বস্ত। তাই টেলিমেডিসিনে যেভাবে সাড়া পাওয়ার কথা এবং কানেকটিভিটির অনেক বড় সমস্যা রয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশে প্রাইমারি হেলথ কেয়ার ডেভেলপড না। এসব কারণে টেলিমেডিসিনে সাড়া কম।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যতগুলো প্রথম সারির হাসপাতাল রয়েছে, তাদের মধ্যে আপনাদের হাসপাতাল রয়েছে। একটু জানতে চাই বিশ্বমানের চিকিৎসা দেশে সম্ভব কি না?
সাকিফ শামীম : এটা আসলে যুগোপযোগী প্রশ্ন এবং এটা সবাই জিজ্ঞেস করে- বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা সম্ভব কী? আমরা সেই সেবাই দিচ্ছি। আমাদের যে ক্যান্সার হাসপাতাল রয়েছে, এটা জয়েন্ট কমিশন ইন্টারন্যাশনাল এক্রিডিটেড। যেটা বাংলাদেশে ক্যান্সার হসপিটাল এবং সুপার স্পেশালিটি হিসেবে প্রথম। এ ছাড়াও সব হাসপাতাল হিসেবে করলে আমরা তৃতীয় অবস্থানে। প্রথমে এভারকেয়ার হাসপাতাল এবং দ্বিতীয় ইউনাইটেড হাসপাতাল।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশেই যেহেতু বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা রয়েছে, তাহলে বিদেশে কেন মানুষ যাবে?
সাকিফ শামীম : এটা আসলে দেশের চিকিৎসাসেবার প্রতি মানুষ তিক্ত হয়ে বিদেশে চিকিৎসাসেবা নিতে যান। যেমন, আমাদের ডাক্তাররা অনেক ব্যস্ত থাকেন। স্বাভাবিকভাবে ব্যস্ত থাকার কথা। যেহেতু দেশে ডাক্তারের সংখ্যা অনেক কম। এ ছাড়াও স্বাস্থ্য খাতে আমাদের আচরণের কিছু সমস্যা রয়েছে। যেহেতু আমাদের ন্যাশনাল কোয়ালিটি প্রোগ্রাম নেই কিংবা আমরা ট্রেনিংয়ে ফোকাসড না। এগুলোর কিছু কারণ থাকে। আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছে যাদের মাইন্ড সেট থাকে যে, তারা বিদেশেই চিকিৎসা নেবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আমাদের আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য।
সাকিফ শামীম : আপনাকেও ধন্যবাদ।