মাদারীপুরে এ বছর আমন ধানে হয়েছে বাম্পার ফলন। অনুকূল আবহাওয়া, সরকারি প্রণোদনা, উচ্চফলনশীল জাতের বীজ বিতরণ ও কৃষি বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে জেলার পাঁচটি উপজেলায় এখন চলছে ধান কাটার ব্যস্ততা। একসময় মৌসুমে অনাবাদি পড়ে থাকা জমিতেও এখন দোল খাচ্ছে সোনালি ধান। কৃষকদের মুখে আনন্দ আর তৃপ্তির হাসি।
জেলার মাদারীপুর সদর, রাজৈর, কালকিনি-ডাসার ও শিবচর উপজেলায় চলতি মৌসুমে ২৪ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে—যা নির্ধারিত ২২ হাজার ৬১০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ, সময়মতো বৃষ্টি ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে ফলনও প্রত্যাশার তুলনায় ভালো হয়েছে। কৃষকেরা এখন ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
মাঠের পর মাঠজুড়ে এখন ধান কাটার উৎসবের পরিবেশ। কেউ কাস্তে দিয়ে ধান কাটছেন, কেউ আঁটি বাঁধছেন, আবার কেউ মাথায় করে সেই ধান উঠোনে তুলছেন। উঠোনজুড়ে কৃষাণীরা ব্যস্ত ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজে। নতুন ধানের সুবাসে গ্রামাঞ্চলে নেমেছে উৎসবের আমেজ।
মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা গ্রামের কৃষক রজ্জাক তায়ানি বলেন, কয়েক বছর আগেও এই মৌসুমে কেউ ধানের আবাদ করত না। কৃষি বিভাগের পরামর্শে অনাবাদি জমিতে আবার ধানের আবাদ শুরু হয়েছে। এতে লাভবান হচ্ছি, সেই সঙ্গে জমিও অনাবাদি থাকছে না।
ডাসারের কৃষক তুহিন শরীফ বলেন, এই মৌসুমে খুব ভালো ধান হয়েছে। বৃষ্টি-হাওয়া সবই ছিল অনুকূলে, কোনো রোগবালাই হয়নি। ফলে ফলনও পেয়েছি ভালো। আমরা সবাই খুব খুশি।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকা এবং সময়মতো সার ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে কৃষকেরা উৎপাদন খরচের তুলনায় বেশি লাভের আশা করছেন। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত জমি পরিদর্শন ও পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের পাশে থাকার ফলে ফলন বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রহিমা খাতুন বলেন, সরকারি প্রণোদনার অংশ হিসেবে কৃষকদের উচ্চফলনশীল জাতের বীজসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ফলে এ বছর আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রোগবালাই হয়নি, ফলনও আশানুরূপ এসেছে। বাজারেও ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়মিত তদারকি ও পরামর্শের সুফল এখন মাঠে স্পষ্ট।
সার্বিকভাবে, এ মৌসুমে মাদারীপুরে আমন ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকদের অর্থনৈতিক স্বস্তি ফিরেছে। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে দুলছে সোনালি ধান—যা গ্রামাঞ্চলে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।
বিডি-প্রতিদিন/সুজন