অবশেষে খুলছে সেন্টমার্টিন ভ্রমণের দুয়ার। সোমবার থেকে পুনরায় চালু হচ্ছে কক্সবাজার–সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল। একই সঙ্গে শুরু হচ্ছে রাত্রিযাপনের সুযোগ, যা বহাল থাকবে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক দ্বীপে যেতে পারবেন এবং মানতে হবে সরকারের জারি করা ১২ নির্দেশনা।
কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া জেটিঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টায় জাহাজ ছেড়ে যাবে এবং বিকেল ৩টায় সেন্টমার্টিন থেকে একই জাহাজ কক্সবাজারে ফিরবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম জানান, কক্সবাজার–সেন্টমার্টিন রুটে চলাচলের এমভি কর্ণফুলি এক্সপ্রেস, এমভি বারো আউলিয়া, কেয়ারি সিন্দাবাদ, কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন অনুমতি পেয়েছে। টেকনাফ নয়, সরাসরি কক্সবাজার শহর থেকে জাহাজ ছেড়ে যাবে।
সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, ‘রাত্রিযাপনের অনুমতি না থাকায় নভেম্বর মাসে পর্যটক সংকট দেখা দিয়েছিল। তাই জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল। এবার রাত্রিযাপনের সুযোগ থাকায় ভ্রমণে আগ্রহ বেড়েছে, ১ ডিসেম্বর থেকে জাহাজ চলাচল পুনরায় শুরু হচ্ছে। ’
কেয়ারি সিন্দাবাদের ইনচার্জ নুর মোহাম্মদ ছিদ্দিকী জানিয়েছেন, ‘সোমবার সকাল ৭টায় নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট জাহাজ ছেড়ে যাবে। ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। যাত্রীদের মাঝে উৎসবের আমেজ দেখা যাচ্ছে। ’
জলবায়ু ও পরিবেশ মন্ত্রণায়ের নির্দেশনা মতে প্রতিদিন ২ হাজারের বেশি পর্যটক সেন্টমার্টিনে যেতে পারবেন না। এ জন্য নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট এবং সেন্টমার্টিন জেটিঘাটে কঠোর তল্লাশি থাকবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, ‘পর্যটক পারাপারের সময় জাহাজগুলোকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হবে। দুই হাজারের বেশি পর্যটক যেতে দেওয়া হবে না। এ জন্য নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট ও সেন্ট মার্টিন জেটিঘাটে পৃথক তল্লাশির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সেন্টমার্টিন ভ্রমণের ব্যাপারে গত ২২ অক্টোবর ১২টি নির্দেশনাসহ এক প্রজ্ঞাপন জারি করে।
সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখতে দ্বীপে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এ ছাড়া সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক, যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন দ্বীপের নাজুক পরিবেশ ও অনন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত থাকবে এবং দ্বীপটি দায়িত্বশীল ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে উঠবে বলে আশা করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
বিডি-প্রতিদিন/আশফাক