তিন চাকার ব্যাটারিচালিত রিকশা— এই রিকশার ওপরই ভর করে চলে পা-বিহীন বাবা, দুই মেয়ে ও পাঁচজনের সংসার। রিকশার ভেতর ঝুলে থাকে ছোটদের কয়েকটি জামা। এই সামান্য জামা বিক্রির টাকায় সংসারের অভাব কিছুটা হলেও মেটানোর চেষ্টা করছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী খোকন চন্দ্র সরকার। তার দুই পা অকেজো; লাঠিতে ভর দিয়েও হাঁটা কঠিন। তিন মেয়ের মধ্যে দুইজনের অবস্থাও তার মতোই। দারিদ্র্য ও দুঃখের সঙ্গে লড়াই করেও খোকন কখনও হাত পাতেননি। পা নেই, তবু নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন তিনি।
এই সংগ্রামী জীবনের গল্প মিলল কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার বাউকসার ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের বড় খালের পাশে সরকার বাড়ি। খালের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা খোকনের ছোট্ট ঘরটিও ভাঙনের হুমকিতে। কখনো দুই বেলা, কখনো তিন বেলা খাবার জোটে— এমন টানাপোড়েনের মাঝেই চলছে তাদের জীবন। পঙ্গু খোকন রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন যান পাশের গালিমপুর, শ্রীপুর, লক্ষীপুর, সুদ্রা, কালোরা ও জানোরা গ্রামে। পরিবার অপেক্ষায় থাকে— তিনি সুস্থভাবে ফিরবেন তো? আজ কত আয় হলো? আগামী দিনের খরচ উঠবে তো?
মেঝ মেয়ে বৃষ্টি রানী সরকার (১৯)। প্রথম দেখায় তার পায়ে কোনো সমস্যা চোখে পড়ে না; কিন্তু হাঁটলেই বোঝা যায় প্রতিবন্ধকতার কষ্ট। তিনি জানান, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। যাতায়াত ও অর্থাভাবের কারণে আর এগোনো হয়নি।
বৃষ্টি বলেন, ‘বাবা ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না। তারপরও রিকশা নিয়ে সংসার চালান। পুঁজি পেলে বাবা বসে একটা দোকান বা ব্যবসা করতে পারবেন।’
স্ত্রী চন্দনা রানী সরকার বলেন, কিস্তি তুলে ব্যবসা করছি। কিন্তু যা আয় হয়, তা কিস্তি শোধ করতেই শেষ হয়ে যায়। এই আয় দিয়ে সংসার চালানো খুব কঠিন। উনি রিকশা নিয়ে বের হলে সারাদিন টেনশনে থাকি— কিছু হলো কিনা, কখন ফিরবেন।
প্রতিবেশী মোস্তাফিজুর রহমান মামুন বলেন, খোকন দা খুবই আত্মসম্মানী মানুষ। কারও কাছে হাত পাতেন না। পুঁজি না থাকায় বসে ব্যবসা করতে পারেন না। এই আয় দিয়ে তাদের জীবন মানবেতর। বিত্তবানদের তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।
খোকন চন্দ্র সরকার জানান, জন্ম থেকেই তিনি পঙ্গু। আগে গালিমপুর স্কুলের পাশে ঝুড়িতে করে কিছু পণ্য বিক্রি করতেন। পরে এই ব্যাটারি চালিত রিকশা কিনে চলমান ব্যবসা শুরু করেন। ‘এই সামান্য আয় দিয়ে দুই প্রতিবন্ধী মেয়েসহ পাঁচজনের সংসার চালানো খুবই কঠিন,’ বলেন তিনি।
বরুড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কামরুল হাসান রনি বলেন, এ ধরনের ব্যক্তিদের আমরা সুবর্ণ নাগরিক বলি। তারা তিনজনই প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। সুবর্ণ নাগরিকদের স্বাবলম্বী করতে সুদবিহীন ঋণের ব্যবস্থা আছে। আমরা এই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবো।
বিডি-প্রতিদিন/মাইনুল