রংপুরের শ্যামপুর চিনিকল ও দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ চিনিকল চালু এবং অর্থ ছাড়ের দাবিতে গত ৪ নভেম্বর ঢাকায় শিল্প মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেছিল দুই চিনিকল এলাকার আখচাষিরা। বৈঠকে এক সপ্তাহের মধ্যে আঁখ চাষ এবং মিল চালু করতে অর্থ ছাড়ের আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। সেই আশ্বাস এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। নভেম্বর মাসে আঁখ রোপনের মৌসুম। এই মাসের মধ্যে অর্থ ছাড় না হলে এবারও চিনিকল এলাকায় আঁখ চাষ হবে না।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের পরিচালক (অর্থ) আজহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ বছর অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে চিনিকল দুটি চালু হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। এর আগে ‘শ্যামপুর চিনিকল চালু কমিটি’ ও শ্যামপুর এলাকাবাসি একাধিকবার মানববন্ধন করেছেন।
জানা গেছে, শ্যামপুর ও সেতাবগঞ্জ চিনি কল এলাকার আঁখ চাষিদের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আঁখ রোপনের অনুমতি দিয়েছিল শিল্প মন্ত্রণালয় এক বছর আগে। ওই অনুমতিতে চিনিকল ঘিরে আশার আলো দেখা দিয়েছিল স্থানীয়দের মাঝে। অনুমতির এক বছর পেরিয়ে গেলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আবারও অন্ধকার হাতছানি দিচ্ছে চিনিকল এলাকায়। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন বলছে অর্থ ছাড়ের জন্য একাধিকবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রণালয় অর্থ ছাড় দিচ্ছে না।
বন্ধ চিনিকল চালুকরণ টাস্কফোর্স কমিটির অন্যতম সদস্য আলতাব হোসেন বলেন, শ্যামপুর ও সেতারগঞ্জ চিনিকল দুটি চালু করার বিষয়ে শিল্পমন্ত্রণালয় এক বছর আগে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। চিনিকল এলাকায় আখ চাষের অনুমতিও দিয়েছিল। কিন্তু অর্থ ছাড় না হওয়ায় এবার আখ চাষ হবে না।
তিনি আরও বলেন, চিনিকল দুটি চালু এবং আখচাষের বিষয়ে গত ৪ নভেম্বর আমরা শিল্প মন্ত্রাণালয় ঘেরাও করেছিলাম। পরে শিল্প উপদেষ্টা, শিল্প সচিবসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক হয়। বৈঠকে এক সপ্তাহের মধ্যে অর্থছাড় করা হবে বলে আশ্বাস দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নভেম্বর মাস আখ রোপনের উপযুক্ত মৌসুম। এই সময়ের মধ্যে আখ রোপন করতে না পারলে আবার এক বছর অপেক্ষা করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে তৎকালীন সরকার রংপুরের শ্যামপুর সুগারমিল,পাবনা সুগার মিল,পঞ্চগড় সুগার মিল, সেতাবগঞ্জ সুগারমিল, রংপুর সুগার মিল ও কুষ্টিয়া সুগার মিলে চিনি উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। সে সময় সংস্কার ও আধুনিকায়নের উদ্দেশ্যেই কারখানাগুলো আপাতত বন্ধ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানালেও ৫ বছরে চিনি কলগুলো চালুর কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিগত সরকার। বিগত সরকারের কাছে বন্ধ চিনিকলগুলো চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাবনা পাঠালেও সে সময় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বন্ধ চিনি কল চালু করতে একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করে। সেই অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চিনিকল এলাকায় আঁখ চাষের অনুমতি দেন। প্রথমে শ্যামপুর ও সেতাবগঞ্জ চিনিকল এলাকায় আঁখ চাষের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অন্য চারটি চিনিকল পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শ্যামপুর ও সেতাবগঞ্জ আঁখ চাষের অনুমতি পেলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
সম্প্রতি শ্যামপুর চিনিকলে একজন এমডি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এমডি নিয়োগের পরে চিনিকল এলাকার চাষিরা আশায় বুক বেধেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে চিনিকল চালুর বিষয়টি অধরা থেকে গেছে।
জানা গেছে ,আগে শ্যামপুর চিনিকল এলাকায় ৭০টি ইক্ষু উন্নয়ন সহকারী পদ ছিল। তারা চাষিদের আঁখ চাষে উদ্বুদ্ধসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন। এছাড়া ৬টি সাবজোন ছিল। মিলটি যখন চালু ছিল তখন ৬ হাজারের বেশি আঁখ চাষি ছিল। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে আড়াই হাজার একর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরের বছর ৪ হাজার একরে আখ চাষ করার পরিকল্পনা ছিল। এই সিদ্ধান্ত শিল্পমন্ত্রণালয় থেকে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে কোনো কিছুই হয়নি।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের পরিচালক (অর্থ) (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রাণালয় অর্থ ছাড় না দেওয়ায় এ বছর বন্ধ চিনিকল এলাকায় আঁখচাষ করা সম্ভব হবে না। চিনিকলগুলোও চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।’
বিডি-প্রতিদিন/জামশেদ