চট্টগ্রামে গত পাঁচ বছরে আমন ধানের আবাদ কমেছে ৫ হাজার ৫৩১ হেক্টর জমিতে। তবে একই সময়ে উৎপাদন বেড়েছে ৩৪ হাজার ২৪১ টন।
নতুন উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল জাতের ধান চাষ এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে চট্টগ্রামের পাঁচটি উপকূলীয় এলাকায় আমনের আবাদ ও উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, নানা কারণে দেশে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে। এর মধ্যে অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ ও শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কারণে সবচেয়ে বেশি কৃষিজমি হ্রাস পাচ্ছে। পাশাপাশি ছোট ও মাঝারি আকারের বিভিন্ন ধরনের কারখানা স্থাপন এবং আবাসিক এলাকার নামে জমি ভরাটের ফলে কৃষিজমি অকৃষি জমিতে পরিণত হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে চট্টগ্রামের ১৬ উপজেলায় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়। সে বছর উৎপাদিত হয় ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৯ টন ধান। এর পর থেকে আবাদ কমতে থাকলেও উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।
এর মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ লাখ ৮২ হাজার ৬৭১ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় ৫ লাখ ১০ হাজার ২২৯ টন ধান। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৩৮ হেক্টর জমিতে উৎপাদন দাঁড়ায় ৫ লাখ ১৭ হাজার ৮৪৮ টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয় ৫ লাখ ১৫ হাজার ৮৪৯ টন। সর্বশেষ চলতি আমন মৌসুমে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৮০৯ হেক্টর জমিতে ৫ লাখ ৩০ হাজার টনের বেশি ধান উৎপাদন হয়েছে।
গত ১০ বছরের আমন আবাদ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে আমনের আবাদ ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সর্বনিম্ন ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয় এবং সে বছর উৎপাদন দাঁড়ায় ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৫০৭ টন। পরবর্তী দুই বছর আবাদ কিছুটা বাড়লেও উৎপাদন সন্তোষজনক ছিল না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. ওমর ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগে দেশীয় জাতের ধানের চাষ বেশি হতো। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে অঞ্চল ও গভীরতা অনুযায়ী জাত নির্ধারণে কৃষকদের সচেতন করা হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উন্নত জাতের ধানের আবাদ দিন দিন বাড়ছে। পাশাপাশি নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। এসব কারণে আবাদ কমলেও উৎপাদন বেড়েছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকাগুলোর কৃষিজমিতে লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ায় সেখানে ধান চাষের পরিমাণ কমছে। ফলন কমে যাওয়ায় এসব এলাকার কৃষক ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। বোরো মৌসুমে এই সংকট আরও বেশি তীব্র আকার ধারণ করে।
অধিদপ্তর সূত্র আরও জানায়, চলতি মৌসুমে আমন আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৭৯ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমি। কিন্তু লবণাক্ততার কারণে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৮০৯ হেক্টর জমিতে।
এর মধ্যে উফশী জাতের ধান চাষ হয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৬৬৫ হেক্টরে, হাইব্রিড জাতের ধান ৭ হাজার ৮০০ হেক্টরে এবং স্থানীয় জাতের ধান ২২ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে। এসব জমিতে অঞ্চল ও ধানের গভীরতা অনুযায়ী ব্রি-৪৯, ৫১, ৫২, বিনা-২৩, ১০৩, ব্রি-৯৪ ও ৯৫ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ