রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বর্তমানে ভারতের সফরে রয়েছেন। তাকে আতিথ্য দেয়ার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে রাজধানী নয়াদিল্লি ঐতিহাসিক স্থাপত্য হায়দরাবাদ হাউসকে। এই প্রাসাদটি তৈরি করেছিলেন হায়দরাবাদের শেষ নিজাম মীর ওসমান আলী খান। তিনিই একসময় ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তার ঐশ্বর্যের প্রতীক এই প্রাসাদ, যার বর্তমান মূল্য প্রায় ১৭০ কোটি রুপি।
ব্রিটিশরা যখন ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করে, তখন অন্যান্য রাজাশাসিত রাজ্যের মহারাজাদের মতো ওসমান আলী খানও দিল্লিতে তার স্বকীয়তার ছাপ রাখতে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন ভাইসরয়ের বাড়ির কাছে জমি, কিন্তু সেই অনুমতি মেলেনি। শেষ পর্যন্ত পাঁচটি রাজ্যের মহারাজাদের সঙ্গে তাকেও ভাইসরয়ের বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে কিং পঞ্চম জর্জের ভাস্কর্যের আশেপাশে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এদের মধ্যে হায়দরাবাদ হাউস ছিল নয়াদিল্লিতে নির্মিত প্রাসাদগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং জাঁকজমকপূর্ণ।
হায়দরাবাদের নিজাম এবং বরোদার গায়কোওয়াড় তাঁদের প্রাসাদের নকশা করার জন্য বিখ্যাত ব্রিটিশ স্থপতি এডউইন লুটিয়েন্সকে নিয়োগ দেন। নিজামের ইচ্ছা ছিল ভাইসরয়ের প্রাসাদের সমান একটি বিশাল বাড়ি তৈরি করা। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের শর্তের কারণে সেই অনুমতি মেলেনি। তাই নিজামের নির্দেশ সত্ত্বেও স্থপতি লুটিয়েন্স নিজের মতো করেই প্রাসাদটির নকশা করেন এবং ভাইসরয়ের বাড়ির নকশা থেকে কেবল মধ্যভাগের একটি গম্বুজ নেন।
হায়দরাবাদ হাউস দুর্লভ প্রজাপতির আকৃতিতে নকশা করা হয়েছে। চট করে দেখলে মনে হয়, প্রাসাদটির ষড়্ভুজ প্রবেশপথ রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। ১৯০৩ সালে ইংল্যান্ডের পাপিলন হলের জন্য করা লুটিয়েন্সের প্রজাপতি আকৃতির নকশার আদলেই এটি তৈরি। ১৯২০-এর দশকে এর নির্মাণে প্রায় ২ লাখ পাউন্ড ব্যয় হয়েছিল।
৮.২ একর জমিতে বিস্তৃত এই অনন্য প্রাসাদে রয়েছে ৩৬টি কক্ষ, একাধিক উন্মুক্ত আঙিনা, খিলান, রাজকীয় সিঁড়ি, ফায়ারপ্লেস এবং ফোয়ারা। এর স্থাপত্যশৈলীতে ইউরোপীয় রীতির পাশাপাশি মোগল যুগের ছাপও দেখা যায়। প্রবেশপথের ওপরে থাকা গম্বুজ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। এর বৃত্তাকার খিলান এবং আয়তাকার ফাঁকা স্থানের সমন্বয়ে গঠিত ধনুক আকৃতির শৈলী ইতালির রোমের প্যান্থিয়ন মন্দির এবং ফ্লোরেন্সের উফিজি গ্যালারি থেকে অনুপ্রাণিত।
কয়েক দশক ধরে হায়দরাবাদ হাউস ভারতের প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অতীতে বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ, গর্ডন ব্রাউনসহ বহু বিশ্বনেতা এখানে থেকেছেন। পুতিন এর আগেও ভারত সফরে এসে এই প্রাসাদেই আতিথ্য গ্রহণ করেছেন। ১ নম্বর অশোক রোডে ইন্ডিয়া গেটের কাছে অবস্থিত এই কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিদেশি অতিথিরা থাকার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় ভোজ, বৈঠক এবং যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে থাকেন।
সূত্র: এনডিটিভি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল