ভারতের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের চিত্রকর্ম নিয়ে বিশ্বে প্রথম পূর্ণাঙ্গ জাদুঘর কাতারের দোহায় উদ্বোধন করা হয়েছে। গত রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া এই জাদুঘরের নাম ‘লাওহ ওয়া কলম: এম. এফ. হুসেন মিউজিয়াম’, যার অর্থ ‘ক্যানভাস ও কলম’।
কাতার ফাউন্ডেশনের এডুকেশন সিটির তিন হাজার বর্গমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এ জাদুঘরে হুসেনের জীবনের শেষ কয়েক বছরের ১৫০টির বেশি মূল চিত্রকর্ম ও ব্যক্তিগত সংগ্রহ প্রদর্শিত হয়েছে। সারাজীবনে ৪০ হাজারের বেশি শিল্পকর্ম সৃষ্টিকারী এই শিল্পীর প্রতি এমন নিবেদন বিশ্বে এই প্রথম।
কাতার ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, সংস্থাটির চেয়ারম্যান শায়খা মোজা বিনতে নাসের জাদুঘরটির উদ্বোধন করেন। শুক্রবার থেকে জাদুঘরটি সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
জাদুঘরের স্থাপত্যও নিজেই একটি গল্প বহন করে। মকবুল ফিদা হুসেন জীবদ্দশায় নিজের কাজ সংরক্ষণের জন্য একটি জাদুঘরের স্কেচ আঁকেন এবং সেটির পাশে কিছু নির্দেশনাও লেখেন। সেই মূল স্কেচকে ভিত্তি করে স্থপতি মরতান্দ খোসলা জাদুঘরের চূড়ান্ত নকশা সম্পন্ন করেন।
১২ বর্গকিলোমিটারের বিস্তৃত এডুকেশন সিটি শিক্ষা, গবেষণা, বিনোদন ও সংস্কৃতিকে একত্রে ধারণ করা এক অনন্য নগরায়ণ প্রকল্প। এর মাঝে দক্ষিণ এশিয়ার আধুনিক শিল্পের অন্যতম প্রভাবশালী মুখ এম. এফ. হুসেনকে নিয়ে এই জাদুঘর স্থাপন কাতার ও ভারতের সাংস্কৃতিক সম্পর্কের গভীরতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
জাদুঘরটিতে হুসেনের চিত্রকর্ম, চলচ্চিত্র, আলোকচিত্র, ট্যাপেস্ট্রি, কবিতা, ইনস্টলেশন—১৯৫০-এর দশক থেকে ২০১১ সালে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নানা শিল্পমাধ্যমে সৃষ্ট কাজ স্থান পেয়েছে। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে দোহায় তাঁর কাটানো সময়ের শিল্পকর্মে, যার মধ্যে রয়েছে আরব সভ্যতাকে কেন্দ্র করে নির্মিত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ—যা কাতার ফাউন্ডেশন ও রাজপরিবারের সদস্যদের অনুরোধে তৈরি।
জাদুঘরের কিউরেটর ও কাতার ফাউন্ডেশনের আর্ট পোর্টফোলিওর প্রকল্প ব্যবস্থাপক নুফ মোহাম্মদ জানান, ১৯৮৪ সালে হুসেন প্রথম কাতারে আসেন এবং কাতারি শিল্পী ইউসুফ আহমেদের সঙ্গে কাজ প্রদর্শন করেন। পরে ২০০৭ সালে দোহায় ইসলামিক আর্ট মিউজিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁর পুনরাগমন দু’দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। সেই সময় তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজ—‘ক্রস-কালচারাল ডায়ালগ’ এবং ‘দ্য লাস্ট সাপার ইন রেড ডেজার্ট’—প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে কাতারি সমাজে তাঁর শিল্প নতুনভাবে পরিচিতি লাভ করে।
এর পরবর্তী সময়ে কাতারে অবস্থানকালে হুসেন বহু গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেন, যা আজ দোহায় তাঁর স্থায়ী উত্তরাধিকার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই জাদুঘরের উদ্বোধনের মাধ্যমে কাতার আধুনিক শিল্পচর্চার বৈশ্বিক মানচিত্রে নতুন অধ্যায় রচনা করল এবং দক্ষিণ এশিয়ার শিল্প ঐতিহ্যের সঙ্গে তাদের সাংস্কৃতিক সংযোগ আরও সুসংহত হলো।
সূত্র: আল জাজিরা, গ্রাউন্ড নিউজ
বিডি-প্রতিদিন/জামশেদ