পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় এ বছরও শুরু হয়েছে রোদে মাছ শুকিয়ে শুঁটকি উৎপাদনের মৌসুম। শুঁটকি পল্লিগুলোতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমানতালে যুক্ত রয়েছেন এ কাজে। তাদের প্রত্যাশা, আগের বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও কয়েক কোটি টাকার শুঁটকি বেচা-কেনা হবে।
দেখা গেছে, কেউ সারি সারি বাঁশের মাচায় মাছ বিছানোর কাজে ব্যস্ত। কেউ বিভিন্ন ধরনের মাছ বাঁশের আড়ায় ঝুলিয়ে রাখছেন। কেউ কেউ মাছ রোদে উলটে-পালটে দিচ্ছেন। কোথাও কোথাও শ্রমিকরা নতুন মাচা তৈরির কাজ করছেন পুরোদমে।
এছাড়া অনেকে ট্রলার মেরামত, জাল-দড়ি প্রস্তুত, মাছ রাখার জন্য অস্থায়ী ঘর, দোকান ও মাচা নির্মাণ করছেন। জেলেরা বলছেন, এই সময়টায় তাদের দম ফেলার ফুরসতও থাকে না।
জানা গেছে, সাগর পাড়ের গঙ্গামতি, কাউয়ার চর, ধুলাসারসহ মহিপুরের নিজামপুরসহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে শুঁটকির ব্যাবসা। শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কুয়াকাটার আশেপাশে গড়ে ওঠা শুঁটকি পল্লিতে প্রায় ২৫ হাজার জেলে, শ্রমিক ও ব্যবসায়ী এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তারা জানান, প্রাকৃতিকভাবে শুকানোয় এখানের শুঁটকির আলাদা স্বাদ রয়েছে। আগত পর্যটক-দর্শনার্থীরাও প্রতিদিন এসব শুঁটকি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
শুঁটকি ব্যবসায়ী ও জেলেরা জানায়, সাগর থেকে আহরিত লইট্টা, ছুরি, লাক্ষ্যা, চাপিলা, রূপচাঁদা, ছোট পোয়া, ছোট চিংড়ি ও ফাইস্যাসহ প্রায় ৩৫ প্রজাতির মাছ স্থানীয় পল্লিগুলোতে শুকানো হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে। প্রতিটি মৌসুমে এখান থেকে কোটি কোটি টাকার শুঁটকি দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। তবে আধুনিক পদ্ধতিতে শুঁটকি তৈরি করতে পারলে উৎপাদন আরও বাড়তো।
নারী শ্রমিক রাজিয়া বেগম বলেন, শীত শুরু হলেই তাদের কাজের চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাচা পরিষ্কার, মাছ ধোয়া, শুঁটকি শুকানোসহ সবকিছু নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটে।
জেলে আব্দুল করিম বলেন, 'মাছ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে শুধু রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করি। এতে কোনো ধরনের ভেজাল নেই। সঠিক পরিবেশে শুঁটকি উৎপাদন করা হয়।'
জেলে লতিফ খান জানান, বিভিন্ন জাতের শুটকির মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা লইট্টা শুঁটকির। এছাড়া সাগরের পোয়া থেকে শুরু করে চিংড়ি পর্যন্ত সব মাছের শুটকির ভালো চাহিদা রয়েছে।
ব্যবসায়ী সোহেল মাহমুদ বলেন, 'চাহিদা ভালো থাকায় আমরা আশাবাদী এবারের মৌসুমে অন্যান্য বছরের তুলনায় লাভবান হবো।'
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত শুঁটকি মৌসুম চলছে। উন্নত মানের শুঁটকি উৎপাদনের জন্য সংশ্লিষ্টদেরকে মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/এমই