দীর্ঘ নয় মাস বন্ধ থাকার পর কক্সবাজার–সেন্টমার্টিন নৌ-পথে জাহাজ চলাচল আবারও শুরু হয়েছে। সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকালে কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট থেকে তিনটি জাহাজে ১১৭৪ জন পর্যটক সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা দেন। ভোর ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে এমভি বার আউলিয়া, এমভি কর্ণফুলী ও কেয়ারি সিন্দাবাদ জাহাজগুলো ছেড়ে যায়।
প্রথম দিনের যাত্রায় যাত্রী নিয়ন্ত্রণ ও প্লাস্টিকমুক্ত ভ্রমণের ওপর কঠোর নজরদারি করে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ট্যুরিস্ট পুলিশ। সচেতনতার অংশ হিসেবে যাত্রীদের হাতে অ্যালুমিনিয়ামের পানির বোতল তুলে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান।
সকালে জেটিঘাটে পর্যটকদের স্বাগত জানান জেলা প্রশাসকসহ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম, কক্সবাজার সদরের ইউএনও নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী এবং ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ। তারা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন তদারকি করেন।
সরকার ঘোষিত ১২ দফা নির্দেশনা মেনে ১ ডিসেম্বর থেকে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটকদের সেন্টমার্টিনে রাতযাপনের সুযোগ থাকছে।
জাহাজ কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রথম দিনের সব টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। তিনটি জাহাজে মোট ১১৭৪ যাত্রী দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হন। তবে ম্যানুয়ালি টিকিট বিক্রি করায় কেয়ারিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সেন্টমার্টিনগামী পর্যটক মনির আহমেদ বলেন, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভ্রমণে যাচ্ছি। দ্বীপে এক রাত থেকে পরদিন একই টিকিটে ফিরে আসব। এর আগে যাইনি, কেবল মানুষের মুখে শুনেছি দ্বীপটির গল্প, এবার সরাসরি দেখার সুযোগ হবে।
হাফিজ নামে এক পর্যটক বলেন, পাঁচ বছর আগে টেকনাফ হয়ে জাহাজে সেন্টমার্টিন গিয়েছিলাম। নাফ নদী ও মিয়ানমার সীমান্ত হয়ে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্টমার্টিন ভ্রমণের আনন্দ ভোলার মতো নয়। এবার অন্য পথে যাচ্ছি। আশা করি ভালোই লাগবে।
প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতিদিন সকাল ৭টায় জাহাজ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছাড়বে, পরদিন দুপুর ৩টায় কক্সবাজারে ফিরবে। টিকিট সংগ্রহ বাধ্যতামূলকভাবে বিডি ট্যুরিজম বোর্ড অনুমোদিত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে করতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকবে। টিকিট যাচাইয়ে জেটিঘাটে ২০ জন ভলান্টিয়ার এবং সেন্টমার্টিনেও সমানসংখ্যক ভলান্টিয়ার দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে দীর্ঘ বিরতির পর পর্যটকদের আগমনে সেন্টমার্টিনে আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। তবে জেটিঘাটের নির্মাণকাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএস রহমান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি আলী হায়দার।
সেন্টমার্টিনের ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, গত এক দশক ধরে পর্যটনই স্থানীয়দের প্রধান জীবিকা। যেকোনো সংকটেও পর্যটক সেবায় ঘাটতি হবে না।
সেন্টমার্টিনের নাজুক পরিবেশ রক্ষায় ঘোষিত ১২ দফা নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন হবে। এর মধ্যে রয়েছে— রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো নিষেধ, উচ্চ শব্দে অনুষ্ঠান বা বারবিকিউ নিষিদ্ধ, কেয়াবনে প্রবেশ বা কেয়াফল সংগ্রহ নিষিদ্ধ, কাছিম, পাখি, রাজকাঁকড়া, প্রবালসহ জীববৈচিত্র্য ক্ষতির সব কর্মকাণ্ড বন্ধ, মোটরচালিত যান চলাচল নিষিদ্ধ এবং দ্বীপকে প্লাস্টিকমুক্ত রাখতে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহমুদ পাশা বলেন, অ্যালুমিনিয়াম বোতল ব্যবহারে কঠোরতা আনা হয়েছে। এটি সফল হলে প্লাস্টিক দূষণ অনেক কমবে।
জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান বলেন, সেন্টমার্টিন আমাদের জাতীয় সম্পদ। পরিবেশ রক্ষায় নির্দেশনা মেনে চলা সবার দায়িত্ব।প্রশাসন, জাহাজ মালিক ও সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত তদারকিতে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষা নিশ্চিত করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/সুজন