দিনাজপুরের কাহারোলে একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে হাসকিং মিল ও চাতাল। এর অন্যতম কারণ অটোরাইস মিলের দাপট এবং ধান ক্রয় ও চালের বিক্রির মধ্যে সমন্বয় না থাকায় অব্যাহত লোকসান। চাতালগুলোতে একসময় কর্মচাঞ্চল্য থাকলেও নানা সংকটে হাসকিং মিল বন্ধ হওয়ায় কাজ হারিয়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। অনেকে জীবিকার তাগিদে চলে গেছেন অন্য পেশায়।
কয়েকজন হাসকিং মিল মালিক জানান, বাজার থেকে কেনা ধানে যে পরিমাণ চাল হয় তা বিক্রি করলে লাভ তো দূরের কথা খরচ তোলাও দায়। লোকসানের ঘানি টানতে টানতে ব্যবসা চালু রাখা কঠিন হওয়ায় হাসকিং মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের তৈরি আর অটোরাইস মিলের চালের দর প্রকারভেদে প্রতি মণে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি। অথচ বাজার থেকে ধান কেনার সময় প্রায় একই দরে কেনা হয়। বন্ধ হাসকিং মিলগুলো সচল করতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। দিনাজপুরের কাহারোলে ১৩৯টির মধ্যে ১১৮টি চালকল ও চাতাল বন্ধ থাকায় এই পেশায় নিয়োজিত শ্রমিকদের এখন দুর্দিন। ১৫০০ অধিক শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছেন। রসুলপুর ইউনিয়নের চাতাল ব্যবসায়ী লঙ্কেশ্বর রায় জানান, চালকল ও চাতালে লোকসান দিতে দিতে পুঁজি শেষ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে চাতাল ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে জানান তিনি। চাতালে কাজ করা স্বামী পরিত্যক্ত রহিমা বেগম জানান, আগে যে টাকা রোজগার হতো এখন তা হচ্ছে না। তিন ছেলে দুই মেয়ে নিয়ে দিন চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। শ্রমিক আবদুস সালাম জানান, তারা শুধু ধান সিদ্ধ, শুকানো ও ভাঙানোর কাজ করেন। আগে মিল চাতালে কাজ করে প্রতিদিন জনপ্রতি আয় হতো ৪০০-৫০০ টাকা। এ ছাড়া চালের খুদ ও গুঁড়াও মিলত। তা দিয়ে খাওয়া চলত। এখন পেটের ভাত জোগাড় করা কষ্টকর। অনেকে অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাসুদ রানা জানান, শুনেছি কাহারোলে ১৩৯টি মিল চাতাল ছিল। অটোরাইস মিলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারায় দিনদিন বন্ধ হয়ে গেছে। আমি এখানে গত বছর দায়িত্ব নেওয়ার সময়ও ২৬টি হাসকিং মিল চুক্তি করেছিল। লোকসানে তাও কমে ২১টিতে দাঁড়িয়েছে।