প্রশিক্ষণের নামে অর্থ নয়ছয়

জাল স্বাক্ষর ও ভুয়া শিক্ষকের নামে খুলনায় প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) শিক্ষক প্রশিক্ষণের উত্তোলনকৃত টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। গত বছর ভাউচারে মাধ্যমে ১৫০ জন শিক্ষকের প্রশিক্ষণ বাবদ প্রায় ৮০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন পিটিআইয়ের সাবেক সুপার মোল্যা ফরিদ আহম্মেদ। টাকা উত্তোলনের সময় ১৫০ জনের স্বাক্ষর জাল করা হয়। এর মধ্যে নয়জন শিক্ষকের নামে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করা হলেও তাদের অস্তিত্ব মেলেনি। এদিকে প্রশিক্ষণের টাকা জাল-জালিয়াতির ঘটনায় গতকাল সাবেক সুপার মোল্যা ফরিদ আহম্মেদের বিরুদ্ধে তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়। প্রাথমিক শিক্ষার পরিচালক (অর্থ বিভাগ) মো. মাহবুবুর রহমান বিল্লাহ খুলনা পিটিআইয়ে অভিযোগের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। জানা যায়, ভাউচার ও স্টাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে ২০২৪ সালের শিক্ষক প্রশিক্ষণে বিবেক সরদার (রোল-২৩), জেসমিন জাহান (রোল-৫৭), মোদাচ্ছের আলী (রোল-৬৭), মো. মঈন উদ্দিন (রোল-৬৮), বিজয়া ম ল (রোল-৭৮), আরমান শেখ (রোল-৭৮), সুকান্ত কুমার হালদার (রোল-১৩৪), তপু মল্লিক (রোল-১৪১), সাবরিনা সুলতানা (রোল-১৫০) নামে সাড়ে ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু ওই বছরের প্রশিক্ষণগ্রহণকারীদের তালিকায় তাদের নাম নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রশিক্ষণ শুরুর আগেই ২০২৪ সালের ১৯ জুন ১৫০ জন শিক্ষক-কর্মচারীর স্বাক্ষর জাল করে ৮০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন মোল্যা ফরিদ আহম্মেদ। ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া প্রশিক্ষণ শেষ হয় গত বছরের ২০ এপ্রিল। এরপর প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ বাবদ কয়েক দফায় টাকা দেওয়া হয়। দীর্ঘ ১০ মাস ধরে ওই ৮০ লাখ টাকা পিটিআই সুপারের ব্যাংক হিসাবে ছিল। একইভাবে ২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর আরও ১২০ জনের স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতি করে প্রায় ৭০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। সে টাকাও পিটিআই সুপারের ব্যাংক হিসাবে দীর্ঘদিন রাখা হয়। এই টাকার মুনাফা পিটিআই সুপার আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণ শুরুর ২-৩ মাস পর ভর্তির নির্দেশনা না মেনে পুরোনো প্রশিক্ষণার্থীদের স্থলে নতুন প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি দেখানো ও হোস্টেলে থাকা বাবাদ টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে। তিনি খুলনায় কর্মরত থাকাকালে কোনো প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শন না করলেও প্রতি মাসে একটি করে স্কুলের ভুয়া পরিদর্শন প্রতিবেদন প্রাথমিক ডিডি অফিসে প্রেরণ করেন। অভিযোগের বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বিল্লাহ। তিনি জানান, প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া শিক্ষক-কর্মচারী ও অভিযোগকারীর বক্তব্য নেওয়া হচ্ছে। দোষী সাব্যস্ত হলে মোল্যা ফরিদ আহম্মেদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।