ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন আদালতে দণ্ডিত হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গ্রাহকদের করা একাধিক মামলায় দণ্ডিত হয়ে তাঁরা দেড় বছর ধরে পলাতক রয়েছেন। পলাতক থাকায় এই দুই ফেরারি আসামির বিরুদ্ধে জারি হয়েছে একাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা। ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, পুলিশের অবহেলায় তাঁরা গ্রেফতার হচ্ছেন না।
২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে করা এক মামলায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে রাসেল ও শামীমাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০২২ সালের এপ্রিলে জামিনে মুক্তি পান শামীমা। গত ১৯ ডিসেম্বর রাসেলও জামিনে মুক্তি পান। পরে গত বছরের জুনে একটি মামলায় তাঁরা দণ্ডিত হন।
চট্টগ্রামে এক মামলায় গত বছরের ২ জুন তাঁদের সাজা হয়। এরপর দুজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ান জারি করা হয়। ওই সময় থেকে প্রায় দেড় বছর ধরে দুজন ফেরারি। আদালত ও মামলার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পৃথক ছয় মামলায় মোহাম্মদ রাসেল ও শামীমা নাসরিনের ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের দুই লাখ সাত হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
চলতি বছরের ১২ নভেম্বর গ্রাহকের করা মামলায় মোহাম্মদ রাসেল ও শামীমা নাসরিনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন ঢাকার আদালত। পাশাপাশি তাঁদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়। এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর আরেক মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত। একই সঙ্গে তাঁদের পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।
গত ১৩ এপ্রিল রাসেল ও তাঁর স্ত্রী শামীমাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার সিএমএম আদালত। তাঁদের পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ডও করা হয়। গত ৬ এপ্রিল রাসেল দম্পতিকে তিন বছর কারাদণ্ড দেন ঢাকার আদালত। একই সঙ্গে তাঁদের পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
চলতি বছরের গত ২৯ জানুয়ারি প্রতারণার মামলায় তাঁদের দুই বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁদের পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া গত বছরের ২ জুন চেক প্রত্যাখ্যানের মামলায় রাসেল ও তাঁর স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। একই সঙ্গে চেকের সমপরিমাণ এক লাখ ৮০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।
ভুক্তভোগী গ্রাহক সাদিকুর রায়হান বলেন, ‘ধারদেনা করে তিনটি বাইকের অর্ডার দিয়েছিলাম। কিন্তু বাইক ও টাকা কিছুই বুঝে পাইনি। বিচার চেয়ে মামলা করেছিলাম। রায়ে রাসেল ও তাঁর স্ত্রী শামীমার পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। কিন্তু পলাতক থাকায় তাঁরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। যেহেতু পাওনা টাকা পেলাম না, এখন একটাই চাওয়া—তাঁদের গ্রেফতার করে সাজা কার্যকর করা হোক। তবে পুলিশের সদিচ্ছা থাকলে তাঁরা গ্রেফতার হতেন। এখানে পুলিশের অবহেলা রয়েছে।’
ভুক্তভোগী গ্রাহক মুজাহিদ হাসান ফাহিম বলেন, ‘নিজের পাওনা ফিরে পেতে টাকা, সময় ও শ্রম সব গেল, কিন্তু বিনিময়ে কিছুই পেলাম না। আফসোস, আদালত আসামি রাসেল ও শামীমার সাজা দিলেন, কিন্তু তাঁরা গ্রেফতার হলো না। বিচার চেয়ে বারবার আদালতের বারান্দায় গিয়েছি, কিন্তু তাঁরা তো স্বাভাবিক জীবন-যাপন করলেও আদালতকে পরোয়া করেননি। আমার ধারণা, তাঁরা দেশেই আছেন। পুলিশ আন্তরিক হলে তাঁদের গ্রেপ্তার করতে সময় লাগার কথা না। হয়তো তাঁরা পুলিশ, প্রশাসন ম্যানেজ করেই চলছেন। এখন চাই, তাঁরা গ্রেফতার হয়ে সাজা খাটুক।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, দণ্ডিত পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলে পুলিশ সেই পরোয়ানা তামিল করবে।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শাসমুদ্দোহা সুমন বলেন, ‘আসামিদের এখন জেলখানায় থাকার কথা, অথচ তাঁরা দণ্ডিত হয়েও ফেরারি হিসেবে ঘুরছেন। যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। গুরুত্ব বিবেচনা করে তাঁদের গ্রেফতার করা উচিত। তাঁদের সাজা কার্যকর হলে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।’ রাসেল ও শামীমার আইনজীবী আহসান হাবিব বলেন, ‘আমার সঙ্গে তাঁদের আপাতত কোনো যোগাযোগ নেই। এ কারণে তাঁদের বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’
সৌজন্যে: কালেরকণ্ঠ