২০২৪ সালে নিউজিল্যান্ড আর চলতি বছর দক্ষিণ আফ্রিকা- নিজেদের মাটিতে পর পর দুই বছর দুই গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো ভারত। গুয়াহাটি টেস্টে ভারতকে ৪০৮ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে প্রোটিয়ারা। টেস্ট ইতিহাসে রানের হিসাবে এটা ভারতের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে পরাজয়।
এর আগে কলকাতা টেস্টে ভারতকে ৩০ রানে হারিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কলকাতার পর গুয়াহাটি টেস্টেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একইভাবে ব্যাটিং বিপর্যয়ের জন্য হারতে হলো টিম ইন্ডিয়াকে। কিন্তু কেন? ঘরের মাটিতে তো সবথেকে ভালো ব্যাটিং করার কথা ভারতীয় ব্যাটারদের, তাহলে বারবার কেন ব্যাটারদের ব্যর্থতার জন্য ভরাডুবি হলো এই সিরিজে ? দল নির্বাচনে ভুল নাকি দলে ব্যাটিং লাইনআপে ভারসাম্যের অভাব- কোন কারণে বারবার চেনা পিচে মুখ থুবড়ে পড়তে হচ্ছে টিম ইন্ডিয়াকে? এমন প্রশ্নের সামনে পড়তে হতে পারে বর্তমানে সময়ে প্রবল সমালোচনার মুখে থাকা টিম ইন্ডিয়ার প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীরকে।
গুয়াহাটি টেস্টের চতুর্থ দিনেই দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে এতটা এগিয়ে গিয়েছিল যে রাশ ধরার সুযোগই পায়নি ভারতীয় দল। তবে যেটুকু সুযোগ ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে ম্যাচের শেষ দিন আজ বুধবার টপ অর্ডারের ব্যাটারদের ধৈর্য্যের অভাবে। জাদেজা ছাড়া ক্রিজে কেউ সেভাবে দাঁড়াতেই পারেনি। যেভাবে একই পিচে দক্ষিণ আফ্রিকার মুথুস্বামী, জেনসন, স্টাবসরা রান করেছেন সেভাবে ভারতের কেউই রান পাননি। সেই কারণেই ম্যাচের দুই দলের প্রথম ইনিংস শেষ হোটেঈ চালকের আসন দখল করে নিয়েছিল প্রোটিয়া দল।
তবে শুধু ইন্ডিয়ার ব্যাটারদের দোষ দেওয়া ঠিক হবে না, বোলারদের থেকেও সেভাবে আগুন পারফরম্যান্স দেখা যায়নি গুয়াহাটির পিচে। যেখানে জেনসন এই টেস্টে ৭ উইকেট পেলেন, সেখানে বুমরা ও সিরাজের ঝুলিতে এলো মাত্র ২টি করে উইকেট। ভারতের বোলিং বিভাগে কুলদীপ এবং জাদেজা ছাড়া প্রোটিয়া ব্যাটারদের কেউই সেভাবে প্রভাবিত করতে পারেনি। সেই কারণেই যে পিচে মুথ থুবড়ে পড়ল ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ, সেখানেই স্বচ্ছন্দে রান পেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা। এই হার ভারতীয় টেস্ট দলকে আবারও এক বড় প্রশ্নের মুখে এনে দাঁড় করাল। সেই সঙ্গে দল দল নির্বাচন নিয়েও শুরু হল বিতর্ক।
গুয়াহাটিতে ম্যাচের শেষ দিন পরাজয় এড়াতে ৮ উইকেট হাতে রেখে পুরো ৯০ ওভার খেলতে হতো ভারতের। কিন্তু ৪৮ ওভারের বেশি টিকতে পারেনি তারা। বাকি থাকা ৮ উইকেট হারিয়ে যোগ করতে পেরেছে মাত্র ১১৩ রান। এই জয়ের ভারতের মাঠে ২৫ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটাল দক্ষিণ আফ্রিকা। এই সিরিজের আগে সবশেষ ২০০০ সালের ভারতের মাঠে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল তারা। আর নিজেদের মাঠে সবশেষ তিন সিরিজের মধ্যে দুটিই হেরে বসল ভারত।
ম্যাচের প্রথম ইনিংসে সেনুরান মুত্থুসামির সেঞ্চুরিতে ৪৮৯ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে মার্কো ইয়ানসেনের শর্ট বলের তোপে মাত্র ২০১ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬০ রানে ব্যাটিং ছেড়ে দেয় প্রোটিয়ারা। ভারতের সামনে দাঁড়ায় ৫৪৯ রানের অসম্ভব এক লক্ষ্য। যা করার জন্য তাদের হাতে ছিল ১০৮ ওভার। কিন্তু চতুর্থ দিন শেষ বিকেলে ১৫.৫ ওভারের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় তারা। শেষ দিনে তাই অসাধ্যই সাধন করতে হতো স্বাগতিকদের।
সাইমন হার্মারের ঘূর্ণিতে তা আর করতে পারেনি ভারত। ২৩ ওভারে মাত্র ৩৭ রান খরচায় ৬ উইকেট নেন হার্মার। এছাড়া কেশব মহারাজের শিকার ২ উইকেট। ভারতের পক্ষে লড়াই করা রবীন্দ্র জাদেজা খেলেন ৮৭ বলে ৫৪ রানের ইনিংস। সাই সুদর্শন লম্বা সময় উইকেটে থেকে ১৩৯ বলে করেন ১৪ রান। দুই ইনিংস মিলিয়ে মোট ৯টি ক্যাচ নিয়েছেন এইডেন মার্করাম। টেস্ট ক্রিকেটে নন উইকেটকিপারদের মধ্যে এটিই ম্যাচে সর্বোচ্চ ক্যাচের রেকর্ড।
আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে ৪ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার এটি তৃতীয় জয়। ৬৬.৬৭ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুই নম্বরে তারা। আর ৯ ম্যাচে ৪ জয়ে ৫৪.১৭ শতাংশ পয়েন্ট পেয়ে চার নম্বরে ভারত।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ