সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে পুরোপুরি ব্যর্থ ছিলেন তানজিদ হাসান তামিম। বাঁ-হাতি ওপেনার প্রথম ম্যাচে ২ এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ৭ রান করেন। দুই ম্যাচে ক্যাচ ধরেন একটি করে দুটি। এমন পারফরম্যান্সে যে কোনো ক্রিকেটারের একাদশের বাইরে থাকার কথা। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট আস্থা রাখেন তানজিদের ওপর। সেই আস্থার প্রতিদান দেন বাঁ-হাতি এ ওপেনার। অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স করেন। ৩৫ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের জয়ী ম্যাচের সব ফোকাস টেনে নেন তানজিদ তামিম। স্পেশালিস্ট ব্যাটার তানজিদ বোলিং না করেও গতকাল অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স করেন ম্যাচে। চট্টগ্রাম বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে অলিখিত ফাইনালে ক্যাচ ধরার বিশ্ব রেকর্ড গড়েন তিনি। ব্যাটিংয়ে হাফ সেঞ্চুরি করেন। ম্যাচে পাঁচ ক্যাচ ও ৫৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হন তানজিদ তামিম। দুই ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা হয়েছেন মেহেদি হাসান। এ সিরিজ জিতে বাংলাদেশ ২০২৫ সাল শেষ করল।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে টি-২০ বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ড সিরিজই সর্বশেষ আন্তর্জাতিক সিরিজ। চলতি বছর বাংলাদেশ টি-২০ এশিয়া কাপসহ ৮টি সিরিজ খেলেছে। জিতেছে ৫টি। লিটন বাহিনী বছর শুরু করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ১-২ হেরে। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে ০-৩ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়। টানা দুই সিরিজ হারের পরের তিনটি জেতে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কাকে তাদের মাটিতে ২-১ ব্যবধানে হারায়। ঘরের মাঠে পরের দুটি সিরিজে পাকিস্তানকে ২-১ এবং নেদারল্যান্ডসকে ২-০ ব্যবধানে হারায়। টি-২০ এশিয়া কাপে গ্রুপ পর্বে দুই ম্যাচ জিতলেও সুপার ফোরে একটি জেতে এবং দুটিতে হেরে যায়। শেষ তিনটি সিরিজই ঘরের মাটিতে খেলেছে। আফগানিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হয় একই ব্যবধানে। বছরের শেষ টি-২০ সিরিজে আয়ারল্যান্ডকে হারায় ২-১ ব্যবধানে। ইউরোপীয় দলটির বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ হেরেছিল ৩৯ রানে। দ্বিতীয়টি ৪ উইকেটে জিতে সিরিজে সমতা আনে। গতকাল তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ৮ উইকেটে জয় পায়।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে টস হেরে ফিল্ডিং করে লিটন বাহিনী। বিশ্বকাপের আগে শেষ আন্তর্জাতিক টি-২০ সিরিজ জিততে মরিয়া টাইগাররা তিন পরিবর্তন নিয়ে খেলেছে। এক ম্যাচ পর দলে ফেরেন পেসার শরিফুল ইসলাম, বাঁ-হাতি ব্যাটার শামীম হোসেন পাটোয়ারী ও লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। বাদ পড়েন বাঁ-হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ, উইকেটরক্ষক ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান ও পেসার তানজিম সাকিবকে। আশ্চর্য হলেও সত্যি, উইকেটররক্ষক ব্যাটার মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে দলে থাকলেও খেলেননি। অথচ মাহিদুলকে দলভুক্ত করে নির্বাচকরা সিরিজের দুই ম্যাচে বাদ দিয়েছিলেন শামীমকে। এজন্য অধিনায়ক লিটন মিডিয়ার মুখোমুখিতে সরাসরি কাঠগড়ায় দাঁড় করান প্রধান নির্বাচককে। শেষ ম্যাচে শামীমকে খেলায়। অথচ মাহিদুলকে সাজঘরেই বসিয়ে রাখে। অবশ্য সান্ত্বনা হিসেবে সিরিজ জয়ের ট্রফিটি বহন করেন মাহিদুল।
বাংলাদেশের বোলাররা নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে আয়ারল্যান্ডকে ১৯.৫ ওভারে ১১৭ রানে অলআউট করে। আইরিশদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেন অধিনায়ক পল স্টার্লিং। টাইগারদের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নন মুস্তাফিজ ও রিশাদ। ৩ উইকেট নিয়ে মুস্তাফিজ পেছনে ফেলেন নিউজিল্যান্ডের লেগ স্পিনার আইএস সোধীকে। মুস্তাফিজের উইকেট ১২৬ ম্যাচে ১৫৮টি। সোধীর ১৩২ ম্যাচে ১৫৭ উইকেট। ১০৮ ম্যাচে ১৮২ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে আফগনিস্তানের বিশ্বসেরা লেগ স্পিনার রশিদ খান। আইরিশদের ১১৭ রানে অলআউট করার ইনিংসে পাঁচ ক্যাচ ধরে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন তানজিদ। টেস্ট খেলুড়ে দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টি-২০তে পাঁচ ক্যাচ নিয়েছেন। অবশ্য আইসিসি সহযোগী দেশের দুজন ফিল্ডারের এ কীর্তি রয়েছে। ২০২৩ সালে মালদ্বীপের ওয়েগাড়ে মালিন্দা পাঁচ ক্যাচ নেন কাতারের বিপক্ষে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সুইডেনের সেদিক সাহাক পাঁচ ক্যাচ নেন আইল অব ম্যানের বিপক্ষে। তানজিদ বিশ্ব রেকর্ড করেন আইরিশদের ইনিংসের শেষ ৫ ব্যাটারের ক্যাচ নিয়ে। ক্যাচগুলো নেন গ্যারেথ ডেলানি, মার্ক অ্যাডায়ার, ম্যাথু হামফ্রিজম জর্জ ডকরেল ও বেন হোয়াইটের। এক ম্যাচে চারটি ক্যাচ ধরার রেকর্ড রয়েছে ৪৫টি। বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের চার ক্যাচ ধরার রেকর্ড নেই। বাংলাদেশের ১১ ক্রিকেটার ৩টি করে ক্যাচ ধরেন। ক্যাচ নেন ইলিয়াস সানি, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুস্তাফিজুর রহমান, লিটন দাস, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, নাজমুল হোসেন শান্ত, সৌম্য সরকার, শেখ মেহেদি হাসান, নাহিদ রানা ও জাকের আলি।
তানজিদের বিশ্ব রেকর্ডের ম্যাচে জিততে বাংলাদেশের টার্গেট ১১৮ রান। তানজিদের সঙ্গে ওপেন করেন সাইফ হাসান। দুজনে ৪ ওভারে ৩৮ রান যোগ করে বিচ্ছিন্ন হন। সাইফ ১৯ রান করেন ১৪ বলে ২ চার ও এক ছক্কায়। লিটন আউট হন ব্যক্তিগত ৭ রানে। ৪৬ বলে ২ উইকেটের পতনের পর জুটি বাঁধেন তানজিদ ও পারভেজ হোসেন ইমন। দুজনে ৫০ বলে ৭৩ রান যোগ করেন তৃতীয় উইকেটে। পুল শটে উইনিং বাউন্ডারি মারেন পারভেজ ইমন। ২৬ বলে ৩৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন পারভেজ ১ চার ও ৩ ছক্কায়। ম্যাচসেরা তানজিদ ৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায়। ৪৫ টি-২০ ম্যাচে এটা তানজিদের ১১তম হাফ সেঞ্চুরি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আয়ারল্যান্ড
১৯.৫ ওভারে ১১৭ (স্টার্লিং ৩৮, টিম টেক্টর ১৭, ডকরেল ১৯, ডেল্যানি ১০, অ্যাডায়ার ৮, হামফ্রিজ ১, ইয়াং ২*, হোয়াইট ৫; শেখ মেহেদি ৪-০-২৪-১, শরিফুল ৩-০-২১-২, সাইফুদ্দিন ৩.৫-০-৩১-১, মুস্তাফিজ ৩-০-১১-৩, রিশাদ ৪-০-২১-৩, সাইফ হাসান ২-০-৮-০)।
বাংলাদেশ
১৩.৪ ওভারে ১১৯/২ (তানজিদ ৫৫*, সাইফ ১৯, লিটন ৭, পারভেজ ৩৩*; ইয়াং ২.৪-০-৩০-১, ডেল্যানি ২-০-২৫-০, টেক্টর ৩-০-১৭-১, হোয়াইট ৩-০-২১-১)।
ম্যাচসেরা
তানজিদ হাসান
সিরিজসেরা
শেখ মেহেদি