মোহামেডান চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে হারিয়ে এবার পেশাদার লিগে প্রথম জয় পেয়েছে। স্বাভাবিকভাবে সমর্থকরা উল্লসিত। এমন জয়ের পরও দলীয় খেলোয়াড়রা কতটা মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে মাঠে নেমেছিল তা অনেকেই জানেন। নতুন মৌসুমের দলবদলের পর এখন পর্যন্ত খেলোয়াড়রা চুক্তি মোতাবেক কোনো অর্থ বুঝে পাননি। স্থানীয় ও বিদেশি ফুটবলারদের একই অবস্থা। বারবার তাগাদা দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। টাকা দেওয়া হবে সেই আশ্বাসও দেওয়া হচ্ছে না। খেলোয়াড়রা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বকেয়া না পেলে তারা আবাহনীর বিপক্ষে খেলতে কুমিল্লায় যাবেন না। শেষ পর্যন্ত গোলরক্ষক প্রশিক্ষক ছাইদ হাছান কানন ও ফুটবল ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকিব অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে মাঠে নামিয়েছেন এবং জয়ও পেয়েছে। শুধু খেলোয়াড় নয়, কোচিং স্টাফরাও পারিশ্রমিকের সিকি ভাগও এখন পর্যন্ত পকেটে তুলতে পারেননি।
কানন, নকিব বা হেড কোচ আলফাজ আহমেদ মোহামেডানের সাবেক ফুটবলার ছিলেন। দলের প্রতি টান থাকায় খেলোয়াড়দের মাথায় হাত বুলিয়ে পরিস্থিতি ঠান্ডা রাখতে পেরেছেন। এতটা সংকটাপন্ন অবস্থা যে খাওয়ার মানও নাকি খুবই নিম্নমানের। কেউ কউ বাধ্য হয়ে হোটেল থেকে খাবার আনছেন। কানন ও নকিব নিজ থেকে অর্থ ব্যয় করে আপাতত দলকে মাঠে নামাতে পারছেন। কিন্তু এভাবে আর কত দিন? আবাহনীকে হারানোর পর অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিঠু বলেছেন, ‘দলের জন্য অবশ্যই আমরা প্রতিটি ম্যাচে উজার করে খেলব। কিন্তু সমস্যা ঝুলে থাকলে ধারাবাহিকতা কি ধরে রাখা যাবে?
খেলোয়াড়রা ভেবেছিলেন, আবাহনীকে হারানোর পর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা সংকট কাটাতে উদ্যোগ নেবেন। অথচ এ নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছেন না।
গতকাল এ নিয়ে কথা হয় ম্যানেজার নকিবের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক যেটার কথা বলি না কেন তা নাজুক অবস্থা। এ অবস্থায় ক্লাবগুলো সংকটে পড়বে তা স্বাভাবিক। কেননা এমন অবস্থায় কে দেবেন অনুদান। ক্লাবসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসবেন তাও উপায় নেই। কারণ দেশের প্রেক্ষাপটে ব্যবসার যে কী অবস্থা তা তো অজানা নয়। ক্লাবে যারা অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করতেন তারাও নীরব রয়েছেন।’ নকিব বলেন, ‘আমাদের কারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। কারণ উনারা সহযোগিতা করেছেন বলেই গতবার মোহামেডান লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তাদেরও তো খারাপ সময় যেতেই পারে। কিন্তু খেলোয়াড়রা অর্থই পাচ্ছেন না তা কী হয়। সবারই তো সংসার ও পরিবার রয়েছে, এ অবস্থায় চলবেন কীভাবে? আবাহনীকে হারানোর পর ভেবেছিলাম কেউ অন্তত আশ্বাস দেবেন এত সময়ের মধ্যে একটা পেমেন্ট পেয়ে যাবে। তাও এখন পর্যন্ত দেখছি না। খেলোয়াড়রা কিন্তু আলটিমেটাম দিয়ে রেখেছেন পেমেন্ট না পেলে পরবর্তী ম্যাচ খেলবেন না। আর বিদেশিরা কী যে করবেন তা ভাবতেই পারছি না। ওরা তো কথায় কথায় ফিফার কাছে নালিশ করে বসে।’
তাহলে কী মোহামেডানের খেলোয়াড়রা এখন পর্যন্ত পারিশ্রমিকের কোনো অংশই পাননি। নকিব বলেন, ‘দল বদলের পর খেলোয়াড়রা সাক্রিফাইস করে খেলছেন এতটুকুই বলতে পারি। সাধারণত মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচে যারা জিতে তা ঘিরে ক্লাবে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। এবার সেই দৃশ্য উধাও হয়ে গেছে। সবার চিন্তা একটাই কীভাবে চলবে দল। কমিটিও নেই। আমি নিজে মোহামেডানে খেলেছি এখন আবার ম্যানেজার হয়েছি। আমার দেখায় কখনো ক্লাব এতটা সংকটে পড়েনি।’ আরেক কর্মকর্তা আক্ষেপ করে বলছেন, ‘যেভাবে মোহামেডান চলছে তা পাড়ার দলের সঙ্গে তুলনা করলেও ভুল হবে না।’