ফুটবলে মোহামেডান ও আবাহনী প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল ১৯৭৩ সালে প্রথম বিভাগ লিগে। এ পর্যন্ত দুই দল যে কবার লড়েছে তার মধ্যে কখনো কাউকে হারিয়ে লিগে প্রথম জয় দেখেনি। এবারই তার ব্যতিক্রম ঘটল। পেশাদার ফুটবল লিগে ঢাকা মোহামেডান প্রথম জয় পেল মর্যাদার লড়াইয়ে চিরপ্রতিদ্বন্ধী ঢাকা আবাহানীকে হারিয়ে। আগের দুই ম্যাচে ফর্টিসের কাছে হার ও পুলিশের সঙ্গে ড্র করেছিল সাদা-কালোরা। অন্যদিকে আবাহনী তিন ম্যাচে টানা দুই ম্যাচ হেরে গেল। আগের ম্যাচে তারা ব্রাদার্স ইউনিয়নের কাছে হেরে যায়। আর লিগটা শুরু করে রহমতগঞ্জের সঙ্গে ড্র করে। লিগে মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন ও আবাহনী রানার্সআপ। হাইভোল্টেজ ম্যাচ ছিল উত্তেজনায় ভরপুর।
কুমিল্লা শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত স্টেডিয়াম উভয় দলের হোম ভেন্যু হলেও গতকাল মোহামেডান স্বাগতিক দল হিসেবে লড়েছিল। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ৩-২ গোলে জিতে মোহামেডান মূল্যবান তিন পয়েন্ট সংগ্রহ করে। লিগে মোহামেডান অনেক ম্যাচেই আবাহানীকে হারিয়েছে। কিন্তু গতকালের জয়টি অন্যরকম বলা যায়। কেননা, শক্তির বিচারে কিছুটা হলেও এগিয়ে ছিল আবাহনী। গতবার মোহামেডানের লিগ জয়ের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন মালির ফুটবলার সুলেমান দিয়াবাতে। তাকেই এবার আবাহনী ঘরে এনেছে। তাছাড়া মোরসালিন, কাজিম শাহ ও আল-আমিনকে টেনে তারা ব্যালেন্স দল গড়ে।
একে তো গতবারের শক্তি ধরে রাখতে পারেনি। তার পর বেতন বাকি থাকায় মোহামেডানের দেশি ও বিদেশি খেলোয়াড়রা গোঁ ধরেছিলেন তারা মাঠে যাবেন না। পারিশ্রমিকের মাত্র ২০ ভাগ অর্থ শোধ করেছে ক্লাব। বারবার চাওয়ার পরও বকেয়া টাকা মিলছে না। কোনো অবস্থাতেই আবাহনীর বিপক্ষে খেলবে না। শেষপর্যন্ত ছাইদ হাসান কানন ও ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকিব অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে কুমিল্লায় নিয়ে যান এবং ম্যাচেও নামান।
অর্থ বকেয়া থাকার পরও মাঠে খেলোয়াড়রা নিজেদের সেরাটা দেওয়ার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। তাই লিগে বড় ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছে চ্যাম্পিয়নরা। খেলোয়াড়রা দলের জন্য কতটা নিবেদিত ছিলেন যার প্রমাণ ম্যাচে মোহামেডানের ৩-০ গোলে এগিয়ে যাওয়া। এর মধ্যে প্রথমার্ধেই হয় দুই গোল। শুরু থেকেই আক্রমণ করে আবাহনীকে চাপে রাখে মোহামেডান। ২০ মিনিটেই গোল উৎসবে মেতে ওঠে সাদা-কালোরা। রহিমউদ্দিনের গোলে এগিয়ে যায় তারা। উৎসব কাটতে না কাটতেই ১২ মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করে মোহামেডান। উজবেক মোজাফফরের নিখুঁত কর্নারে উড়ে আসা বল জালে পাঠান ইমানুয়েল কেকে। ৫৮ মিনিটে জাহিদ হাসানের ক্রস থেকে ব্যবধান ৩-০ করেন স্যামুয়েল বোয়াটেং।
৩-০ গোল হওয়ার পর অনেকে ধরে নিয়েছিলেন মোহামেডানের জয় নিশ্চিত হয়ে গেছে। কিন্তু ছয় মিনিটের ব্যবধানে আবাহনী দুই গোল শোধ করে ম্যাচে উত্তেজনা ফিরিয়ে আনে। যেভাবে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ ভেঙে ফেলছিল তাতে মনে হচ্ছিল যে কোনো সময় আবাহনী তৃতীয় গোল পেয়ে যাবে। কিন্তু ৭২ মিনিটে পাপন সিং ও ৭৮ মিনিটে শেখ মোরসালিন গোল করেও আবাহনীর হার ঠেকাতে পারেননি। ভারতের বিপক্ষে মোরসালিনের গোলেই বাংলাদেশ ২২ বছর পর জয় পেয়েছিল। কিন্তু গতকাল আবাহনীর জার্সিতে তিনি সেই নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে পারেননি। তিন ম্যাচে মোহামেডান ৪ ও আবাহনীর পয়েন্ট ১।
এদিকে টপ ফেবারিট বসুন্ধরা কিংস লিগে টানা দ্বিতীয় জয় পেয়েছে। গতকাল তারা পেশাদার লিগে নতুনভাবে উঠে আসা আরামবাগ ক্রীড়া সংঘকে ২-০ গোলে হারিয়েছে। এবারের মৌসুমের প্রথম ট্রফি চ্যালেঞ্জ কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ঘরোয়া ফুটবলে যাত্রা করে। তাদের লক্ষ্য সব ট্রফি জয়। আপাতত শীর্ষে থেকে সেই পথেই হাঁটছে কিংস। মানিকগঞ্জ শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এ ম্যাচে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন কিংস পুরো পয়েন্ট পেলেও চাপেও ছিল বলা যায়। কেননা, ৭৫ মিনিট পর্যন্ত আরামবাগ ম্যাচটি ড্র রেখেছিল। শেষপর্যন্ত গোল আসে পেনাল্টি থেকে। ডরিয়েলটন দলকে এগিয়ে রাখেন। ৭ মিনিট পর তারই দ্বিতীয় গোলে স্বস্তির জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বসুন্ধরা কিংস। তিন ম্যাচে সাত পয়েন্ট নিয়ে এককভাবে শীর্ষে উঠেছে তারা। ১ পয়েন্ট নিয়ে আরামবাগ সবার নিচে। মুন্সিগঞ্জ বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ২-০ গোলে ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুলকে হারায়। ৮০ মিনিটে এসে দলের দুই নেপালি ফুটবলার গোল করেন। এ জয়ে ছয় পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলো ব্রাদার্স। কিংস অ্যারিনায় ফর্টিস ও পুলিশ গোলশূন্য ড্র করেছে।