কাঠমান্ডেতে বাংলাদেশ দূতাবাসে শুক্রবার 'বাংলাদেশ ফিশ ফেস্টিভাল ২০২৫' অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ অনুষ্ঠানে কাঠমান্ডুতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত/মিশনপ্রধান ও কূটনীতিক, নেপাল সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতা, থিংকট্যাংক এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, বিলাসবহুল হোটেলের ব্যবস্থাপক ও নির্বাহী কর্মকর্তা, গণমাধ্যমের সদস্যসহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন।
ফিশ ফেস্টিভালের গেস্ট অব অনার ছিলেন নেপালের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব কৃষ্ণ প্রসাদ ধাকাল। নেপালের সময় দুপুর ২টায় নেপাল ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে ফিস ফেস্টিভাল শুরু হয় এবং এরপর বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শফিকুর রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন।
গেস্ট অব অনার হিসেবে তার বক্তব্যে নেপালের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব এ উদ্যোগকে একটি প্রশংসনীয় ও উদ্ভাবনী আয়োজন হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের অনুষ্ঠান দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধনকে আরও শক্তিশালী করবে এবং অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও জনগণের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, নেপাল-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা এখন আরও গভীরতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
এসময় তিনি পিপলস টু পিপলস কনটাক্ট, বাণিজ্য ও ট্রানজিট, জ্বালানি ও বিনিয়োগে দুই দেশের সহযোগিতার বিষয়টি উল্লেখ করেন। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে মৎস্যসম্পদ, একোয়াকালচার এবং খাদ্য নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির সম্ভাবনাও তার বক্তব্যে উঠে আসে।
স্বাগত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ শফিকুর রহমান বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী মৎস্যখাতের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন এবং এ উৎসবকে বাংলাদেশের নদীমাতৃক ঐতিহ্যের প্রতিফলন বলে উল্লেখ করে বলেন, মাছ আমাদের সংস্কৃতি, জীবিকা, সামাজিক কাঠামো এবং জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক।
তিনি উল্লেখ করেন, অনন্য ভূপ্রকৃতি ও ভৌগোলিক গঠন, ও হাজারো নদী বাংলাদেশকে মিঠা পানি ও সামুদ্রিক মাছের বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ করেছে।
বাংলাদেশের খাবার/মাছের স্বাদ, সতেজতা এবং বৈচিত্র্যের জন্য আন্তর্জাতিক সুনামের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল মৎস্যখাত বর্তমানে মিঠাপানির (উন্মুক্ত জলাশয়) মাছ, একোয়াকালচার, সামুদ্রিক মাছ এবং চিংড়ি উৎপাদনে বিশেষ সাফল্য লাভ করেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, এ উৎসব কেবল সাংস্কৃতিক উদযাপন নয়, বরং আঞ্চলিক সহযোগিতা গভীরতর করা এবং ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণের সুযোগও বটে। তিনি হিমালয় অঞ্চলে বাংলাদেশি মৎস্যসম্পদের এই প্রদর্শনী আয়োজন করতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং 'মাছে ভাতে বাঙালি' ও নেপালি ডাল-ভাতকে একত্রে উপস্থাপন করে 'মাছ-ডাল-ভাত' স্লোগান দ্বারা নেপাল-বাংলাদেশ বন্ধুত্বকে চিত্রায়িত করেন। তিনি আরও বলেন যে, এই উৎসব বাংলাদেশ ও নেপালের উজ্জ্বল ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির মিল ও সৌহার্দ্যের এক যৌথ স্বীকৃতি।
আজকের মৎস্য উৎসবে বাংলাদেশের নানা জাতের মাছের অনন্য উপস্থাপন ছিল বিশেষ আকর্ষণ। নেপালের ক্রমবর্ধমান সামুদ্রিক খাদ্যের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মিঠা পানির ও সামুদ্রিক মাছের বাজার সম্ভাবনার অন্বেষণও ছিল এ আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য। এ উৎসব নেপালি আমদানিকারক ও হসপিটালিটি খাত এবং বাংলাদেশের মৎস্য রপ্তানিকারকদের মধ্যে ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রেও অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারে।
অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক রন্ধনশৈলীর প্রয়োগে প্রস্তুত বাংলাদেশের মিঠাপানি ও সামুদ্রিক সুস্বাদু খাবারের বাছাই করা পদ, আগত অতিথিদের জন্য পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশি শেফদের প্রস্তুতকৃত 'স্মোকড ইলিশ (কাঁটা ছাড়া)' এবং 'সরষে ইলিশ'। অতিথিরা আরও উপভোগ করেন মজাদার রুই ও কাতলা কারি, গ্রিলড লবস্টার এবং গ্রিলড রেড স্ন্যাপার। লাইভ কাউন্টারগুলোর মধ্যে ফ্রাইড সিলভার পমফ্রেট (রুপচাঁদা) এবং শ্রিম্প (চিংড়ি) টেম্পুরা বিশেষ আকর্ষণ তৈরি করে। পরিবেশনায় আরও ছিল আইড় মাছ এবং বোয়াল মাছের কারি। সম্পূর্ণ গ্রিলড কোরাল এবং গলদা চিংড়ির কারিও পরিবেশনার বৈচিত্র্য বাড়িয়ে তোলে, যা বাংলাদেশের সমৃদ্ধ মৎস্য ঐতিহ্য ও রন্ধনশৈলীকে প্রতিফলিত করে।
এই আয়োজনের সূচনা হিসেবে দূতাবাস গত ২৪ নভেম্বর নেপালে ব্যবসায়ীদের সৌজন্যে বিভিন্ন মিঠাপানি ও সামুদ্রিক মাছের প্রদর্শনীও আয়োজন করে। এতে নেপালের হসপিটালিটি খাতের শীর্ষ স্থানীয় বেশ কয়েকজন মাছ আমদানিকারক এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
ফিস ফেস্টিভাল উপলক্ষে দূতাবাস চত্বরে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের রঙিন পোস্টার প্রদর্শিত হয়, যা বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে ফুটিয়ে তোলে। প্রদর্শনীতে জুলাই-আগস্ট মাসের বীরোচিত গণ-অভ্যুত্থানের পোস্টারও স্থান পায়, যা উদার গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায়বিচারের আলোকে বাংলাদেশ ২.০-এর অগ্রযাত্রাকে তুলে ধরে।
এই প্রথমবারের মতো কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাস এ ধরনের আয়োজন করলো, যা বাংলাদেশের নানাবিধ মৎস্যসম্পদকে বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের সামনে উপস্থাপন করেছে। উৎসবে ১৫০ জনেরও বেশি অতিথি অংশগ্রহণ করেন এবং এটি নেপালের অনলাইন, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ