পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, অধ্যাদেশের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার অনেক বড় বড় সংস্কার করছে, যেগুলোর পুরো ইমপ্লিকেশন সবাই এখনো বুঝে উঠতে পারছে না। অনেক দিন ধরেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সংস্কার কমিটি ছিল, সেসব প্রস্তাব আমরা এগিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আমার নিজের ধারণা, আমরা হয়তো অনেক বেশি, কিছুটা উচ্চাভিলাষী সংস্কার করে ফেলেছি। যেগুলো নির্বাচিত সরকারের পক্ষে হজম করা বা সহ্য করা কঠিন হতে পারে।
সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে বিফ্রিংয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, পুরোটাই না হলেও অন্তত বেশিরভাগ বা এর নির্যাসটা, যেসব মৌলিক বিষয়, সেগুলো নতুন সরকার গ্রহণ করবে। কারণ নির্বাচিত সংসদই জনগণের চাহিদা সবচেয়ে ভালো বোঝে।
প্রকল্প বাদ দেওয়া বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, অনেক প্রকল্পে ত্রুটি থাকে, আবার অনেক সময় পত্রিকার রিপোর্টও পুরোপুরি ঠিক হয় না। আমরা সংবেদনশীল বলে আবার যাচাই করি।
স্বাস্থ্যের প্রকল্পে কম্পিউটারের দাম বেশি দেখানো হয়েছে। এ অভিযোগের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, আপনারা শুধু কম্পিউটার দামের হিসাব দেখেছেন, কিন্তু অটোমেশন খরচ ধরেননি। সব মিলিয়ে কস্টিংটা ভিন্ন।
বিবিএস সংস্কার নিয়ে তিনি আরও বলেন, নীতিমালা সহজ, সেটা ওয়েবসাইটে দিয়েছি। বিবিএস স্বাধীনভাবে সব প্রকাশ করতে পারবে। অধ্যাদেশ করতে সমস্যা নেই, কিন্তু সমস্যা হলো আমরা এতগুলো অধ্যাদেশ করে যাচ্ছি যে পরবর্তী সংসদে এগুলো সব আবার পর্যালোচনা হবে। যেটা তাদের ভালো লাগবে রাখবে, যেটা লাগবে না, বাতিল করবে।
সরকারি ক্রয় নীতিমালা (পিপিআর) প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার এটা। এখন এটা বইয়ের মতো বাজারে আছে, ডিজিটালাইজড সহজে বদলানো যাবে না। আশা করি এটি আইন হিসেবে টিকে যাবে।
বিচার বিভাগের সাম্প্রতিক সংস্কার নিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করার যেই অধ্যাদেশ হয়েছে, তা নতুন সরকার আবার দেখবে। কারণ এতে ম্যাজিস্ট্রেটরা কাকে বেইল দেবে বা অ্যারেস্ট করবে এসব আর আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে নেই। কিছু ক্ষেত্রে অস্বস্তি তৈরি হতে পারে।
তফসিল ঘোষণার পর একনেক সভা হওয়া নিয়ে তিনি বলেন, নতুন প্রকল্প হোক বা চলমান প্রকল্প সব চলবে। আমি তো প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ই অর্থ ও পরিকল্পনার দায়িত্বে ছিলাম, ১৯৯৬ সালে। তখনো প্রশ্ন উঠেছিল নতুন প্রকল্প নেওয়া যাবে কিনা। কিন্তু আমরা তখনো একনেক করেছি, উন্নয়ন প্রকল্প তো চলবেই। শুধু খেয়াল রাখতে হয় কোনো কনস্টিটিউয়েন্সি-ভিত্তিক সুবিধা দেওয়ার প্রকল্প যেন না আসে।
তিনি জানান, সাধারণ সময়ে রাজনৈতিক চাপ বেশি থাকে, কে কোন এলাকায় প্রকল্প চাইছে। কিন্তু এবার তা হয়নি। তবে নির্বাচন যত কাছাকাছি আসছে, অনুরোধ বাড়ছে।
তিনি স্পষ্ট বলেন, এই কনস্টিটিউয়েন্সি বেইজড প্রকল্পগুলো আমরা দেব না।
উপদেষ্টা বলেন, এখন সংবাদমাধ্যমের ফোকাসও বদলে যাবে, এখন থেকে খবর হবে রাজনৈতিক দলগুলো কি বলছে। প্রধান উপদেষ্টা কি বললেন এগুলোর আর গুরুত্ব নেই। তিনি বলেন সংবাদ পরিবেশনে প্রতিটি দল কত মিনিট পেল, তা হিসাব রাখাও জরুরি, যেন পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ না ওঠে।
বিডি প্রতিদিন/কেএ