রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে হেরোইন আত্মসাতের ঘটনায় রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার পাঁচ বছর পার হলেও মামলার চার্জশিট হয়নি। মূল আসামি হিসেবে পুলিশের পাঁচ সদস্যের নাম আসায় চলছে সময়ক্ষেপণ। এই অবস্থায় ভুক্তভোগীর পরিবার ন্যায়বিচার নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক উদয় কুমার মণ্ডল বলেন, ‘মামলাটি তদন্তাধীন। এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। আমি ছয় মাস হলো দায়িত্ব পেয়েছি।’ পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম জানান, মামলাটির তদন্তকাজ শেষ। শিগগিরই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমাদনের জন্য পাঠানো হবে। এ মাসের মধ্যে আদালতে চার্জশিট দাখিলের সম্ভাবনা আছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২১ মার্চ রাতে স্থানীয় ব্যবসায়ী ইসাহাক আলী ইসাকে নিয়ে পুলিশের একটি বিশেষ দল গোদাগাড়ী সীমান্তবর্তী এলাকায় হেরোইন জব্দের অভিযানে যায়। সেখানে অভিযান পরিচালনাকালে পুলিশ এবং মাদক কারবারি জামাল ও রফিকুলের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ রফিকুলকে বেধড়ক মারধর করে। এতে রফিক ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরদিন ২২ মার্চ পদ্মার চর থেকে রফিকুলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এটিকে ‘বজ্রপাতজনিত মৃত্যু’ অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে দেখা যায় মৃত্যুর কারণ বজ্রপাত নয়, রফিকুলের শরীরে ছিল মারধরের চিহ্ন। একই বছরের ১৭ জুন রফিকুলের স্ত্রী রুমিসা খাতুন থানায় হত্যা মামলা করেন। এরপর মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় পিবিআইকে।
দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর পিবিআই জানতে পারে, আলাতুলি ইউনিয়ন এলাকার শান্তিপাড়া গ্রামের আশরাফের ছেলে শরীফ মুর্শিদাবাদ জেলার কাশেমের কাছ থেকে হেরোইন কেনেন। সীমান্ত থেকে সংগ্রহ করে পৌঁছে দেন আসামি জামাল ও ভিকটিম রফিকের কাছে। এরপর জামাল ও রফিকের মাদকগুলো ইসাহাক আলী ইসার কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা। পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশ করে মাদকগুলো আত্মসাতের পরিকল্পনা করেন জামাল ও রফিক। তবে গোদাগাড়ীর উজানপাড়া ঘাটসংলগ্ন এলাকায় জামাল ও রফিককে ধরে ফেলে পুলিশ। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। পরে পুলিশ রফিককে বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা করে।
তদন্তের সময় ২০২০ সালের ৩০ অক্টোবর ইসাহাক আলী ইসাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে আদালতে ইসা বলেন, ‘অভিযানে অংশ নেওয়া পাঁচ পুলিশ সদস্য রফিকুলকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা এবং হেরোইন আত্মসাৎ করেন। তারা হলেন গোদাগাড়ী থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান, আবদুল মান্নান ও রেজাউল ইসলাম, কনস্টেবল শাহাদাত হোসেন ও শফিকুল ইসলাম।’
তবে স্বীকারোক্তি, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং প্রাথমিক প্রমাণ থাকার পরও পাঁচ বছরেও চার্জশিট দেওয়া হয়নি। রফিকুলের স্ত্রী রুমিসা খাতুন অভিযোগ করেন, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের রক্ষায় তদন্তের নামে সময় নষ্ট করা হচ্ছে। রফিকুলের বাবা ফজলুর রহমান বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে শুধু ঘুরছি, তদন্ত কর্মকর্তা বদল হলে সুর পাল্টায়। অন্যদিকে অভিযুক্তরা বদলি হয়ে শান্তিতে চাকরি করছে।’