জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থান ঘিরে কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফসহ চারজনের বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়েছে। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ গতকাল ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে এই প্রথম কোনো সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে ক্যামেরা ট্রায়াল পদ্ধতিতে। সাক্ষীর সুরক্ষার স্বার্থে এই পদ্ধতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে বলে প্রসিকিউশন জানিয়েছে।
এদিকে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন সিআইডির ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের এসআই শাহেদ জোবায়ের লরেন্স। প্রসিকিউশনের চার নম্বর সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনাল-২ এ জবানবন্দি দেন তিনি। পরে তাকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এ মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৫ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়। গণ অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
গতকাল শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ মামলায় মোট ১৭ জন গ্রেপ্তার আছেন। তাদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানকে অসুস্থতার কারণে হাজির করা সম্ভব হয়নি। এ মামলায় মোট আসামি ৪৫ জন। এর মধ্যে ১৭ জন গ্রেপ্তার। ২৮ আসামি পলাতক।
শুনানিতে যে ১৬ জন হাজির হয়েছেন তারা হচ্ছেন- সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, মো. আবদুর রাজ্জাক, দীপু মনি, গোলাম দস্তগীর গাজী, শাজাহান খান, কামরুল ইসলাম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান মোহাম্মদ সেলিম, সাবেক সচিব মো. জাহাংগীর আলম এবং অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
এই মামলার ৪৫ আসামির মধ্যে ইতোমধ্যে চার আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করা হয়েছে। তারা হলেন- সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
ফলে এ মামলা থেকে এই চার আসামির অব্যাহতি চেয়ে মৌখিক আবেদন করে প্রসিকিউশন। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল লিখিত আবেদন করতে বলেছেন।
শুনানি শেষে আজ দুপুরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আনিসুল, সালমান, ইনু ও পলকের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। সে কারণে মিসকেস (বিবিধ মামলা) থেকে এই চার আসামি মুক্ত হবেন। তবে তাদের বিরুদ্ধে যে ট্রায়াল (আনুষ্ঠানিক অভিযোগের পর যেসব মামলা চলছে) চলমান আছে, সেখানে তারা বিচারের মুখোমুখি হবেন। বাকি আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান আছে।
এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে দেখতে হুইল চেয়ারে করে ট্রাইব্যুনালে আসেন তার স্বামী তাওফিক নেওয়াজ। ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শেষে দুজনের মধ্যে কথাও হয়েছে আদালতের অনুমতি নিয়ে।