ফরিদপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের কর্মচারীর (ওটি বয়) বিরুদ্ধে অস্ত্রোপচারের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী নারী ফরিদপুর শহরতলির খাসকান্দি গ্রামের প্রবাসী সরোয়ার আলমের স্ত্রী ববিতা বেগম (২৮)। তার সাত বছর ও এক বছর বয়সি দুই ছেলে রয়েছে। ভুক্তভোগী ও স্বজনরা জানান, ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকায় অবস্থিত সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতালের ওটি বয় শেখ নিয়ামুল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ববিতার স্তন ক্যানসারের বায়োপসির জন্য অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিস্যু সংগ্রহ করেন। এরপর ১৫ দিনের মধ্যে অস্ত্রোপচারস্থলে মাত্রাতিরিক্ত সংক্রামকের কারণে একটি স্তন কেটে ফেলতে হয়েছে। চিকিৎসার নথিপত্র ও ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৮ নভেম্বর পূর্বপরিচিত ওই ওটি বয়ের শরণাপন্ন হয়ে সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আতিকুর আহসানের কাছে যান ভুক্তভোগী নারী। একপর্যায়ে চিকিৎসক তাকে ফরিদপুর মেডিকেলের মাধ্যমে বায়োপসি পরীক্ষার নির্দেশ দেন। তিনি চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হলে নিয়ামুল তাকে ফরিদপুর মেডিকেলে না যাওয়ার জন্য বোঝান ও অল্প খরচে নিজেই করে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন। একপর্যায়ে ওটি রুমে নিয়ে তিনি একাই অপারেশন করেন।
ভুক্তভোগী জানান, অস্ত্রোপচার শেষে চারটি সেলাই দেন এবং নিয়ামুল নিজেই প্রেসক্রিপশন লিখে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। প্রায় ১৫ দিন পর বায়োপসি পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পান। এরই মধ্যে অস্ত্রোপচারস্থলে মাত্রাতিরিক্ত সংক্রমণ দেখা দেয়। এরপর ২ ডিসেম্বর পুনরায় চিকিৎসক আতিকুর আহসানের শরণাপন্ন হয়ে ঘটনা খুলে বলেন। এরপর ওই চিকিৎসক সংক্রমণের ভয়াবহ মাত্রা তুলে ধরে ৪ ডিসেম্বর ফরিদপুর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন ও একই দিন সংক্রামক স্তনটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে ফেলা হয়।
ফরিদপুর মেডিকেলের সার্জারি বিভাগের ইউনিট প্রধান আতিকুর আহসান জানান, এ ধরনের টিস্যু সংগ্রহের জন্য চিকিৎসক দ্বারা একটি ফাঁপা সুচ ব্যবহার করে স্তনের পিণ্ড বা অস্বাভাবিক জায়গা থেকে কোষ বা টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। প্রয়োজন অনুসারে অস্ত্রোপচার করা হয়ে থাকে। কিন্তু এসব তোয়াক্কা না করে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিস্যু সংগ্রহ করে ওই ওটিবয়। এ ধরনের অস্ত্রোপচার করার অধিকার তার নেই।
এদিকে বায়োপসি পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে নিয়ামুলের আরেক প্রতারণা দেখা যায়। পরীক্ষাটি করানো হয় ঢাকা ধানমন্ডির এনএন ল্যাব নামক একটি ল্যাব থেকে। কিন্তু রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, নমুনা ফরিদপুর মেডিকেল থেকে পাঠানো হয়েছে।
পরে রোগীর স্বজন ও স্থানীয়রা নিয়ামুলকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি দোষ স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন।
সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানের সবার অজান্তে নিয়ামুল এই কাজটি করেছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মাহামুদুল হাসান বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।